Dhaka ১০:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে তীব্র আকার ধারণ করেছে নদী ভাঙন ধসে গেছে তীররক্ষা বাঁধের ৬শ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ॥ ১ সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন ৩০ টি ঘরÑবাড়ি

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ১৫২৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের তীব্রতায় রাজবাড়ীর গোদার বাজার থেকে সোনাকান্দর পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের ছয়শ ১০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গেছে। গত এক সপ্তাহে অন্ততঃ ৩০টি পরিবারের ভিটেমাটি, গাছপালা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আশঙ্কায় রয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, স্কুল, হাটবাজার সহ বহু স্থাপনা। নদী তীরবর্তী মানুষের চোখেমুখে এখন শুধুই আতঙ্ক আর আর্তনাদ। শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষা করা নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম সংশয়। ভাঙনের শিকার মানুষেরা বলছেন, ড্রেজার দিয়ে অপরিকিল্পিতভাবে বালু কাটার ফলেই এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। এর মধ্যেই নদী ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রাজবাড়ী শহর সংলগ্ন গোদারবাজার ঘাট থেকে স্লুইসগেট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকা নদী ভাঙন প্রতিরোধে ৪৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০০৯ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১২ সালের জুন মাসে। এরপর গত কয়েক বছরে আশেপাশে এলাকায় ভাঙন দেখা দিলেও এই এলাকাটি সুরক্ষিত ছিল। তবে চলতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই গত ৯ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত দফায় ছয়শ ১০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীতে ধসে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে ১৮ হাজার ছয়শ ১৯ বস্তা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ হাজার বস্তা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তীর ধসে বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর শহর রক্ষা বাঁধ নদীর খুব কাছে চলে এসেছে। নদীর পানি প্রতিদিনই এক সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। আর এক সেন্টিমিটার বাড়লেই বিপদসীমা অতিক্রম করে যাবে পানির স্তর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ীর গোদারবাজার থেকে সোনাকান্দর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়োজিত শ্রমিকরা বালুর বস্তা ফেলছে। নদী তীরবর্তী মানুষ সরিয়ে নিচ্ছে ঘরÑবাড়ি। কেটে ফেলছে গাছপালা। ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে অনেকেই বুক চাপড়ে করছে হাহাকার। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বেরিবাঁধে অথবা পরের জমিতে। নদী সংলগ্ন চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
গোদারবাজার এলাকার বাসিন্দা পেশায় জেলে সন্টু মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার রাত একটার দিকে তিনি তার ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ তার পায়ে পানি এসে লাগে। তাকিয়ে দেখেন নদীর পানি। তখনই বড় একটি চাপ ভেঙে পড়লো। তার বাঁশঝাড় খাড়া হয়ে নদীতে ডুবে গেল। তার তাকিয়ে দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিলনা। চিৎকার করে সবাইকে ডেকে তুলে ঘরে থাকা মালপত্র সরিয়ে নেন। তার সবকিছু নদীতে নিয়ে গেছে। এখন তিনি পাগল বেশে ঘুরছেন।
একই এলাকার গৃহবধূ শারমীন জানান, নদী ভাঙন আতঙ্কে তারা মালপত্র সরাতে শুরু করেছেন। তাদের যাবার কোনো জায়গা নেই। সরকার যেন দ্রুত নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়। তানহলে পরিবার পরিজন নিয়ে মহাদুর্ভোগে পড়তে হবে।
গেদন ব্যাপারী তার গাছপালা কেটে ফেলছেন। জানালেন, কিছু করার নেই। নদী যেভাবে ভাঙছে তাতে আর ভরসার জায়গা নেই। তাই গাছপালা কেটে ফেলছেন।
এলাকার বাসিন্দা আহাদ আলী সরদার, গৃহবধূ হাসিনা বেগম সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু কাটার ফলেই নদীর তলদেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। এজন্যই নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
মিজানপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি মেম্বার মো. বাবলু মন্ডল জানান, ড্রেজারে বালু কাটার ফলেই এই নদী ভাঙন। ভাঙনে ইতিমধ্যে অনেক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে যেভাবে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে তাতে ভাঙন ঠেকানো যাবেনা। তিনি অসহায় পরিবারের সাহায্য সহযোগিতা এবং ভাঙন রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দাবি জানান।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপÑসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, নদী তীর রক্ষা বাঁধের আড়াই কিলোমিটার অংশের সাতটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়ায় আমরা প্রত্যেকটি স্পটে কাজ শুরু করি। ভাঙনের লেন্থ ছিল চারশ ৮৩ মিটার। যে স্পটে ভেঙেছে সেখানেই কাজ করছি। আশা করছি আমরা ভাঙন রোধ করতে পারবো। আমরা খুবই তৎপর আছি। পানি কমে যাওয়ার পর নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। তবে ভাঙন প্রতিরোধে আমরা সচেষ্ট আছি।
নদী তীর ঘেঁষে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করার কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে ধারণা তার।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীতে তীব্র আকার ধারণ করেছে নদী ভাঙন ধসে গেছে তীররক্ষা বাঁধের ৬শ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ॥ ১ সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন ৩০ টি ঘরÑবাড়ি

প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের তীব্রতায় রাজবাড়ীর গোদার বাজার থেকে সোনাকান্দর পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের ছয়শ ১০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গেছে। গত এক সপ্তাহে অন্ততঃ ৩০টি পরিবারের ভিটেমাটি, গাছপালা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আশঙ্কায় রয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, স্কুল, হাটবাজার সহ বহু স্থাপনা। নদী তীরবর্তী মানুষের চোখেমুখে এখন শুধুই আতঙ্ক আর আর্তনাদ। শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষা করা নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম সংশয়। ভাঙনের শিকার মানুষেরা বলছেন, ড্রেজার দিয়ে অপরিকিল্পিতভাবে বালু কাটার ফলেই এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। এর মধ্যেই নদী ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রাজবাড়ী শহর সংলগ্ন গোদারবাজার ঘাট থেকে স্লুইসগেট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকা নদী ভাঙন প্রতিরোধে ৪৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০০৯ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১২ সালের জুন মাসে। এরপর গত কয়েক বছরে আশেপাশে এলাকায় ভাঙন দেখা দিলেও এই এলাকাটি সুরক্ষিত ছিল। তবে চলতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই গত ৯ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত দফায় ছয়শ ১০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীতে ধসে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে ১৮ হাজার ছয়শ ১৯ বস্তা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ হাজার বস্তা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তীর ধসে বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর শহর রক্ষা বাঁধ নদীর খুব কাছে চলে এসেছে। নদীর পানি প্রতিদিনই এক সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। আর এক সেন্টিমিটার বাড়লেই বিপদসীমা অতিক্রম করে যাবে পানির স্তর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ীর গোদারবাজার থেকে সোনাকান্দর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়োজিত শ্রমিকরা বালুর বস্তা ফেলছে। নদী তীরবর্তী মানুষ সরিয়ে নিচ্ছে ঘরÑবাড়ি। কেটে ফেলছে গাছপালা। ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে অনেকেই বুক চাপড়ে করছে হাহাকার। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বেরিবাঁধে অথবা পরের জমিতে। নদী সংলগ্ন চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
গোদারবাজার এলাকার বাসিন্দা পেশায় জেলে সন্টু মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার রাত একটার দিকে তিনি তার ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ তার পায়ে পানি এসে লাগে। তাকিয়ে দেখেন নদীর পানি। তখনই বড় একটি চাপ ভেঙে পড়লো। তার বাঁশঝাড় খাড়া হয়ে নদীতে ডুবে গেল। তার তাকিয়ে দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিলনা। চিৎকার করে সবাইকে ডেকে তুলে ঘরে থাকা মালপত্র সরিয়ে নেন। তার সবকিছু নদীতে নিয়ে গেছে। এখন তিনি পাগল বেশে ঘুরছেন।
একই এলাকার গৃহবধূ শারমীন জানান, নদী ভাঙন আতঙ্কে তারা মালপত্র সরাতে শুরু করেছেন। তাদের যাবার কোনো জায়গা নেই। সরকার যেন দ্রুত নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়। তানহলে পরিবার পরিজন নিয়ে মহাদুর্ভোগে পড়তে হবে।
গেদন ব্যাপারী তার গাছপালা কেটে ফেলছেন। জানালেন, কিছু করার নেই। নদী যেভাবে ভাঙছে তাতে আর ভরসার জায়গা নেই। তাই গাছপালা কেটে ফেলছেন।
এলাকার বাসিন্দা আহাদ আলী সরদার, গৃহবধূ হাসিনা বেগম সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু কাটার ফলেই নদীর তলদেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। এজন্যই নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
মিজানপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি মেম্বার মো. বাবলু মন্ডল জানান, ড্রেজারে বালু কাটার ফলেই এই নদী ভাঙন। ভাঙনে ইতিমধ্যে অনেক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে যেভাবে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে তাতে ভাঙন ঠেকানো যাবেনা। তিনি অসহায় পরিবারের সাহায্য সহযোগিতা এবং ভাঙন রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দাবি জানান।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপÑসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, নদী তীর রক্ষা বাঁধের আড়াই কিলোমিটার অংশের সাতটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়ায় আমরা প্রত্যেকটি স্পটে কাজ শুরু করি। ভাঙনের লেন্থ ছিল চারশ ৮৩ মিটার। যে স্পটে ভেঙেছে সেখানেই কাজ করছি। আশা করছি আমরা ভাঙন রোধ করতে পারবো। আমরা খুবই তৎপর আছি। পানি কমে যাওয়ার পর নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। তবে ভাঙন প্রতিরোধে আমরা সচেষ্ট আছি।
নদী তীর ঘেঁষে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করার কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে ধারণা তার।