Dhaka ১১:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ী জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৭ গুণ বন্দী, ১শ জনের স্থলে রয়েছে ৭৩১ জন, জনবল সংকটে হিমশিম খেতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৯:১৪:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুন ২০২১
  • / ১৩৮৪ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ী জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার সাত গুণ বন্দী রয়েছে। যেকারণে বন্দীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। বন্দীদের রাখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে। জনবল সংকটেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ অবস্থার মধ্যে তারা আন্তরিকভাবে বন্দীদের যতটা সম্ভব ভালোভাবে রাখা যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দীদের জন্য শিক্ষা, বিনোদন, খেলাধুলার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যাতে করে তাদের মন প্রফুল্ল থাকে।  এছাড়া বন্দীরা এখন সপ্তাহে একদিন স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারছে। বন্দী সংখ্যা বেশি হলেও তাদের খাবারের কোনো সমস্যা হয়না।

রাজবাড়ী জেলা কারাগার সূত্র জানায়, পূর্বে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ছিল রাজবাড়ী উপ-কারাগার। সেখানে খুব কম সংখ্যক বন্দীকে রাখা যেত। ২০০৬ সালের ১৪ অক্টোবর  তারিখে রাজবাড়ী শহরের মুরগীর ফার্ম এলাকায় জেলা কারাগারটি চালু করা হয়। এ কারাগারে বন্দীর ধারণ ক্ষমতা একশ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯০ জন, নারী ১০ জন, আট জন কিশোর রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে কারাগারে মোট বন্দীর সংখ্যা ৭৩১ জন। এর মধ্যে হাজতী ৬০৫ জন,  কয়েদি ১২৬ জন। বন্দীদের মধ্যে পুরুষ ৭০৩ জন এবং নারী ২৮ জন। কারাগারটিতে কোনো কিশোর বন্দী নেই।

কারাগারের তিনটি ভবনে চারটি করে মোট ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে আট জন করে বন্দী থাকার কথা থাকলেও সেখানে এখন ৬০ থেকে ৬২ জন রাখা হচ্ছে।

জেলা কারাগারটিতে একশ জন বন্দীর জন্য মঞ্জুরিকৃত পদের ৮৮ জনের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৭৪ জন। সেখানে বন্দীর সংখ্যা অধিক হওয়ায় দায়িত্ব সামলাতে কারা কর্তৃপক্ষকে  হিমশিম খেতে হয়।

রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেলার মামুনুর রশীদ জানান, রাজবাড়ী কারাগারে ধারণ ক্ষমতা একশ জন হলেও কয়েক মাস আগে গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে ধারণ ক্ষমতা ২২৮ জন করা হয়েছে। রাজবাড়ী কারাগারের যে অবস্থা তাতে পাঁচশ জন পর্যন্ত বন্দী মোটামুটি ভালোভাবে রাখা যায়। তার উপরে গেলেই ক্রাউডেড হয়ে যায়। বন্দীদের জন্য পর্যাপ্ত কম্বল এবং খাবারের পাশাপাশি চিত্ত বিনোদন, খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা আছে। ইনডোর গেমসে বন্দীরা লুডু, কেরাম, দাবা ও তাস খেলতে পারে। আউটডোর গেমসে রয়েছে ফুটবল ও ভলিবল খেলার ব্যবস্থা। মাদক মামলার এবং যৌনপল্লীর ঘটনায় যারা আসামি হয়ে বন্দী থাকে তাদের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেসব বন্দীদের স্বাক্ষরজ্ঞান নেই তাদের জন্য রয়েছে গণশিক্ষা কার্যক্রম। সরকারিভাবে একজন শিক্ষক নিযুক্ত করার পাশাপশি বন্দীদের মধ্য থেকে দুজন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণশিক্ষা কার্যক্রমে ৫০ জনকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে পড়ানো হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে একটি করে টেলিভিশন। দুটি করে পত্রিকা রাখা হয়। কারা লাইব্রেরী থেকে বই পড়ারও ব্যবস্থা রয়েছে বন্দীদের জন্য।

মাদকাসক্ত বন্দীদের কাউন্সেলিং করানো হয়। কিয়াস্ক এর মাধ্যমে মাদক বিরোধী ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। তাদের সাথে প্রতিদিন মিটিং করা হয়। যাতে মাদকমুক্ত হয়ে সুপথে ফিরে আসে।  বন্দীদের নৈতিক শিক্ষার পাশাপশি নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বন্দীরা যাতে তাদের স্বজনদের যোগাযোগ করতে পারে এজন্য মোবাইল ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সপ্তাহে একদিন ১০ টাকার বিনিময়ে বন্দীরা স্বজনদের সাথে কথা বলতে পারে। এটিও তাদের জন্য বড় একটি রিক্রেশন। কারা কেন্টিনে খুবই ন্যায্যমূলে খাবার বিক্রি করা হয়। অর্থেও বিনিময়ে বন্দীরা ক্যান্টিন থেকে তাদের পছন্দ মত খাবার খেতে পারে। করোনাকালীন নবাগত বন্দীদের কারাগারে প্রবেশ করার পর তাদেরকে জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগ করানোর পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

তিনি বলেন, কারাগারে জনবল কম হওয়ায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম থেকে হয়। সকাল ছয়টায় কারাগারে এসে বাসায় ফেরেন রাত ১১ টায়।

এদিকে করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম শিথিল করায় জামিন প্রক্রিয়ায় বন্দীরা সমস্যায় পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফৌজদারী মামলায় কারাগারে বন্দী রয়েছে এমন বন্দীদের মধ্যে ৪৭ জন দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় আদালতে শুনানীতে অংশ নিতে পারেনি। ৮৫ জন বন্দী আছে যাদের তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে জামিন শুনানী হয়নি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ী জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৭ গুণ বন্দী, ১শ জনের স্থলে রয়েছে ৭৩১ জন, জনবল সংকটে হিমশিম খেতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে

প্রকাশের সময় : ০৯:১৪:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুন ২০২১

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ী জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার সাত গুণ বন্দী রয়েছে। যেকারণে বন্দীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। বন্দীদের রাখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে। জনবল সংকটেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ অবস্থার মধ্যে তারা আন্তরিকভাবে বন্দীদের যতটা সম্ভব ভালোভাবে রাখা যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দীদের জন্য শিক্ষা, বিনোদন, খেলাধুলার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যাতে করে তাদের মন প্রফুল্ল থাকে।  এছাড়া বন্দীরা এখন সপ্তাহে একদিন স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারছে। বন্দী সংখ্যা বেশি হলেও তাদের খাবারের কোনো সমস্যা হয়না।

রাজবাড়ী জেলা কারাগার সূত্র জানায়, পূর্বে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ছিল রাজবাড়ী উপ-কারাগার। সেখানে খুব কম সংখ্যক বন্দীকে রাখা যেত। ২০০৬ সালের ১৪ অক্টোবর  তারিখে রাজবাড়ী শহরের মুরগীর ফার্ম এলাকায় জেলা কারাগারটি চালু করা হয়। এ কারাগারে বন্দীর ধারণ ক্ষমতা একশ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯০ জন, নারী ১০ জন, আট জন কিশোর রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে কারাগারে মোট বন্দীর সংখ্যা ৭৩১ জন। এর মধ্যে হাজতী ৬০৫ জন,  কয়েদি ১২৬ জন। বন্দীদের মধ্যে পুরুষ ৭০৩ জন এবং নারী ২৮ জন। কারাগারটিতে কোনো কিশোর বন্দী নেই।

কারাগারের তিনটি ভবনে চারটি করে মোট ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে আট জন করে বন্দী থাকার কথা থাকলেও সেখানে এখন ৬০ থেকে ৬২ জন রাখা হচ্ছে।

জেলা কারাগারটিতে একশ জন বন্দীর জন্য মঞ্জুরিকৃত পদের ৮৮ জনের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৭৪ জন। সেখানে বন্দীর সংখ্যা অধিক হওয়ায় দায়িত্ব সামলাতে কারা কর্তৃপক্ষকে  হিমশিম খেতে হয়।

রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেলার মামুনুর রশীদ জানান, রাজবাড়ী কারাগারে ধারণ ক্ষমতা একশ জন হলেও কয়েক মাস আগে গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে ধারণ ক্ষমতা ২২৮ জন করা হয়েছে। রাজবাড়ী কারাগারের যে অবস্থা তাতে পাঁচশ জন পর্যন্ত বন্দী মোটামুটি ভালোভাবে রাখা যায়। তার উপরে গেলেই ক্রাউডেড হয়ে যায়। বন্দীদের জন্য পর্যাপ্ত কম্বল এবং খাবারের পাশাপাশি চিত্ত বিনোদন, খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা আছে। ইনডোর গেমসে বন্দীরা লুডু, কেরাম, দাবা ও তাস খেলতে পারে। আউটডোর গেমসে রয়েছে ফুটবল ও ভলিবল খেলার ব্যবস্থা। মাদক মামলার এবং যৌনপল্লীর ঘটনায় যারা আসামি হয়ে বন্দী থাকে তাদের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেসব বন্দীদের স্বাক্ষরজ্ঞান নেই তাদের জন্য রয়েছে গণশিক্ষা কার্যক্রম। সরকারিভাবে একজন শিক্ষক নিযুক্ত করার পাশাপশি বন্দীদের মধ্য থেকে দুজন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণশিক্ষা কার্যক্রমে ৫০ জনকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে পড়ানো হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে একটি করে টেলিভিশন। দুটি করে পত্রিকা রাখা হয়। কারা লাইব্রেরী থেকে বই পড়ারও ব্যবস্থা রয়েছে বন্দীদের জন্য।

মাদকাসক্ত বন্দীদের কাউন্সেলিং করানো হয়। কিয়াস্ক এর মাধ্যমে মাদক বিরোধী ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। তাদের সাথে প্রতিদিন মিটিং করা হয়। যাতে মাদকমুক্ত হয়ে সুপথে ফিরে আসে।  বন্দীদের নৈতিক শিক্ষার পাশাপশি নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বন্দীরা যাতে তাদের স্বজনদের যোগাযোগ করতে পারে এজন্য মোবাইল ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সপ্তাহে একদিন ১০ টাকার বিনিময়ে বন্দীরা স্বজনদের সাথে কথা বলতে পারে। এটিও তাদের জন্য বড় একটি রিক্রেশন। কারা কেন্টিনে খুবই ন্যায্যমূলে খাবার বিক্রি করা হয়। অর্থেও বিনিময়ে বন্দীরা ক্যান্টিন থেকে তাদের পছন্দ মত খাবার খেতে পারে। করোনাকালীন নবাগত বন্দীদের কারাগারে প্রবেশ করার পর তাদেরকে জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগ করানোর পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

তিনি বলেন, কারাগারে জনবল কম হওয়ায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম থেকে হয়। সকাল ছয়টায় কারাগারে এসে বাসায় ফেরেন রাত ১১ টায়।

এদিকে করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম শিথিল করায় জামিন প্রক্রিয়ায় বন্দীরা সমস্যায় পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফৌজদারী মামলায় কারাগারে বন্দী রয়েছে এমন বন্দীদের মধ্যে ৪৭ জন দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় আদালতে শুনানীতে অংশ নিতে পারেনি। ৮৫ জন বন্দী আছে যাদের তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে জামিন শুনানী হয়নি।