গোয়ালন্দে ব্যস্ততম রাস্তা বন্ধ না করতে প্রশাসনকে পৌরসভার চিঠি
- প্রকাশের সময় : ০৭:২৫:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অগাস্ট ২০২০
- / ১৩১৭ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড থেকে সোনালী ব্যাংক উপজেলা কমপ্লেক্স শাখার সামনে দিয়ে মহাসড়কে মিলিত হওয়া ব্যস্ততম রাস্তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন। গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি বন্ধের উদ্যোগে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। জনগণের দূর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সরকারি টাকায় নির্মিত রাস্তাটি বন্ধ না করতে উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে গোয়ালন্দ পৌরকর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, আশির দশকের শেষ দিকে জনগণের সুবিধার্থে খানখানাপুর-গোয়ালন্দ আঞ্চলিক সড়ক থেকে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন স্থানদিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এ রাস্তাটি গোয়ালন্দ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডসহ পাশ্ববর্তী ছোটভাকলা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের সহজ যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে ওঠে। ২০০০ সালে গোয়ালন্দ পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর রাস্তটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পৌরকর্তৃপক্ষ পাকাকরণ করে। এরপর থেকে সড়কটির ব্যাস্ততা আরো বেড়ে যায়। চলতি বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে অস্থায়ী ভাবে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাটি স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ রাস্তাটি বন্ধ না করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অনুরোধ করে। কিন্তু কারো কথা আমলে না নিয়ে উপজেলা প্রশাসন রাস্তাটি বন্ধের কাজ করে যাওয়ায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির দুই পাশে পিলার তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক। পাশেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে ইট ও রড। এসময় স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসনের ক্ষমতা আছে বলেই এত ব্যস্ততম একটা রাস্তা এভাবে বন্ধ করে দিবে? এলাকার কেউ অসুস্থ্য হলে এই রাস্তা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নেয়া যায়, এটি বন্ধ হলে অনেক পথ ঘুরে জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে যেতে হবে। আবার মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলতে পুলিশ বাঁধা দেয়। এছাড়া এ রাস্তার পাশে সোনালী ব্যাংক ও স্কুল রয়েছে। যেখানে শত শত ভাতাভোগী ও ছোট ছোট শিশুরা যাতায়াত করে। মহাসড়ক ব্যবহার করে এসব প্রতিষ্ঠানে যেতে হলে তারা চরম ঝুকির মধ্যে পড়বে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও গোয়ালন্দ প্রপার হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক সাবিনা চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনগণের সুবিধা-অসুবিধা না দেখে ক্ষমতা থাকলেই যা খুশি তাই করা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এ রাস্তাদিয়ে প্রপার হাইস্কুল ও মুনস্টার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শত শত শিক্ষার্থীরা সহজে যাতায়াত করে। এ বিষয়টি তাদের বিবেচনা করা উচিত ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও গোয়ালন্দ সরকারী কামরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গুরত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি বন্ধ না করতে তিনি ইউএনও মহোদয়কে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে তিনি তা আমলে নেননি। রাস্তাটি বন্ধের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র শেখ মো. নিজাম জানান, পৌরসভা গঠিত হওয়ার আগে নির্মিত কাঁচা রাস্তাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে এমএসপি প্রকল্পের আওতায় কার্পেটিং কাজ করা হয়। এরপর অনেকবার রাস্তাটি সংস্কার কাজও করা হয়েছে। এরকম একটি রাস্তা হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তে আমি বিশ্মিত হয়েছি। জনগণের চলাচলের জন্য সরকারী অর্থে নির্মিত রাস্তা বন্ধ না করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে পৌরসভার পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। রাস্তা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে উপজেলা প্রশাসন সরে না আসলে আইনগত দিক খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ এরকম একটি রাস্তা বন্ধ করা কোন ভাবেই সমীচিন হবে না। রাস্তাটি বন্ধ না করতে আমি ইউএনও’কে অনুরোধ করেছি।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তাটি বন্ধ করা হচ্ছে। তবে জনসাধারনের সুবিধার্থে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হবে। এসময় তিনি বলেন, ওই রাস্তা ব্যবহার করে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা ক্যাম্পসের মধ্যে মাদকসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে থাকে। এ বিষয়টিও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। তিনি আরো জানান, আপতত রাস্তা বন্ধের কাজ স্থগিত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।