অ্যপ্রোচ সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হেলে পড়েছে সেতু ॥ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ॥ চরম দুর্ভোগে ৭ গ্রামের মানুষ
- প্রকাশের সময় : ০৫:৫৬:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর ২০২১
- / ১২১৬ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ ‘যে সেতু মানুষের কোনো কাজে আসেনা ওই রকম সেতু না হওয়াই ভালো’। বেশ ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সাঙ্গুড়া গ্রামের বাসিন্দা রাশিদুল ইসলাম। বিলে মাছ শিকার করে জীবীকা নির্বাহ করেন তিনি। বিলের পাশ দিয়ে সাঙ্গুরা-রতনদিয়া রাস্তার মাঝখানে নির্মিত সেতুটি মাত্র তিন বছরের মাথায় হেলে পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার এতো ক্ষোভ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট কর্মসূচির আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬৭৯ টাকা ব্যায়ে ২২ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে সেতুটি হেলে পড়ে যাওয়ার পর এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সাতটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। হাটে-বাজারে কৃষি পণ্য আনা নেওয়া সবচেয়ে দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে নিভৃতপল্লী সাঙ্গুড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে কাঁচা সড়ক। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বিল। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে বিল সৃষ্টি হলেও বছরের বাকীটা সময় সেখানে উর্বর কৃষি জমি হয়ে ওঠে। যেখানে বিভিন্ন ফসল ফলান কৃষকরা। সেতুর পূর্ব পাশে অ্যপ্রোচ সড়কের অনেকটা জায়গার মাটি ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ রাস্তা থেকে সেতুতে ওঠার কোনো উপায় নেই। পশ্চিম পাশের অ্যপ্রোচ সড়কের অবস্থাও প্রায় একই রকম। সেতুটি দক্ষিণ পাশে একেবারেই হেলে পড়েছে। রডগুলো বেরিয়ে গেছে।
সাঙ্গুরা গ্রামের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম, বিষু শেখ মফিজুল মিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, ওবায়দুল শেখ, কামাল হোসেন, রোকন মিয়াসহ অনেকেই জানান, এখানে আগে কালভার্ট ছিল। কয়েক বছর আগে সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর পূর্ব দিকে বালিয়াকান্দির রতনদিয়া, সদর উপজেলার মুচিদহ, কোলারহাট, উদয়পুর, শায়েস্তাপুর এবং পশ্চিম পাশে সাঙ্গুরা, সন্ধ্যা, নটাপাড়া গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। যারা নিজেদের প্রয়োজনে এক হাট থেকে অন্য হাটে, এক বাজার থেকে অন্য বাজারে যাতায়াত করে থাকে। শত শত ভ্যান, রিক্সা, নসিমন চলাচল করে এ পথে। কৃষকরা কৃষি পণ্য আনা নেওয়া করে থাকে। ছাত্রÑছাত্রীরা যায় স্কুলে। তাছাড়া রাজবাড়ী শহরে যাওয়ারও সহজতম পথ এটি। গত এক বছর ধরে সেতুটি হেলে পড়ায় তাদের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শহরে যেতে হলে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, তারা ঁেপয়াজ, রসুন, ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। সেতুটি ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে ফসল ঘরে নিতে হবে। তারা অভিযোগ করেন, সেতু নির্মাণের সময় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছিল।
মুসা সরদার নামে একজন কৃষক জানান, কত বড় বড় নদীতে বড় বড় সেতু বানিয়ে টিকে থাকে বরের পর বছর। অথচ ডাঙ্গায় ছোট একটা সেতু তিন বছরও টিকলোনা। এটা খুবই দুঃখজনক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হাকিম সাধনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিএম ট্রেডার্স। নামফলকে সেতুটির উদ্বোধক হিসেবে নাম রয়েছে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের।
এহসানুল হাকিম সাধনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওখানে বেলে মাটি। সেতুর দুপাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ার কারণে হেলে পড়ে গেছে। মাটি সরে গেলে ঠিকাদারের কী করার আছে। একটা সেতু নির্মাণের পর তার স্থায়ীত্ব কতদিন থাকার কথা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ওই সেতুতো ভেঙে খানখান হয়ে যায়নি। সেতুর নিচ দিয়ে ¯্রােতের কারণে এমন হয়েছে। ঢাকা থেকে লোকজন এসে দেখে গেছে। সেতু নির্মাণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা জানান, যখন সেতুটি নির্মাণ করা হয় তার অনেক পরে তিনি বালিয়াকান্দিতে যোগদান করেন। তাই বিশেষ কিছু তার জানা নেই। তবে, সেতুটি হেলে পড়ার খবরে সেখানে লোক পাঠিয়েছিলেন সরেজমিনে দেখতে। আগেও অ্যপ্রোচ সড়কে সমস্যা হয়েছিল। দুবার করে কাজ করা হয়েছে। এখন পানি। পানির মধ্যে কাজ করা সম্ভব নয়। পানি কমলেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।