কুড়িগ্রামে তিন ফসলি জমি করতে সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষক

- প্রকাশের সময় : ০৮:২১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 77
কুড়িগ্রামে সয়াবিনের ঘাটতি এবং আমদানী নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে ঝুঁকছে জেলার কৃষকরা। সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় পেয়ে দুই ফসলী জমি থেকে তিন ফসলী জমি উন্নতি করে অর্থনৈতিক লাভবান হচ্ছে জেলার প্রান্তিক চাষীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার রাজারহাট উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার আবাদী কৃষি জমি রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ জমি এক ও দুফসলী। শুধুমাত্র আমন ও বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল ছিল এই অঞ্চলের কৃষক। অপেক্ষাকৃত নিচু জমি হওয়ায় প্রতিবছর বন্যায় কিংবা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জমিগুলো কয়েক মাস পানিবন্দি হয়ে পতিত থাকে। পানি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত এখানে চাষাবাদ হতো না। ফলে কৃষকদের আমন ও বোরো চাষাবাদের মাঝামাঝি সময় জমিগুলো অনাবাদি থাকতো। এসব দুফসলী জমিকে তিন ফসলী জমিতে রুপান্তরিত করতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এতে করে কৃষকরা পতিত জমি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক লাভবান হবার পাশাপাশি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে কৃষকের জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরিষার বাম্পার ফলনে একদিকে রান্নার তেলের সংকট কমার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতি বিস্তার ঘটছে।
রাজারহাট সদর উপজেলার ছত্রজিৎ গ্রামের কৃষক কাজল চন্দ্র রায় জানান, আমি ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আমার এই জমিতে বছরে দুবার ফসল করতাম। কিন্তু এবার আরডিআরএস বাংলাদেশ হতে সার,বীজ,কীটনাশক পেয়েছি। বিঘা প্রতি হালচাষ, সেচ, ঔষধ, কাটামাড়াসহ সরিষা চাষে ৫/৬হাজার টাকা খরচ করে হয়েছে। বিঘা প্রতি ৭/৮মণ সরিষা পাবার আশা তার। বর্তমান বাজার দরে সরিষা ৩থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ হিসেবে ১৮হতে ২০হাজার টাকা লাভ করবেন কৃষক।
একই এলাকার কৃষাণী শোভারাণী জানান, সয়াবিন তেলের সংকটে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে। গরিব কৃষকরা নিজেদের আবাদী সরিষা তেল,শাক খাবার পাশাপাশি সরিষার গাছ শুকিয়ে জ্বালানী খড়ি হিসেবে ব্যবহার করে সাংসারিক খরচ কমিয়ে আনছেন তারা। এতে করে সংসারে বাড়তি খরচ কমে সাশ্রয় হচ্ছে।
বৈদ্যের বাজার গ্রামের কৃষক তারানাথ রায় বলেন, আমাদের উপজেলায় সরিষা বারি-৭,বারি-৯,বারি-১৪ চাষ হয়েছে বেশি। এরমধ্যে বারি-১৪ জাতের সরিষা কম সময়ে ফলন আসে এবং ফলনও বেশ ভালো হয়। এই সরিষা মাড়াই করে সময় মতো ধান লাগাতে পারবো।
কৃষিবিদ আব্দুস সাত্তার জানান, বেসরকারি সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় আরডিআরএস বাংলাদেশের বাস্তবায়নে সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় রাজারহাট উপজেলায় ১০০ একর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তেল জাতীয় ফসল চাষ সম্প্রসারণ,প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। দুফসলি জমি থেকে তিন ফসলি জমি রুপান্তরিত হওয়ায় জমির উর্বরতা বাড়ছে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে বলে জানান এই কৃষিবিদ।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, তেল আমদানীর নির্ভরতা কমাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আর বিঘা প্রতি গড়ে ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫ মণ করে।