বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি

- প্রকাশের সময় : ০২:১০:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 944
পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্ম সাদামাটা জন্মগ্রহণ করলেও কিছু মানুষ আছেন যারা আবির্ভূত হন তারা নতুন সভ্যতা, নতুন অধ্যায়ের সূচনায় চিহ্নিত হন! তেমনি বাংলা ও বাঙালির মাঝে ঈশ্বরচন্দ্রের আবির্ভাব সমগ্র পিছিয়া পড়া মানুষের জন্য সামাজিক মুক্তি ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের পথনির্দেশ দিয়েছেন। তার প্রখর চেতনা বোধের একটা গল্প বলি একবার এক ডাক্তার বাবু রেলওয়ে স্টেশনে নামলেন। নেমে ‘কুলি’ ‘কুলি’ বলে ডাকছেন। ডাক শুনে এগিয়ে এলেন একজন সাহায্য করতে। বিদ্যাসাগরের পরনে ধুতি, গায়ে মোটা চাদর। পায়ে সাধারণ চটি। কুলি এসেছে ভেবে ডাক্তার তার হাতে ব্যাগ তুলে দিলেন। লোকটাও ব্যাগটা নিয়ে স্টেশনের বাইরে দাঁড়ানো বাবুর পাল্কিতে পৌঁছে দিলেন। ডাক্তার পয়সা দিতে চাইলে লোকটা বললেন, ‘না না, পয়সা দিতে হবে না, আপনি এতো ছোট ব্যাগ নিয়ে এত বড় বিপদে পড়েছিলেন দেখে আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছি। দুর্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কর্মহীন, দাম্ভিক, তার্কিক জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের এক সুগভীর ধিক্কার ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ঊনবিংশ শতকের বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের পান্ডিত্যের জন্যে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় অগাধ বুৎপত্তি ছিল তার। তিনি প্রথম বাংলালিপি সংস্কার করে সেটাকে যুক্তিবহ এবং অধিকতর বোধগম্য করে তুলেন। এজন্যই তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম স্বার্থক রূপকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জীবদ্দশায় তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় রচনা তার মধ্যে একাধিক পাঠ্যপুস্তক, শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়, সংস্কৃত ব্যাকরণ, হিন্দি এবং ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ গ্রন্থসহ অসংখ্য বই। বিদ্যাসাগর এমনিভাবে মানুষকে শিখিয়েছেন চলন-বলন। নিজেও আমিত্ববোধে সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। সাহেবদের যুগে সাদাসিধে পোশাকে গায়ে মোটা চাদর ও চটিজুতা ছিল তার একমাত্র পরিচ্ছদ। বৈচিত্রময় কাজ ও ভাবনায় বাঙালির চিন্তার অচলায়তন ভেঙ্গে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে কাজ করে গেছেন। আলো হয়ে পথ দেখান আরেক শিক্ষিত কিন্তু চিন্তায় সংকুচিত ও দৈন্য বাঙালিকে। যা আজকের সমাজের জন্যও প্রাসঙ্গিক চিন্তা ও কীর্তি অর্জনে।
সমাজে চলমান কোনো রীতিনীতি পরিবর্তন করতে হলে খুব সাহস ও প্রায়ঙ্গিক চিন্তা থাকা দরকার। সেই বিদ্রোহী চেতনায় ঈশ্বরচন্দ্রের অন্যতম কীর্তি বিধবা বিবাহ চালুকরণ। রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা রদ করে যে সংস্কারের সূচনা করেছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র এর পরিসমাপ্তির দায়ভার নিজের কাঁধেই নিয়েছিলেন।
সতীদাহ রোধে জীবন বাঁচলেও মনে আর মানে বাঁচা দায় হয়ে উঠেছিল বিধবাদের। সে ক্ষেত্রে, ঈশ্বরচন্দ্র বিধবা বিবাহ প্রথার পক্ষে প্রচারণা চালানোয় সেই বিধবাদের চোখের জল মোচনেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে বহু বিবাহ রোধ, বাল্যবিবাহের প্রতিরোধেও শামিল হয়েছিলেন। এসবের সুফল-কুফল জানিয়েছেন ভাষণে ও বই লিখে। সমাজের এক দল মানুষ তাকে হত্যার চিন্তা করলেও তিনি নিরুৎসাহিত হননি। নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে মেয়েদের স্বনির্ভর করা ছিল তার উদ্দেশ্য। আজ তার জন্মের দুইশত বছর পরেও বিদ্যাসাগর সমসাময়িক। আমার পাহাড়ী বোন যখন একদল নেকড়ে দ্বারা ক্ষত বিক্ষত সেই দিনের তোমার জন্মদিন হয়তো কেও কেও পালন করছে কিংবা স্বরণ করছে তাতে কি আমরা তোমাকে ধারন করতে পারছি? । কারণ তিনি ছিলেন সময়ের অগ্রগামী । বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষে আমরা যেন এই বিদ্যালয়ে মানুষের মানবিক আশ্রলায়য়ে এক হতে পারি।
নেহাল আহমেদ, সাংস্কৃতিক কর্মী