Dhaka ০২:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হত্যার পর গুমের অভিযোগ পরিবারের

নিখোঁজের ৩ দিন পর ধানক্ষেতে মিলল শিশুর মরদেহ

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫২:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১০৪০ জন সংবাদটি পড়েছেন

 নিখোঁজের তিনদিন পর ১২ বছর বয়সী শিশু মিনহাজ শেখের মরদেহ পাওয়া গেছে ধানক্ষেতে। শিশু মিনহাজ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া গ্রামের আজাদ শেখের ছেলে। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, বাড়ির অনতিদূরে ড্রাগন ও মাল্টা ফলের বাগানে ফল আনতে যাওয়ায় মিনহাজকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার শামিমা পারভীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ড্রাগন বাগান মালিক মুুক্তার হোসেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, মিনহাজের বাবা আজাদ শেখ পেশায় একজন ভ্যানচালক। তারা খুবই হতদরিদ্র। তার চার ছেলে। ১৪ বছর বয়সী বড় ছেলে স্থানীয় একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। দ্বিতীয় ছেলে মিনহাজ স্কুলে খুব একটা যেতনা। মানুষের খায় ফরমায়েশ খাটতো। মঙ্গলবার সকালে ধানক্ষেতে মিনহাজের মৃতদেহ পওয়া যায়। তার একটি পা শেয়াল বা হিং¯্র কোনো জন্তু খেয়ে ফেলেছে। লাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা লিটন খান জানান, মুক্তার সরদারের বাগানে বিদু্যুতের তার দেওয়া রয়েছে। গত রোববার মিনহাজ নিখোঁজ হওয়ার পর তিনিও সেখানে মিনহাজকে খুঁজতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাগানে ঢুকতে দেয়নি তাকে। মঙ্গলবার সকালে বাগানের পাশে ধান ক্ষেতে মিনহাজের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বিদ্যুতায়িত হয়ে মিনহাজের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা তার।

আজাদ শেখ জানান, তার ছেলে মিনহাজ সারাদিন বাড়িতেই থাকে। মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে। গত রোববার সন্ধ্যায়ও বাড়ি না ফেরায় মিনহাজের বন্ধু সুমনের কাছে জানতে চান মিনহাজকে দেখেছে কীনা। সুমন জানায় ওইদিন দুপুরে সে আর মিনহাজ মুক্তারের ড্রাগন বাগানে গিয়েছিল। বিকেলে মিনহাজ আবারও যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু বাগানে বিদ্যুতের তার দেওয়ায় সুমন যেতে রাজী না হওয়ায় মিনহাজ একাই চলে যায় বলে জানায় সুমন। এরপর রাতভর মিনহাজকে অনেক খুঁেজেছেন। কিন্তু কোথাও পাননি। সোমবার সকালে ড্রাগন বাগানে গিয়ে মালিক মুক্তারের কাছে গিয়ে বাগানে ঢোকার অনুমতি চান ছেলেকে খোঁজার জন্য। কিন্তু তাকে বাগানে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করেছেন। বিকেলে রাজবাড়ী সদর থানায় জিডি করেন। সোমবার সকালে তার মামা ইসমাইল বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ধান ক্ষেতে গিয়ে মিনহাজের মরদেহ দেখতে পান। অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার ছেলেকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে রেখেছিল বাগান মালিক। তিনি এর বিচার চান।

মিনহাজের মা খাদিজা খাতুন বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন। বিলাপের সুরে বলেন, যদি বাগানের লোকরা বলতো তোমার ব্যাটা ফল খেয়েছে। জরিমানা দাও। আমি দিয়ে দিতাম। আটকে রাখলেও ঘর বিক্রি করে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতাম, মেরে কেন ফেলল। ওরা আমার ছেলেকে মেরে তিন দিন গুম করে রেখেছে। রাতে ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখেছে। ছেলের লাশ শিয়ালে খেয়েছে। ফল খাওয়ার জন্য জিহŸা কেটে ফেলেছে। এর বিচার চাই আমি।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার শামিমা পারভীন জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিকভাবে এটিকে হত্যাকান্ড বলেই মনে হচ্ছে। সুরতহালের পর নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত ড্রাগন বাগান মালিক মুক্তার সরদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে (মুক্তার) পলাতক। দ্রæতই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও  জড়িতদের  গ্রেপ্তার করা হবে।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত বাগান মালিক মুক্তার সরদারের বাড়ি এবং বাগানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়ি এবং বাগানে কেউ ছিল না।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

হত্যার পর গুমের অভিযোগ পরিবারের

নিখোঁজের ৩ দিন পর ধানক্ষেতে মিলল শিশুর মরদেহ

প্রকাশের সময় : ০৬:৫২:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 নিখোঁজের তিনদিন পর ১২ বছর বয়সী শিশু মিনহাজ শেখের মরদেহ পাওয়া গেছে ধানক্ষেতে। শিশু মিনহাজ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া গ্রামের আজাদ শেখের ছেলে। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, বাড়ির অনতিদূরে ড্রাগন ও মাল্টা ফলের বাগানে ফল আনতে যাওয়ায় মিনহাজকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার শামিমা পারভীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ড্রাগন বাগান মালিক মুুক্তার হোসেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, মিনহাজের বাবা আজাদ শেখ পেশায় একজন ভ্যানচালক। তারা খুবই হতদরিদ্র। তার চার ছেলে। ১৪ বছর বয়সী বড় ছেলে স্থানীয় একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। দ্বিতীয় ছেলে মিনহাজ স্কুলে খুব একটা যেতনা। মানুষের খায় ফরমায়েশ খাটতো। মঙ্গলবার সকালে ধানক্ষেতে মিনহাজের মৃতদেহ পওয়া যায়। তার একটি পা শেয়াল বা হিং¯্র কোনো জন্তু খেয়ে ফেলেছে। লাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা লিটন খান জানান, মুক্তার সরদারের বাগানে বিদু্যুতের তার দেওয়া রয়েছে। গত রোববার মিনহাজ নিখোঁজ হওয়ার পর তিনিও সেখানে মিনহাজকে খুঁজতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাগানে ঢুকতে দেয়নি তাকে। মঙ্গলবার সকালে বাগানের পাশে ধান ক্ষেতে মিনহাজের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বিদ্যুতায়িত হয়ে মিনহাজের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা তার।

আজাদ শেখ জানান, তার ছেলে মিনহাজ সারাদিন বাড়িতেই থাকে। মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে। গত রোববার সন্ধ্যায়ও বাড়ি না ফেরায় মিনহাজের বন্ধু সুমনের কাছে জানতে চান মিনহাজকে দেখেছে কীনা। সুমন জানায় ওইদিন দুপুরে সে আর মিনহাজ মুক্তারের ড্রাগন বাগানে গিয়েছিল। বিকেলে মিনহাজ আবারও যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু বাগানে বিদ্যুতের তার দেওয়ায় সুমন যেতে রাজী না হওয়ায় মিনহাজ একাই চলে যায় বলে জানায় সুমন। এরপর রাতভর মিনহাজকে অনেক খুঁেজেছেন। কিন্তু কোথাও পাননি। সোমবার সকালে ড্রাগন বাগানে গিয়ে মালিক মুক্তারের কাছে গিয়ে বাগানে ঢোকার অনুমতি চান ছেলেকে খোঁজার জন্য। কিন্তু তাকে বাগানে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করেছেন। বিকেলে রাজবাড়ী সদর থানায় জিডি করেন। সোমবার সকালে তার মামা ইসমাইল বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ধান ক্ষেতে গিয়ে মিনহাজের মরদেহ দেখতে পান। অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার ছেলেকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে রেখেছিল বাগান মালিক। তিনি এর বিচার চান।

মিনহাজের মা খাদিজা খাতুন বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন। বিলাপের সুরে বলেন, যদি বাগানের লোকরা বলতো তোমার ব্যাটা ফল খেয়েছে। জরিমানা দাও। আমি দিয়ে দিতাম। আটকে রাখলেও ঘর বিক্রি করে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতাম, মেরে কেন ফেলল। ওরা আমার ছেলেকে মেরে তিন দিন গুম করে রেখেছে। রাতে ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখেছে। ছেলের লাশ শিয়ালে খেয়েছে। ফল খাওয়ার জন্য জিহŸা কেটে ফেলেছে। এর বিচার চাই আমি।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার শামিমা পারভীন জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিকভাবে এটিকে হত্যাকান্ড বলেই মনে হচ্ছে। সুরতহালের পর নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত ড্রাগন বাগান মালিক মুক্তার সরদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে (মুক্তার) পলাতক। দ্রæতই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও  জড়িতদের  গ্রেপ্তার করা হবে।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত বাগান মালিক মুক্তার সরদারের বাড়ি এবং বাগানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়ি এবং বাগানে কেউ ছিল না।