অমর কথাসাহিত্য বিষাদসিন্ধু রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৩ তম জন্মদিন. বালিয়াকান্দির পদমদীতে পর্যটন কেন্দ্র করার দাবি পূরণ হবে কবে?
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৮:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০২০
- / ১৪৫৬ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কালজয়ী উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৩ তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৩ নভেম্বর। দিবসটি উপলক্ষে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও করোনার কারণে এবার আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। তবে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ অনলাইন ভিত্তিক আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
পদমদীর স্মৃতিকেন্দ্রটিকে পর্যটন কেন্দ্র করার দাবি বহুদিনের হলেও তা আজও পূরণ হয়নি। একারণে হতাশ এলাকাবাসী। পদমদীতেই মীর মশাররফ হোসেনের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মীরের স্ত্রী বিবি কুলসুম, ভাই মীর মোকাররম হোসেন ও ভাইয়ের স্ত্রী বিবি খোদেজা বেগম।
মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা লাহিনীপাড়া গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। পরে সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। মীর মশাররফ হোসেন গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্ম বিষয়ক ৩৭টি বই রচনা করেছেন। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি কিছু দিন তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। তার স্মৃতিকে জাগ্রত করতে ২০০০ সালের দিকে পদমদীতে একটি স্মৃতি কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল তারিখে স্মৃতি কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। স্মৃতিকেন্দ্রে মীরের একটি আবক্ষ মূর্র্তি, সংগ্রহশালা, সভাকক্ষ, গ্রন্থাগার, পাঠাগার, অভ্যর্থনা কক্ষ, ভিআইপি রুম রয়েছে। গ্রন্থগারে মীর মশাররফ হোসেনের লেখা উপন্যাস বিষাদ সিন্ধুর ইংরেজী ও বাংলায় লেখা বই সংরক্ষিত আছে। এছাড়া তার রচনা সমগ্রের মধ্যে রতœাবতী, গৌরি সেতু, বসন্ত কুমারী, জমিদার দর্পণ, সঙ্গীত লহরী, উদাসীন পথিকের মনের কথা, মদিনার গৌরব, বিষাদ সিন্ধু, গো-জীবন, বেহুলা গীতাভিনয়, গাজী মিয়ার বোস্তানী, মৌলুদ শরীফ, মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা, বিবি খোদেজার বিবাহ, হজরত ওমরের ধর্মজীবন লাভ, হজরত বেলালের জীবনী, হজরত আমীর হামজার ধর্মজীবন লাভ, মোসলেম বীরত্ব, এসলামের জয়, আমার জীবনী, বাজিমাত, হজরত ইউসোফ, খোতবা বা ঈদুল ফিতর, বিবি কুলসুম, ভাই ভাই এইতো চাই, ফাস কাগজ, একি, টালা অভিনয়, পঞ্চনারী, প্রেম পারিজাত, বাঁধাখাতা, নিয়তি কি অবনতি, তহমিনা, গাজী মিয়ার গুলি ও বৃহৎ হীরক খনি ইত্যাদি বই রয়েছে গ্রন্থাগারে। তবে স্মৃতি কেন্দ্রের সংগ্রহশালায় নেই তেমন কিছুই। কয়েকটি আঁকা ছবি আর ফেস্টুন রাখা হয়েছে সেখানে
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বাংলা একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফয়সাল আমিন বলেন, দিবসটি উপলক্ষে বাংলা একাডেমী, উপজেলা প্রশাসন, মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদ, মীর মশাররফ হোসেন কলেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠন মীরের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিলের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে এ স্মৃতি কেন্দ্রে দেশের মধ্যে প্রথম বই বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি খুব শীগগিরই বই বিক্রয় কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে।
বালিয়াকান্দি মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সনজিৎ দাস বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই স্মৃতিকেন্দ্রটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার জোর দাবি জানিয়ে আসছি। এ দাবি আবারও জানাচ্ছি। যেন একটি পর্যটন কেন্দ্র করার লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, করোনার কারণে এবার সীমিত পরিসরে মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী পালিত হবে। তার কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে। অনলাইন ভিত্তিক আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সাথে আমিও একমত। এ দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। বালিয়াকান্দিতে যোগ দিয়েই বিষয়টি আমি অনুভব করেছি। উপজেলা প্রশাসনের আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।