Dhaka ১২:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ:

পদ্মা নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ব্লক ধসে নদীগর্ভে বিদ্যালয় পাঠদান অনিশ্চিত॥ আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 190

জনতার আদালত অনলাইন ॥ এবার পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের ব্লক ধসে বিদ্যালয় ভবন চলে গেছে নদীগর্ভে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে বিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের পাঠদান যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তেমনি নদী তীরবর্তী মানুষ ভাঙন আতঙ্কে  দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমি মোহম্মদ সায়েফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটির অর্ধাংশ নদীতে চলে গেছে। বিদ্যালয় ভবনটি কোনোমতে ঝুলে আছে। গ্রামের শত শত মানুষ উৎসুক অথচ আতঙ্ক দৃষ্টিতে দেখছে এ দৃশ্য। ভাঙনে প্রায় একশ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, চরাঞ্চলে এটিই ছিল একমাত্র বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০৮ জন। করোনাকাল পেরিয়ে যথাসময়ে শুরু হয়েছিল পাঠদান। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। হঠাৎ করেই নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের অর্ধেক নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙনের কারণে পাঠদান  কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

চরসিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ ফকির জানান, বিদ্যালয়ই নদীতে চলে গেছে।   এখন তাদের বসতবাড়ি জমি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।

বৃদ্ধা রাশিদা বেগম জানান, দুই দুইবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এ এলাকায় এসেছিলেন। ছোট্ট একটা ঘর ছাড়া আর কিছু নাই। নদীতে ঘর নিয়ে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? তার সবকিছু এবার শেষ হয়ে যাবে।

চর সিলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রনি জানায়, তার বাড়ি এই স্কুলের পাশেই। সে এই স্কুলে পড়তো। এখন সে কোথায় পড়বে। তার বাড়িও আছে ভাঙন ঝুঁকিতে।

চর সিলিমপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকির জানান, বৃহস্পতিবারও আমরা ক্লাস নিয়েছি। তখন ভাঙনের কোনো লক্ষণ দেখিনি। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এলাকার একজন ফোন করে তাকে  জানায়  বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে দেখেন অর্ধেকটা নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকীটা ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে। তখনই তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড,  জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন। বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ভবন আছে। সেটি অন্যত্র স্থানান্তর করার চিন্তা ভাবনা চলছে।

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমীন করিমী বলেন, বিষয়টি জেনেছি। বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘর আছে। আপাততঃ সেখানে ক্লাস নেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। উপরে লিখে দিলে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। তখন একটা অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হবে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমি মোহম্মদ সায়েফ জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এখানে একজন জমি দিতে চেয়েছেন। আপাততঃ টিনশেড ঘরটি সেখানে স্থানান্তর করা হবে। আর একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে । প্রস্তাবটি পাশ হলে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, ওখানে যতটুকু ডাম্পিং দরকার ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ডাম্পিং করা হয়েছে। অনেক বেশি বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। নদীর মধ্যে কিছু জায়গায় টিউব ব্যবহার করা হয়েছে সেসব জায়গায় ভাঙন রোধ করা যায়নি। সেটা ডিজাইনেও নাই। আগামীকাল (শনিবার) থেকে সেখানে টিউব ফেলা হবে। আনলোডার আসলেই কাজ শুরু হবে। আপাততঃ ভাঙন এলাকায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আসছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুলটি শিফট করাই বুদ্ধিমানের কাজ ছিল। ভাঙনের যে গতি প্রকৃতি তাতে ডিজাইনের ভলিউম অনেক বেশি বাড়াতে হবে।

প্রসঙ্গত নদী ভাঙন রক্ষায় ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ না হতেই চলতি বছরে পদ্মা নদীতে ১২ দফা ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তারা এখনও কাজ বুঝে নেয়নি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

পদ্মা নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ব্লক ধসে নদীগর্ভে বিদ্যালয় পাঠদান অনিশ্চিত॥ আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ

প্রকাশের সময় : ১০:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

জনতার আদালত অনলাইন ॥ এবার পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের ব্লক ধসে বিদ্যালয় ভবন চলে গেছে নদীগর্ভে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে বিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের পাঠদান যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তেমনি নদী তীরবর্তী মানুষ ভাঙন আতঙ্কে  দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমি মোহম্মদ সায়েফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটির অর্ধাংশ নদীতে চলে গেছে। বিদ্যালয় ভবনটি কোনোমতে ঝুলে আছে। গ্রামের শত শত মানুষ উৎসুক অথচ আতঙ্ক দৃষ্টিতে দেখছে এ দৃশ্য। ভাঙনে প্রায় একশ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, চরাঞ্চলে এটিই ছিল একমাত্র বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০৮ জন। করোনাকাল পেরিয়ে যথাসময়ে শুরু হয়েছিল পাঠদান। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। হঠাৎ করেই নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের অর্ধেক নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙনের কারণে পাঠদান  কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

চরসিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ ফকির জানান, বিদ্যালয়ই নদীতে চলে গেছে।   এখন তাদের বসতবাড়ি জমি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।

বৃদ্ধা রাশিদা বেগম জানান, দুই দুইবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এ এলাকায় এসেছিলেন। ছোট্ট একটা ঘর ছাড়া আর কিছু নাই। নদীতে ঘর নিয়ে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? তার সবকিছু এবার শেষ হয়ে যাবে।

চর সিলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রনি জানায়, তার বাড়ি এই স্কুলের পাশেই। সে এই স্কুলে পড়তো। এখন সে কোথায় পড়বে। তার বাড়িও আছে ভাঙন ঝুঁকিতে।

চর সিলিমপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকির জানান, বৃহস্পতিবারও আমরা ক্লাস নিয়েছি। তখন ভাঙনের কোনো লক্ষণ দেখিনি। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এলাকার একজন ফোন করে তাকে  জানায়  বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে দেখেন অর্ধেকটা নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকীটা ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে। তখনই তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড,  জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন। বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ভবন আছে। সেটি অন্যত্র স্থানান্তর করার চিন্তা ভাবনা চলছে।

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমীন করিমী বলেন, বিষয়টি জেনেছি। বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘর আছে। আপাততঃ সেখানে ক্লাস নেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। উপরে লিখে দিলে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। তখন একটা অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হবে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমি মোহম্মদ সায়েফ জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এখানে একজন জমি দিতে চেয়েছেন। আপাততঃ টিনশেড ঘরটি সেখানে স্থানান্তর করা হবে। আর একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে । প্রস্তাবটি পাশ হলে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, ওখানে যতটুকু ডাম্পিং দরকার ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ডাম্পিং করা হয়েছে। অনেক বেশি বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। নদীর মধ্যে কিছু জায়গায় টিউব ব্যবহার করা হয়েছে সেসব জায়গায় ভাঙন রোধ করা যায়নি। সেটা ডিজাইনেও নাই। আগামীকাল (শনিবার) থেকে সেখানে টিউব ফেলা হবে। আনলোডার আসলেই কাজ শুরু হবে। আপাততঃ ভাঙন এলাকায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আসছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুলটি শিফট করাই বুদ্ধিমানের কাজ ছিল। ভাঙনের যে গতি প্রকৃতি তাতে ডিজাইনের ভলিউম অনেক বেশি বাড়াতে হবে।

প্রসঙ্গত নদী ভাঙন রক্ষায় ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ না হতেই চলতি বছরে পদ্মা নদীতে ১২ দফা ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তারা এখনও কাজ বুঝে নেয়নি।