Dhaka ০৪:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ:
একাত্তরের চেতনা ভুলিয়ে দিতে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : মির্জা ফখরুল তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান একনেকে ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন তিনবার পেছানোর পর শুরু হলো আবু সাঈদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গুলি করে হত্যা, যা দেখা গেল সিসিটিভিতে সাবেক জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম খান বরখাস্ত এবার মৎস্য উপদেষ্টার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে দুই ককটেল বিস্ফোরণ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ মুন্সীগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব, প্রতিপক্ষের গুলিতে একজন নিহত নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো বিক্ষোভের চেষ্টা করলে আইনের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ হবে

দুই হাত নেই ॥ পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৪.৬৩ পাওয়া হাবিবের পাশে কৃষকলীগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী হক

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০
  • / 1128

 

জনতার আদালত অনলাইন ॥ জন্ম থেকেই হাবিবুর রহমানের দুটি হাত নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বেড়ে ওঠা তার। তবুও মনের শক্তির জোড়ে চালিয়ে গেছে পড়াশোনা। একদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অন্যদিকে দরিদ্রতা। বাবা চোখে কম দেখায় পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে কৃষিকাজেও সহযোগিতা করেছে সে। এসব বাধা পেরিয়ে এবারের দাখিল পরীক্ষায় পাশ করেছে জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে। হাবিবুর রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হেমায়েতখালী গ্রামের আব্দুস সামাদ মিয়া ও হেলেনা খাতুনের ছেলে। পাংশা উপজেলার পুঁইজোর ফাযিল মাদ্রসার ছাত্র সে। তার পাশে দাঁড়িয়েছেন দৈনিক জনতার আদালতের সম্পাদক কৃষকলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক।

হাবিবুর রহমানের বাবা সামাদ মিয়া একজন হতদরিদ্র কৃষক। তার দৃষ্টিশক্তি কম। তা সত্ত্বেও তার তিন মেয়ে এবং এক ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় দুই মেয়ে পাংশা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

হাবিবের চাচা আব্দুল খালেক জানান, ছোটবেলায় সবাই যখন পড়াশোনা করতো তখন হাবিবও পড়তে চাইতো। কিন্তু লিখবে কীভাবে? পা দিয়ে লেখার চর্চা করানো হয় হাবিবুরকে। এক সময় সফলতাও আসে। সাধারণ মানুষ যেমন হাত দিয়ে লেখে হাবিবুরও স্বাভাবিকভাবেই লিখতে পারে পা দিয়ে। তার লেখাও সুন্দর। অদম্য মনোবল আর ইচ্ছা শক্তির জোড়ে মা-বাবা, বোন আর চাচাদের অনুপ্রেরণায় হাবিবুর চালিয়ে যায় পড়াশোনা। প্রাথমিক সমাপনী ও জেডিসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে হাবিবুর। হাবিবুর অন্যদের মত স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারে পা দিয়ে। তবে খাওয়া দাওয়া গোসল তার মাকেই করিয়ে দিতে হয়। বাড়ি থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব এক কিলোমিটার পথ। প্রতিদিন হেঁটে যাতায়াত করতো হাবিবুর। তার বড় ভাই (হাবিবের বাবা) চোখে কম দেখেন। পরের জমি চাষ করে কোনোমতে সংসার চালান। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার করান। তাকেও কৃষিকাজে সহযোগিতা করে হাবিব।

হাবিবের মা হেলেনা খাতুন জানান, জন্ম থেকে ছেলেটার দুই হাত নেই। এটা যে কোনো বাবা-মায়ের জন্যই কষ্টের। আমরা ছেলেটাকে খুব ভালোবাসি। ওর পড়াশোনার আগ্রহ দেখে উৎসাহ দিয়ে গেছি সব সময়। যখন সময় পেয়েছে তখনই পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকেছে। পা দিয়ে লিখে যতটুকু ফলাফল অর্জন করেছে তাতেই আমরা খুশী। কিন্তু আমরা গরীব। আমাদের ইচ্ছা ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করবো। কেউ একটু আর্থিক সহযোগিতা দিলে আমার ছেলে হাবিব আর আমাদের ইচ্ছা পূরণ হতো।

হাবিবুর রহমান জানায়, আরও একটু ভালো ফলাফলের আশা করেছিলাম। জিপিএ ৫ পেলে ভালো লাগতো। ছোটবেলা থেকে বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। তাদের উৎসাহেই আমি লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই।

পুঁইজোর ফাযিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক হেদায়েতুর রহমান বলেন, আমরা সব সময় হাবিবকে সহযোগিতা করেছি। আর্থিক কোনো সংকট থাকলেও সেটা দূর করেছি। ভালো ও মেধাবী ছাত্র হাবিব। সে চাইলে এ মাদ্রাসাতেই আলিমে ভর্তি হতে পারে। এজন্য তাকে যে কোনো সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে মেধাবী হাবিবুর রহমানের সাফল্যের কথা জেনে তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন দৈনিক জনতার আদালত পত্রিকার সম্পাদক,  কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সমাজসেবক  নুরে আলম সিদ্দিকী হক। আলিম পর্যন্ত হাবিবের পড়াশোর নব দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে নুরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, মেধাবী ও অসহায় শিক্ষার্থী‌দের পা‌শে দাঁড়াতে তি‌নি সব সময় থাকার চেষ্টা ক‌রেন। হা‌বিবের দুই হাত না থাকার পরেও পা দি‌য়ে লি‌খে ভাল রেজাল্ট ক‌রে‌ছে। অাগামী দুই বছর অা‌লিম পড়াশুনার জন্য ওর যেন কোন সমস্যা না হয়, সে জন্য যাবতীয় লেখা পড়ার খরচ তি‌নি দে‌বেন।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

দুই হাত নেই ॥ পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৪.৬৩ পাওয়া হাবিবের পাশে কৃষকলীগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী হক

প্রকাশের সময় : ০৮:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০

 

জনতার আদালত অনলাইন ॥ জন্ম থেকেই হাবিবুর রহমানের দুটি হাত নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বেড়ে ওঠা তার। তবুও মনের শক্তির জোড়ে চালিয়ে গেছে পড়াশোনা। একদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অন্যদিকে দরিদ্রতা। বাবা চোখে কম দেখায় পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে কৃষিকাজেও সহযোগিতা করেছে সে। এসব বাধা পেরিয়ে এবারের দাখিল পরীক্ষায় পাশ করেছে জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে। হাবিবুর রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হেমায়েতখালী গ্রামের আব্দুস সামাদ মিয়া ও হেলেনা খাতুনের ছেলে। পাংশা উপজেলার পুঁইজোর ফাযিল মাদ্রসার ছাত্র সে। তার পাশে দাঁড়িয়েছেন দৈনিক জনতার আদালতের সম্পাদক কৃষকলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক।

হাবিবুর রহমানের বাবা সামাদ মিয়া একজন হতদরিদ্র কৃষক। তার দৃষ্টিশক্তি কম। তা সত্ত্বেও তার তিন মেয়ে এবং এক ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় দুই মেয়ে পাংশা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

হাবিবের চাচা আব্দুল খালেক জানান, ছোটবেলায় সবাই যখন পড়াশোনা করতো তখন হাবিবও পড়তে চাইতো। কিন্তু লিখবে কীভাবে? পা দিয়ে লেখার চর্চা করানো হয় হাবিবুরকে। এক সময় সফলতাও আসে। সাধারণ মানুষ যেমন হাত দিয়ে লেখে হাবিবুরও স্বাভাবিকভাবেই লিখতে পারে পা দিয়ে। তার লেখাও সুন্দর। অদম্য মনোবল আর ইচ্ছা শক্তির জোড়ে মা-বাবা, বোন আর চাচাদের অনুপ্রেরণায় হাবিবুর চালিয়ে যায় পড়াশোনা। প্রাথমিক সমাপনী ও জেডিসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে হাবিবুর। হাবিবুর অন্যদের মত স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারে পা দিয়ে। তবে খাওয়া দাওয়া গোসল তার মাকেই করিয়ে দিতে হয়। বাড়ি থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব এক কিলোমিটার পথ। প্রতিদিন হেঁটে যাতায়াত করতো হাবিবুর। তার বড় ভাই (হাবিবের বাবা) চোখে কম দেখেন। পরের জমি চাষ করে কোনোমতে সংসার চালান। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার করান। তাকেও কৃষিকাজে সহযোগিতা করে হাবিব।

হাবিবের মা হেলেনা খাতুন জানান, জন্ম থেকে ছেলেটার দুই হাত নেই। এটা যে কোনো বাবা-মায়ের জন্যই কষ্টের। আমরা ছেলেটাকে খুব ভালোবাসি। ওর পড়াশোনার আগ্রহ দেখে উৎসাহ দিয়ে গেছি সব সময়। যখন সময় পেয়েছে তখনই পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকেছে। পা দিয়ে লিখে যতটুকু ফলাফল অর্জন করেছে তাতেই আমরা খুশী। কিন্তু আমরা গরীব। আমাদের ইচ্ছা ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করবো। কেউ একটু আর্থিক সহযোগিতা দিলে আমার ছেলে হাবিব আর আমাদের ইচ্ছা পূরণ হতো।

হাবিবুর রহমান জানায়, আরও একটু ভালো ফলাফলের আশা করেছিলাম। জিপিএ ৫ পেলে ভালো লাগতো। ছোটবেলা থেকে বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। তাদের উৎসাহেই আমি লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই।

পুঁইজোর ফাযিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক হেদায়েতুর রহমান বলেন, আমরা সব সময় হাবিবকে সহযোগিতা করেছি। আর্থিক কোনো সংকট থাকলেও সেটা দূর করেছি। ভালো ও মেধাবী ছাত্র হাবিব। সে চাইলে এ মাদ্রাসাতেই আলিমে ভর্তি হতে পারে। এজন্য তাকে যে কোনো সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে মেধাবী হাবিবুর রহমানের সাফল্যের কথা জেনে তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন দৈনিক জনতার আদালত পত্রিকার সম্পাদক,  কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সমাজসেবক  নুরে আলম সিদ্দিকী হক। আলিম পর্যন্ত হাবিবের পড়াশোর নব দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে নুরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, মেধাবী ও অসহায় শিক্ষার্থী‌দের পা‌শে দাঁড়াতে তি‌নি সব সময় থাকার চেষ্টা ক‌রেন। হা‌বিবের দুই হাত না থাকার পরেও পা দি‌য়ে লি‌খে ভাল রেজাল্ট ক‌রে‌ছে। অাগামী দুই বছর অা‌লিম পড়াশুনার জন্য ওর যেন কোন সমস্যা না হয়, সে জন্য যাবতীয় লেখা পড়ার খরচ তি‌নি দে‌বেন।