Dhaka ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্বজনদের আহাজারি

রাশিয়ার হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আরমান, পাঠানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধে

কালুখালী ও বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 192

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মীর মশাররফ হোসেন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন আরমান মন্ডল। সংসারের কথা ভেবে যেতে চান রুমানিয়া। এরপর দালালের খপ্পড়ে পড়েন তিনি। রুমানিয়ায় ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ঘোরানোর পর সৌদি আরব হয়ে পাঠায় রাশিয়ায়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ইউক্রেন যুদ্ধে। যুদ্ধে আহত হয়ে রাশিয়ার একটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আরমান। দেশে বাবা-মা রয়েছেন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। তার বাবা বলছেন, টাকা পয়সা চাইনা, যে কোনো মূল্যে আমার মুনিরে ফেরত চাই। আরমান রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মঝবাড়ি ইউনিয়নের কুষ্টিয়াডাঙ্গি গ্রামের আকরাম মন্ডলের ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আকরাম মন্ডলের একমাত্র ছেলে আরমান। তাদের আরও দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। যারা স্কুলে পড়ে। কৃষিকাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন আকরাম মন্ডল। আদরের ছেলের ইচ্ছে ছিল ইউরাপের কোনো দেশে গিয়ে কাজ করার। সেজন্যই দালাল মঞ্জুর মাধ্যমে চেষ্টা করতে থাকেন। এজন্য মঞ্জু কয়েক দফায় সাড়ে ৯লাখ টাকা নেয়। মঞ্জু তাদের দুসম্পর্কের আত্মীয় বলেই তার উপর ভরসা করেছিলেন। মঞ্জু ঢাকার একটি কোম্পানীতে চাকরি করে। তার বাড়ি বালিয়াকান্দি উপজেলার হোগলাডাঙ্গি গ্রামে।

শনিবার হোয়াটস অ্যপে আরমান মন্ডলের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। রাশিয়ার একটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। কথা বললেন অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে। আরমান মন্ডল জানান, তিনি বালিয়াকান্দি মীর মশাররফ হোসেন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সংসারে তার বাবা-মা ও দুটি ছোট বোন আছে। পরিবারের কথা ভেবে বিদেশে গিয়ে উপার্জনের সিদ্ধান্ত নেন। তার ইচ্ছে ছিল রুমানিয়া বা ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার। প্রায় দুই বছর আগে দালাল মঞ্জুর মাধ্যমে আবুল হাসান নামে এক ব্যক্তির কথা হয় তার। ওই ব্যক্তি তাকে রুমানিয়া নিয়ে যাওয়ার আশ^াস দিয়ে তাকে দুই বছর ঘোরায়। পরে সবকিছু মঞ্জুর মাধ্যমেই হতো। মঞ্জু একদিন তাকে জানায়, রুমানিয়া নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাশিয়ায় নেওয়া যাবে। রাশিয়ায় যুদ্ধ হচ্ছে একারণে ওখানে যেতে অপারগতার কথা জানান তিনি। মঞ্জু তাকে বলেন, রাশিয়ার ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে মালি, ক্লিনার, বাবুর্চিসহ অনেক কাজ আছে। সেসব কাজ করতে হবে। এক পর্যায়ে তিনি রাজী হন। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে তাকে নেওয়া হয় সৌদি আরব। সেখানে দুই মাস তাকে একটি হোটেলে রেখেছিলেন। সেখান থেকে ফোনে কথা হতো দালাল মঞ্জুর সাথে। দুই মাস পর সেখান থেকে রাশিয়ার টুরিস্ট ভিসা করে দেওয়া হয়। তিনি যেতে না চাইলে দালাল জানায়, অসুবিধা নেই। তোমরা যাও। যাওয়ার পরে ওয়ার্ক পারমিট পাবে। রাশিয়া যাওয়ার পর একটি হোটেলে রাখে। পরে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ে যেতে বলা হয়। কীসের ট্রেনিং জানতে চাইলে জানানো হয়, সামরিক আত্মরক্ষার জন্য ট্রেনিং নিতে হবে। ১৫ দিনের ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর দালাল আর কিছু বলে না। এরপর একদিন তাদের গাড়িতে করে নেওয়া হয় ইউক্রেন। গাড়িতে নেওয়ার পর তাদের দেওয়া হয় বাইক। বাইক চালানোর সময় সেখানে মাইন বিস্ফোরণে তিনি আহত হন। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরমান বলেন, আমার সামনে অনেকগুলো ল্যান্ড মাইন ছিল। হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণ হয়। তার সামনে যারা ছিল তাদের প্রায় সবাই মারা যায়। আমি বাইক থেকে পড়ে যাই। সেখানে উপর থেকে বোমা ফেলে। সেই বোমার আঘাতে তিনি সংজ্ঞা হারান। তার পা রক্তাক্ত হয়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি ওই অবস্থায় বাইক চালিয়ে চলে আসেন। রাশিয়ার আর্মিরা তাকে দেখে উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি চলাফেরা করতে পারছেন না। তিনি আশঙ্কা করছেন, সুস্থ হওয়ার পর তাকে আবারও যুদ্ধে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান। তার যে ক্ষতি হলো তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, রাশিয়া যেতে দালাল তার কাছ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা নিয়েছিল।

এদিকে আরমানের পরিবারে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তার বাবা-মা। আরমানের বাবা বলেন, ছেলেকে রুমানিয়া পাঠাতে চেয়েছিলাম। মঞ্জু তাদের দুসম্পর্কের আত্মীয়। সে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে দুই বছর ঘুরিয়েছে। পরে রাশিয়াতে ক্লিনার মালির কাজের কথা বলেন। তিনি প্রথমে রাজী না হলেও পরে পাঠাতে চান। তাদের টাকা পয়সা লেনদেন চুক্তি সবকিছু মঞ্জুর মাধ্যমে হয়েছিল। সে বলে, ওখানে ওয়ার্ক পারমিট দেয়না। এজন্য ওমরাহ হজে¦র জন্য প্রথমে সৌদি আরব নেয়। সেখানে দুই মাস রেখে রাশিয়ায় পাঠায়। রাশিয়ায় নিয়ে দালাল চক্র ক্যান্টন মেন্টে তার ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে ১০ জনকে বিক্রি করেছে বলে জেনেছেন। বলেন, আমার ছেলের সাথে ফোনে কাজের কথা জানতে চাইলে জানায়, সেনা কাম্পে ট্রেনিং দেওয়াচ্ছে। ট্রেনিংয়ের পরে আমার ছেলেকে ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে যায়। না যেতে চাইলে তাকে মারধর করা হয়। যুদ্ধে ছেলের দুই পা ঝলসে গেছে। হাত, নাকসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। যেদিন আমার ছেলে ফোন করে বলল, আব্বু আমাদের ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে সেদিন হাউমাউ করে কেঁদিছিলাম। সম্ভবত ২০ জানুয়ারি তারিখে আরমানকে যুদ্ধে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। পরে মঞ্জুর সাথে যোগাযোগ করলে মঞ্জু বলে, আমার ভুল হয়ে গেছে। এমনটা হওয়ার কথা ছিলনা। যেভাবেই হোক ওকে দেশে ফিরিয়ে আনব। আজ না কাল করে আমাকে হয়রানী করছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার টাকা পয়সার দরকার নেই। আমার ছেলেকে দয়া করে ফেরত এনে দেন। যে কোনো মূল্যে আমার ছেলেকে ফেরত এনে দেন। যদি কারও হাতে পায়ে ধরতে হয় তাও ধরব। তবুও আমার মুনিডারে ফিরিয়ে এনে দেন। বিদেশে পাঠাতে মঞ্জুকে সাড়ে ৮লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

তিরি আরও জানান, ছেলেটাকে বিদেশ পাঠাতে সুদে টাকা নিয়ে ঋণ করে, বাছুর বিক্রি করে, জমি কট দিয়ে টাকার জোগাড় করেছিলাম। এখন আমি সহায় সম্বলহীন। তারপরও ছেলেটাকে যে কোনোভাবে ফেরত চাই। আমার একটা ছেলে মারা গেছে। এই ছেলেটাকে অনেক আদর যতেœ মানুষ করেছি।

হাতে তসবিহ নিয়ে বুকের কাছে ছেলের ছবি ধরে আহাজারি করতে থাকা আরমানের মা ফাহিমা বেগম আমার ছেলেকে ফেরত চাই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মাঝবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কাজী শরিফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। আরমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এবিষয়ে পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেবব্রত সরকার বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনাটি জেনে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। পরিবারটি যদি আইনী কোনো সহযোগিতা চায় তা দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সাথেও তার কথা হয়েছে। তিনিও এব্যাপারে বেশ আন্তরিক।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ভুক্তভোগী সম্পর্কে পুরো তথ্য ও তার বৈধ কাগজপত্র পেলে বিষয়টি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাতে পারেন। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

এ বিষয়ে দালাল মঞ্জুর সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

স্বজনদের আহাজারি

রাশিয়ার হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আরমান, পাঠানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধে

প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মীর মশাররফ হোসেন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন আরমান মন্ডল। সংসারের কথা ভেবে যেতে চান রুমানিয়া। এরপর দালালের খপ্পড়ে পড়েন তিনি। রুমানিয়ায় ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ঘোরানোর পর সৌদি আরব হয়ে পাঠায় রাশিয়ায়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ইউক্রেন যুদ্ধে। যুদ্ধে আহত হয়ে রাশিয়ার একটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আরমান। দেশে বাবা-মা রয়েছেন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। তার বাবা বলছেন, টাকা পয়সা চাইনা, যে কোনো মূল্যে আমার মুনিরে ফেরত চাই। আরমান রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মঝবাড়ি ইউনিয়নের কুষ্টিয়াডাঙ্গি গ্রামের আকরাম মন্ডলের ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আকরাম মন্ডলের একমাত্র ছেলে আরমান। তাদের আরও দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। যারা স্কুলে পড়ে। কৃষিকাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন আকরাম মন্ডল। আদরের ছেলের ইচ্ছে ছিল ইউরাপের কোনো দেশে গিয়ে কাজ করার। সেজন্যই দালাল মঞ্জুর মাধ্যমে চেষ্টা করতে থাকেন। এজন্য মঞ্জু কয়েক দফায় সাড়ে ৯লাখ টাকা নেয়। মঞ্জু তাদের দুসম্পর্কের আত্মীয় বলেই তার উপর ভরসা করেছিলেন। মঞ্জু ঢাকার একটি কোম্পানীতে চাকরি করে। তার বাড়ি বালিয়াকান্দি উপজেলার হোগলাডাঙ্গি গ্রামে।

শনিবার হোয়াটস অ্যপে আরমান মন্ডলের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। রাশিয়ার একটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। কথা বললেন অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে। আরমান মন্ডল জানান, তিনি বালিয়াকান্দি মীর মশাররফ হোসেন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সংসারে তার বাবা-মা ও দুটি ছোট বোন আছে। পরিবারের কথা ভেবে বিদেশে গিয়ে উপার্জনের সিদ্ধান্ত নেন। তার ইচ্ছে ছিল রুমানিয়া বা ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার। প্রায় দুই বছর আগে দালাল মঞ্জুর মাধ্যমে আবুল হাসান নামে এক ব্যক্তির কথা হয় তার। ওই ব্যক্তি তাকে রুমানিয়া নিয়ে যাওয়ার আশ^াস দিয়ে তাকে দুই বছর ঘোরায়। পরে সবকিছু মঞ্জুর মাধ্যমেই হতো। মঞ্জু একদিন তাকে জানায়, রুমানিয়া নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাশিয়ায় নেওয়া যাবে। রাশিয়ায় যুদ্ধ হচ্ছে একারণে ওখানে যেতে অপারগতার কথা জানান তিনি। মঞ্জু তাকে বলেন, রাশিয়ার ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে মালি, ক্লিনার, বাবুর্চিসহ অনেক কাজ আছে। সেসব কাজ করতে হবে। এক পর্যায়ে তিনি রাজী হন। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে তাকে নেওয়া হয় সৌদি আরব। সেখানে দুই মাস তাকে একটি হোটেলে রেখেছিলেন। সেখান থেকে ফোনে কথা হতো দালাল মঞ্জুর সাথে। দুই মাস পর সেখান থেকে রাশিয়ার টুরিস্ট ভিসা করে দেওয়া হয়। তিনি যেতে না চাইলে দালাল জানায়, অসুবিধা নেই। তোমরা যাও। যাওয়ার পরে ওয়ার্ক পারমিট পাবে। রাশিয়া যাওয়ার পর একটি হোটেলে রাখে। পরে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ে যেতে বলা হয়। কীসের ট্রেনিং জানতে চাইলে জানানো হয়, সামরিক আত্মরক্ষার জন্য ট্রেনিং নিতে হবে। ১৫ দিনের ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর দালাল আর কিছু বলে না। এরপর একদিন তাদের গাড়িতে করে নেওয়া হয় ইউক্রেন। গাড়িতে নেওয়ার পর তাদের দেওয়া হয় বাইক। বাইক চালানোর সময় সেখানে মাইন বিস্ফোরণে তিনি আহত হন। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরমান বলেন, আমার সামনে অনেকগুলো ল্যান্ড মাইন ছিল। হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণ হয়। তার সামনে যারা ছিল তাদের প্রায় সবাই মারা যায়। আমি বাইক থেকে পড়ে যাই। সেখানে উপর থেকে বোমা ফেলে। সেই বোমার আঘাতে তিনি সংজ্ঞা হারান। তার পা রক্তাক্ত হয়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি ওই অবস্থায় বাইক চালিয়ে চলে আসেন। রাশিয়ার আর্মিরা তাকে দেখে উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি চলাফেরা করতে পারছেন না। তিনি আশঙ্কা করছেন, সুস্থ হওয়ার পর তাকে আবারও যুদ্ধে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান। তার যে ক্ষতি হলো তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, রাশিয়া যেতে দালাল তার কাছ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা নিয়েছিল।

এদিকে আরমানের পরিবারে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তার বাবা-মা। আরমানের বাবা বলেন, ছেলেকে রুমানিয়া পাঠাতে চেয়েছিলাম। মঞ্জু তাদের দুসম্পর্কের আত্মীয়। সে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে দুই বছর ঘুরিয়েছে। পরে রাশিয়াতে ক্লিনার মালির কাজের কথা বলেন। তিনি প্রথমে রাজী না হলেও পরে পাঠাতে চান। তাদের টাকা পয়সা লেনদেন চুক্তি সবকিছু মঞ্জুর মাধ্যমে হয়েছিল। সে বলে, ওখানে ওয়ার্ক পারমিট দেয়না। এজন্য ওমরাহ হজে¦র জন্য প্রথমে সৌদি আরব নেয়। সেখানে দুই মাস রেখে রাশিয়ায় পাঠায়। রাশিয়ায় নিয়ে দালাল চক্র ক্যান্টন মেন্টে তার ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে ১০ জনকে বিক্রি করেছে বলে জেনেছেন। বলেন, আমার ছেলের সাথে ফোনে কাজের কথা জানতে চাইলে জানায়, সেনা কাম্পে ট্রেনিং দেওয়াচ্ছে। ট্রেনিংয়ের পরে আমার ছেলেকে ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে যায়। না যেতে চাইলে তাকে মারধর করা হয়। যুদ্ধে ছেলের দুই পা ঝলসে গেছে। হাত, নাকসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। যেদিন আমার ছেলে ফোন করে বলল, আব্বু আমাদের ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে সেদিন হাউমাউ করে কেঁদিছিলাম। সম্ভবত ২০ জানুয়ারি তারিখে আরমানকে যুদ্ধে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। পরে মঞ্জুর সাথে যোগাযোগ করলে মঞ্জু বলে, আমার ভুল হয়ে গেছে। এমনটা হওয়ার কথা ছিলনা। যেভাবেই হোক ওকে দেশে ফিরিয়ে আনব। আজ না কাল করে আমাকে হয়রানী করছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার টাকা পয়সার দরকার নেই। আমার ছেলেকে দয়া করে ফেরত এনে দেন। যে কোনো মূল্যে আমার ছেলেকে ফেরত এনে দেন। যদি কারও হাতে পায়ে ধরতে হয় তাও ধরব। তবুও আমার মুনিডারে ফিরিয়ে এনে দেন। বিদেশে পাঠাতে মঞ্জুকে সাড়ে ৮লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

তিরি আরও জানান, ছেলেটাকে বিদেশ পাঠাতে সুদে টাকা নিয়ে ঋণ করে, বাছুর বিক্রি করে, জমি কট দিয়ে টাকার জোগাড় করেছিলাম। এখন আমি সহায় সম্বলহীন। তারপরও ছেলেটাকে যে কোনোভাবে ফেরত চাই। আমার একটা ছেলে মারা গেছে। এই ছেলেটাকে অনেক আদর যতেœ মানুষ করেছি।

হাতে তসবিহ নিয়ে বুকের কাছে ছেলের ছবি ধরে আহাজারি করতে থাকা আরমানের মা ফাহিমা বেগম আমার ছেলেকে ফেরত চাই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মাঝবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কাজী শরিফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। আরমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এবিষয়ে পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেবব্রত সরকার বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনাটি জেনে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। পরিবারটি যদি আইনী কোনো সহযোগিতা চায় তা দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সাথেও তার কথা হয়েছে। তিনিও এব্যাপারে বেশ আন্তরিক।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ভুক্তভোগী সম্পর্কে পুরো তথ্য ও তার বৈধ কাগজপত্র পেলে বিষয়টি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাতে পারেন। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

এ বিষয়ে দালাল মঞ্জুর সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।