Dhaka ০৯:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলেজছাত্র তানভীর হত্যার ঘটনায় হাসপাতালে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১০৪১ জন সংবাদটি পড়েছেন

 

রাজবাড়ীতে কলেজছাত্র তানভীর শেখ হত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার তানভীরের সহপাঠি ও বন্ধুরা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ করেছে। পরে তারা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে হাসপাতালের নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে।

বেলা ১২টার দিকে তানভীরের বন্ধু সহপাঠিরা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ করে হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. এসএমএ হান্নানের পদত্যাগের দাবি জানায়। এসময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, রাজবাড়ী হাসপাতালে কোন চিকিৎসা সেবা নেই। সিরিয়াস কোন রোগী আসলেই তারা ঢাকা, ফরিদপুর রের্ফাড করে দেয়। এতে করে অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়। হাসপাতালে বছরের পর বছর নানা অব্যবস্থাপনা চলে আসছে।

তানভীরের সহপাঠি তামিম হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার তাদের বন্ধু তানভীরকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। তানভীরকে রাজবাড়ী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়েই ফরিদপুর রের্ফাড করে। এখান থেকে সঠিক চিকিৎসা পেতো তাহলে তানভির মারা যেতো না।

শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান সাকিব হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. হান্নানের পদত্যাগের দাবি করে বলেন, হাসপাতালে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা চললেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি।

এবিষয়ে রাজবাড়ী হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ হান্নান বলেন, আমাদের হাসপাতালে জনবল সংকট আছে। তারপরও আমরা সঠিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে আমার থেকে অন্য কেউ হাসপাতাল ভালো পরিচালনা করতে পারবে তাহলে আমি সরে যাব।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহীম টিটন বলেন, আমি শিক্ষর্থীদের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি জানান, তানভীর হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে পুলিশ। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। মিরাজ নামে এক যুবককে মারধরের খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পবিারের জিম্মায় দেয়।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর ৩ নং ওয়ার্ডে কলেজছাত্র তানভীর শেখ (২০) কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তানভীর একই গ্রামের বাবর আলী শেখের ছেলে। রাজবাড়ী ডা. আবুল হোসেন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তানভীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ডিম কেনার জন্য জোবায়ের ও মিশুক নামে তার দুই বন্ধুকে সাথে করে বাড়ি থেকে আনুমানিক দুশ গজ দূরে একটি দোকানে যায়। ফেরার সময় ১০/১২ জনের একটি সশস্ত্র দুর্বৃত্ত দল তাদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। তানভীরের সঙ্গে থাকা দুজনকে অস্ত্রের মুখে করে। এরপর তানভীরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কোপাতে শুরু করে। পরে মিশুক দুর্বৃত্তদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চিৎকার দেয়। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে  এসে তানভীরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এরই মধ্যে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তানভীরকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরের পেট, পিঠ, ঘাড়সহ বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

হত্যার ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় তানভীরের মামা আলম শেখ বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ বুধবার দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে কাজল ও নতুনবাজার এলাকার সামাদ শেখের ছেলে রহিম শেখ।

তানভীরের স্বজন সহপাঠি ও বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে রাজবাড়ী শহরের আজাদী ময়দানের কাছে অটোরিক্সায় ধাক্কা নিয়ে বিনোদপুর গ্রামের এক যুবকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মরামারির ঘটনাও ঘটে। এরই জের ধরে তানভীরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

কলেজছাত্র তানভীর হত্যার ঘটনায় হাসপাতালে বিক্ষোভ

প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

 

রাজবাড়ীতে কলেজছাত্র তানভীর শেখ হত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার তানভীরের সহপাঠি ও বন্ধুরা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ করেছে। পরে তারা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে হাসপাতালের নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে।

বেলা ১২টার দিকে তানভীরের বন্ধু সহপাঠিরা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ করে হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. এসএমএ হান্নানের পদত্যাগের দাবি জানায়। এসময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, রাজবাড়ী হাসপাতালে কোন চিকিৎসা সেবা নেই। সিরিয়াস কোন রোগী আসলেই তারা ঢাকা, ফরিদপুর রের্ফাড করে দেয়। এতে করে অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়। হাসপাতালে বছরের পর বছর নানা অব্যবস্থাপনা চলে আসছে।

তানভীরের সহপাঠি তামিম হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার তাদের বন্ধু তানভীরকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। তানভীরকে রাজবাড়ী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়েই ফরিদপুর রের্ফাড করে। এখান থেকে সঠিক চিকিৎসা পেতো তাহলে তানভির মারা যেতো না।

শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান সাকিব হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. হান্নানের পদত্যাগের দাবি করে বলেন, হাসপাতালে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা চললেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি।

এবিষয়ে রাজবাড়ী হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ হান্নান বলেন, আমাদের হাসপাতালে জনবল সংকট আছে। তারপরও আমরা সঠিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে আমার থেকে অন্য কেউ হাসপাতাল ভালো পরিচালনা করতে পারবে তাহলে আমি সরে যাব।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহীম টিটন বলেন, আমি শিক্ষর্থীদের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি জানান, তানভীর হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে পুলিশ। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। মিরাজ নামে এক যুবককে মারধরের খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পবিারের জিম্মায় দেয়।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর ৩ নং ওয়ার্ডে কলেজছাত্র তানভীর শেখ (২০) কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তানভীর একই গ্রামের বাবর আলী শেখের ছেলে। রাজবাড়ী ডা. আবুল হোসেন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তানভীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ডিম কেনার জন্য জোবায়ের ও মিশুক নামে তার দুই বন্ধুকে সাথে করে বাড়ি থেকে আনুমানিক দুশ গজ দূরে একটি দোকানে যায়। ফেরার সময় ১০/১২ জনের একটি সশস্ত্র দুর্বৃত্ত দল তাদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। তানভীরের সঙ্গে থাকা দুজনকে অস্ত্রের মুখে করে। এরপর তানভীরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কোপাতে শুরু করে। পরে মিশুক দুর্বৃত্তদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চিৎকার দেয়। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে  এসে তানভীরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এরই মধ্যে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তানভীরকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরের পেট, পিঠ, ঘাড়সহ বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

হত্যার ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় তানভীরের মামা আলম শেখ বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ বুধবার দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে কাজল ও নতুনবাজার এলাকার সামাদ শেখের ছেলে রহিম শেখ।

তানভীরের স্বজন সহপাঠি ও বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে রাজবাড়ী শহরের আজাদী ময়দানের কাছে অটোরিক্সায় ধাক্কা নিয়ে বিনোদপুর গ্রামের এক যুবকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মরামারির ঘটনাও ঘটে। এরই জের ধরে তানভীরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।