গুলিতে নিহত হোটেল কর্মচারী গনির স্ত্রীর আকুতি
বিচার চাই না, সংসার বাঁচাতে ছেলের একটা চাকরি চাই
- প্রকাশের সময় : ০৮:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
- / ১০৬২ জন সংবাদটি পড়েছেন
স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল আব্দুল গনির সুখের সংসার। কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজধানী ঢাকায় গুলিতে আব্দুল গনির মৃত্যুর পর তার সংসারে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া। তার স্ত্রী লাকী আক্তারের আকুতি, স্বামী হত্যার বিচার কার কাছে চাইব। আমি বিচার চাই না। শুধু সংসার বাঁচাতে ছেলের একটা চাকরি চাই। নিহত আব্দুল গনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার ্আলীপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে। ঢাকার গুলশান-২ এলাকার আবাসিক হোটেল সিক্সসিজনে কাজ করতেন আব্দুল গনি। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বাড্ডার ভাড়া বাসা থেকে হোটেলে যাওয়ার সময় গুলিতে নিহত হন তিনি। ২৬ জুলাই শুক্রবার বিকেলে তার গ্রামের বাড়ি রহিমপুরে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়।
আব্দুল গনির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর ধরে ঢাকার গুলশানে সিক্সসিজন নামে একটি হোটেলে চাকরি করতেন আব্দুল গনি। থাকতেন বাড্ডায় একটি ভাড়া বাসায়। তার ছেলে আলামিন এসএসসি পাশ করার পর ঢাকায় চলে যায়। সেখানে সে শেফ এর কাজ শিখত। সম্প্রতি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের চরখানাখানাপুর এলাকায় বাড়ি করেন। সেখানেই থাকতেন স্ত্রী লাকী আক্তার চার বছরের মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে আব্দুল গনি বাড়ি আসতেন। আব্দুল গনি যা আয় করতেন তা নিয়ে সংসারে টানাপড়েন থাকলেও সুখের কমতি ছিলনা। গত ১৯ জুলাই সকালে রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকায় আন্দোলন সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মাথায় গুলি লেগে মারা যান আব্দুল গনি। ২১ জুলাই রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তার মরদেহ হাতে পান স্বজনরা। ওইদিন রাতেই তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
আব্দুল গণির বাবা মজিদ শেখ জানান, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার সকালে তার ছেলের সাথে ফোনে কথা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একজন তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে আপনার ছেলে কি ঢাকা থাকে। তিনি হ্যাঁ বললে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে আপনার ছেলের গুলি লেগেছে। হাসপাতালে আছে। ঢাকায় কেউ থাকলে পাঠিয়ে দেন। এসময় ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলেন, আমার আরেক ছেলে ঢাকায় তাকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলেন। আমার ছোট ছেলে হাসপাতালে যাওয়ার পরই জানতে পারেন গনি আর নেই। ছেলে হারানোর কষ্ট বুকে চেপে আছেন। চার বছর বয়সে আমার নাতনি এতিম হয়ে গেল। তার করুণ মুখের দিকে তাকাতে পারিনা।
আব্দুল গনির স্ত্রী লাকী আক্তার বলেন, আমার স্বামী খুব সহজ সরল ছিল। কারও সাথে কোনো দিন তার ঝামেলা হয়নি। সে কোনো রাজনীতিও করত না। ছেলে-মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সুখে ছিলেন। তার স্বামীর মৃত্যুতে তার সুখের সংসার শেষ হয়ে গেল। সংসার চালাতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণী হয়েছেন। এসব টাকা শোধ করবেন কীভাবে? একেতো স্বামীর মৃত্যু শোক আরেক দিকে সংসার আর ঋণের চাপে চোখে অন্ধকার দেখছেন। সংসারে হাল ধরার কেউ নেই। তিনি স্বামী হত্যার বিচার চান না। সংসার যাতে চালাতে পারেন এজন্য ছেলের একটা চাকরি চান। যাতে করে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচতে পারেন।
আব্দুল গণির ছেলে আলামিন শেখ জানায়, এসএসসি পাশের পরে তার বাবা তাকে ঢাকা নিয়ে যায়। সেখানে শেফের কাজ শিখছে। বাবার সাথে একই বাসাতে থাকত। আগের রাতে কাজ শেষ করে সকালে এসে ঘুমিয়েছিল বাসায়। সকাল ১০ টার দিকে মা ফোন দিয়ে বলে তোর বাবার খবর নে। মাথায় গুলি লেগেছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার বাবার মরদেহ দেখতে পাই। ওইদিন হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। ২১ জুলাই রোববার ময়নাতদন্তের পর বাবার মরদেহ বুঝে পাই। আমি ঢাকায় শেফের কাজ শিখছিলাম। এখনও বেকার। বাড়িতে মা আর ছোট বোন। বাবাকে হারিয়ে আমাদের এখন বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।
এলাকাবাসী আব্দুল গনির সংসার চালানোর ব্যবস্থা করার জন্য সংংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছে।