বস্তায় লাশ ফেলে পদ্মায় গোসল

- প্রকাশের সময় : ০৯:২৬:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / 68
কুতুব উদ্দিন পাপ্পু (১৫) থাকত রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ৩০১ নম্বর বাড়িতে। ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন পাপ্পুর স্বজন পাভেলের ইমু নম্বরে চোখ বাঁধা শোয়া অবস্থায় ছবি দিয়ে অজ্ঞাত আসামিরা ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। এ টাকা না দিলে পাপ্পুকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে পাপ্পুর মা রুনা পারভীন রুনু যাত্রাবাড়ী থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে পাপ্পু খুন হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ অক্টোবর অপহরণ মামলাটি খুনের মামলায় রূপান্তর হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় তদন্তে বেরিয়ে আসে খুনিরা। গ্রেপ্তার করা হয় পাপ্পুর সঙ্গে পরিচিত এলাকার বড় ভাই মো. রাজু ও রাজুর খালাতো ভাই শাহরিয়ার হোসেন নাদিমকে। উদ্ধার করা হয় পাপ্পুর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও স্যান্ডেল। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, ২ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে পাপ্পুকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রাজু। এরপর লাশ বস্তায় ভরে নাদিমের সহযোগিতায় মুন্সিগঞ্জের নৌহজং উপজেলার পাশে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে যান। লাশ পানিতে ফেলে পদ্মায় গোসল করেন রাজু। এরপর ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য নাদিমকে হত্যার হুমকি দেন রাজু। রাজুর সঙ্গে এলাকার ছোট ভাই হিসেবে পাপ্পুর পূর্ব থেকেই পরিচয় ছিল। রাজু ও পাপ্পু মাঝেমধ্যে একসঙ্গে বিয়ার খেতেন। ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে পাপ্পুকে মদ খাওয়ানোর জন্য ডাক দেন রাজু। এরপর পাপ্পুকে রাজুর ভাড়াকৃত (২৩১ দক্ষিণ কুতুবখালী, যাত্রাবাড়ী) গোডাউনে নিয়ে যান। দুজনে একত্রে মদ খান। ইচ্ছা করে পাপ্পুকে অতিরিক্ত মদ খাওয়ানো হয়। পাপ্পু অচেতন হয়ে গেলে পরিবারের কাছে ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না পেয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করতে পরিকল্পনা করেন রাজু। সে অনুযায়ী লাশ গোডাউনে রেখে এলাকার ভাঙারি দোকান থেকে ৫০ কেজি বই এবং ফলের আড়ত থেকে দুটি বড় সাদা রঙের প্লাস্টিকের বস্তা কিনে আনেন। এরপর পাপ্পুর লাশ মাথা, হাত ও পা কাছাকাছি কুঁজো করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। গোডাউনে থাকা পলিথিন দিয়ে লাশ প্যাঁচানো হয়। বস্তার নিচে বই দেওয়া হয়। এর মধ্যে লাশ ঢুকিয়ে লাশের চারপাশে ফের বই দিয়ে বস্তার মুখ বেঁধে ফেলা হয়। বাকি বইগুলো অন্য একটি বস্তায় ঢোকানো হয়। এরপর পাপ্পুর লাশ গোডাউনে রেখে রাজু বাসায় চলে যান। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, মামলার সার্বিক তদন্ত, গ্রেপ্তার রাজু ও নাদিমের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা, লাশ বহনকারী পিকআপের মালিক ও চালক, লাশ পদ্মায় ডোবানোর কাজে ব্যবহৃত ট্রলারচালকের জবানবন্দিসহ আদালতে দেওয়া সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা, রাজুর কাছ থেকে জব্দ মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানা গেছে, পাপ্পুকে হত্যা, মুক্তিপণ দাবি এবং পদ্মায় ডুবিয়ে দিয়ে লাশ গুম করার অপরাধ করেন রাজু ও নাদিম।
কুতুব উদ্দিন পাপ্পুর মা রুনা পারভীন রুনু বলেন, ‘আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। লাশ গুম করা হয়েছে। মদের বিষয়টি সাজানো। সে কখনো মদ পান করতে পারে না।’
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন