হরিষে বিষাদ
বিয়ের আনন্দের বাড়িতে এখন কান্নার রোল
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৫:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১১১১ জন সংবাদটি পড়েছেন
দুই সহোদর ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে তৈরি প্যান্ডেলটির সামনে দুটি খাটিয়ায় দুই সহোদর ভাইয়ের মরদেহ। যেখানে বিয়ে উপলক্ষে আনন্দ উল্লাস করার কথা ছিল সবার। সেখানে এখন শোকের কালো ছায়া। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি আকাশ বাতাস। এমন মর্মন্তুদ ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউ। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের মোকছেদ আলী সরদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এ দৃশ্য। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাকচাপায় মারা গেছেন তার দুই ছেলে মনিরুল ইসলাম মমিন ও সাইফুল ইসলাম সুমন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মোকছেদ আলী সরদারের তিন ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম মমিন ময়মনসিংহে একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করতেন। মেঝ ছেলে শামীম সরদার ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম সুমন চাকরি করতেন দুটি বেসরকারি সংস্থায়। মমিনের বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। মেঝ ছেলে শামীম এবং ছোট ছেলে সুমনের বিয়ে একসাথে দেবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন। সে অনুযায়ী ১ ফেব্রæয়ারি বৃহস্পতিবার শামীমের এবং ২ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার সুমনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। বরের বসার স্থানও সাজানো হয়েছিল সুন্দর করে। বুধবার দুই ভাইয়ের গায়ে হলুদ হয় এক সাথে। গায়ে হলুদ উপলক্ষে আনন্দ উল্লাস চলেছে রাত ১১টা পর্যন্ত। তখনও সবাই জেগে ছিলেন। আনন্দের রেশ কাটেনি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মর্মান্তিক খবরটি পান তারা। আনন্দের বদলে তৈরি হয় শোকের পরিবেশ।
নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, যেখানে বিয়ের প্যান্ডেল করা হয়েছিল সেখানেই দুটি খাটিয়ায় পাশাপাশি নিহত দুই ভাইকে রাখা হয়েছে। বরের জন্য করা প্যান্ডেলটিতে বসে আছেন কয়েকজন। নিহতদের বাবা মোকছেদ আলী বাড়ির বারান্দায় শূন্যে চোখ তুলে তাকিয়ে আছেন। তাকে ঘিরে রেখেছেন অনেকেই। সান্ত¡না জানানোর চেষ্টা করছে সবাই। মা ফিরোজা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিন ভাইয়ের মধ্যে বেঁচে আছেন শামীম। তিনি কী করবেন যেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন তিনি। শত শত মানুষ আসছে তাদের বাড়িতে।
নিহতের চাচাতো ভাই আজিজ সরদার জানান, বুধবার রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে সুমন তার এক বন্ধুকে মোটরসাইকেলে করে এগিয়ে দিতে গোয়ালন্দ যায়। একই সময় ময়মনসিংহ থেকে বাড়িতে আসছিল মোমিন। যেকারণে সুমন মোমিনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। বাড়িতে তখনও আনন্দ উৎসব চলছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে জানানো হয় মৃত্যুর খবর। তখন উৎসবের বাড়িতে শুরু হয় কান্নাকাটি। এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না। তিনি আরও জানান, খুব সুখের সংসার ছিল ওদের। ভাইয়ে ভাইয়ে ভাল বোঝাপড়া ছিল। এক নিমিষে সব শেষ হয়ে গেল।
প্রতিবেশি শুকুর আলী জানান, এমন ঘটনা এর কখনও দেখেননি। শোনেনওনি। এটা মেনে নেওয়া যায়না।
মেঝ ছেলে শামীমের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপির। তার হাতে তখনও মেহেদি রাঙানো ছিল। হ্যাপি জানান, রাতে তাদের বাড়িতে বিয়ের আনন্দ অনুষ্ঠান চলছিল। হঠাৎ এমন মর্মান্তিক খবর পেয়ে রাতেই ছুটে আসেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার হবু ভাসুর আর হবু দেবরের এমন মৃত্যু কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না।
নিহতদের বাবা মোকছেদ আলী সরদার জানান, তার ছেলেরা খুব ভালো ছিল। বাবা-মাকে খেয়াল রাখত। ডাকত প্রাণ ভরে। মানুষের সাথে সব সময় হাসিমুখে কথা বলতো। আল্লাহ এটা কী করলো বলে চিৎকার দেন তিনি।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার মকবুলের দোকান এলাকায় মাটিবাহী একটি ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই সহোদর মনিরুল ইসলাম মমিন (৩২) ও সাইফুল ইসলাম সুমন (২৭) নিহত হন। মমিন ও সুমন মোটরসাইকেলে করে গোয়ালন্দ থেকে রাজবাড়ীর খানখানাপুরে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিল। মকবুলের দোকান এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি মাটিবাহী ট্রাক তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
রাজবাড়ীর আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল হালিম জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ট্রাকটিকে পুলিশ আটক করেছে। এব্যাপােের মামলার প্রস্তুতি চলছে।