কর্মজীবি দলিত নারীদের পুঁজি সহায়তার মাধ্যমে বাঁশ-বেত শিল্প রক্ষার দাবি
- প্রকাশের সময় : ০৭:৫৭:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ১১৮২ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর বেশির ভাগ কর্মজীবি দলিত নারী সল্প পুঁজিতে কাজ করছেন। তাদেরকে সরকারী ভাবে সহযোগিতা করে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তারাও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার একজন সৈনিক। বাঁশ ও বেতের তৈরী শিল্প রক্ষায় এখনো প্রাণপন জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এমন ৫জন কর্মজীবি নারীর সাথে কথা হয়। তাদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে অজানা কথাগুলো ব্যক্ত করেন।
রুপালী দাস। তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পুর্বমৌকুড়ি গ্রামের প্রদীপ দাসের স্ত্রী। স্বামী সেলুনের কাজ করলেও তিনি বাড়ীতে বসে না থেকে বাড়ীর কাজের পাশাপাশি করেন বাঁশের তৈরী চালুন ও কুলা তৈরীর কাজ। ২ ছেলে লেখাপড়া করছে আর মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ১৬-১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের পর অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে বাঁশের তৈরী কুলা ও চালুন তৈরীর কাজ করে আসছেন। পুঁজি সল্পতা ও অর্থাভাবে ১-২টা করে বাঁশ ক্রয় করে তৈরী করেন। এতে তার সপ্তাহে ৫-৬শত টাকা আয় হয়। পুঁজি বাড়লে আয়ও বেশি করা সম্ভব। তিনি বলেন, সরকারী ভাবে সহজ শর্তে ঋন বা এককালীন অনুদান দিলেও তাদের ব্যবসা প্রসার করে সংসারে সচ্ছলতা আনা সম্ভব বলে সহায়তার দাবী জানান।
শেফালী দাস। তিনি বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের মিলন দাসের স্ত্রী। তার স্বামীও সেলুনের কাজ করেন। ২ ছেলে একজন এসএসসি পাশ করার পর গ্রীলের কাজ শিখছে আর ছোট ছেলে চয়ন দাস অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। তিনিও বাঁশের দিয়ে আসবাবপত্র তৈরীর কাজ করেন। নিজের সল্প পুজিতে বাঁশ ক্রয় করে তৈরী করি। এতে সপ্তাহে ৫-৬শত টাকা আয় হয়। ১৪-১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়। আর্থিক সহায়তা বা সহজ শর্তে ঋন পেলে আরো বেশি আয় করা সম্ভব। আর বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র বিক্রি করতে বাজারে যেতে হয় না। বাড়ী থেকেই বিক্রি করা হয়। অর্থের অভাবে অনেক সময় কাজ বন্ধ করতে হয়। তবে নিজে আয় করার কারণে সংসারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে নেয়।
চন্দনা দাস। তিনি বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের সত্য দাসের স্ত্রী। ২ সন্তান। একজন স্কুলে যায় ও অন্যজন এখনো স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। সেও বাঁশ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরীর কাজ করেন। বাড়ীর কাজের পাশাপাশি স্বামীর সহযোগিতায় এ কাজ করেন। প্রতিটি কুলা তৈরী করতে ২৫-৩০টাকা খরচ হয়। ৫০টাকা বিক্রি করি। বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। বিভিন্ন লোকজন এসে বাড়ী থেকে ক্রয় করে নিয়ে যান। তবে তিনিও দাবী করেন আর্থিক ভাবে সহায়তা পেলে ঘুরে দাড়ানো সম্ভব।
আদুরী দাস। তিনি বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের অরুন দাসের স্ত্রী। স্বামী বেতের কাজ করলেও বেতের দাম বেশি ও পুজি না থাকার কারণে তিনি এখন বেকার। নিজে বাঁশের কাজ করে প্রতি সপ্তাহে ৭-৮শত টাকা আয় হয় তা দিয়েই কোন মতে সংসার চলে। ২ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে অন্তু সেলুনের কাজ করে। বেতের আসবাবপত্রের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। সরকারী ভাবে আর্থিক সহায়তা বা সহজশর্তে ঋন পেলে বাঁশ ও বেতের তৈরীর কাজের ব্যপ্তি ঘটানো সম্ভব।
ইতি দাস। তিনি বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের চিত্ত দাসের স্ত্রী। বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র তৈরী করেই চলে তার সংসার। এক মেয়ে স্কুলে পড়ে। সপ্তাহে ৫-৬শত টাকা আয় হয়। তবে অর্থাভাবে এ কাজ খুড়িয়ে খুড়িয়ে করতে হচ্ছে। সরকারী ভাবে সহযোগিতা পেলে সংসারে সচ্ছলতা ও ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে।
সর্বশেষ অবহেলিত ও অসহায় দলিত জনগোষ্টির অদম্য মেধা দিয়ে তৈরী বাঁশ ও বেত শিল্পকে রক্ষায় সরকারী ভাবে সহজশর্তে ঋন বা সরকারী অনুদান দিয়ে এদের পাশে দাড়ানো হলেই টিকবে এ শিল্প। এদের পাশে দাড়াতে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।