Dhaka ০১:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ট্রেনের আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বপ্ন

এলিনা সৌমি ও তাসলামের ছবি এখন শুধুই স্মৃতি

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৬:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১১১৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

আগুন কেড়ে নিয়েছে সাজ্জাদ-এলিনার সুখের সংসার। স্ত্রী এলিনাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সাজ্জাদ হোসেন। নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমীন রাজবাড়ী শহরের লক্ষীকোল গ্রামের মৃত সাইদুর রহমান বাবুর মেয়ে। স্বামী সাজ্জাদ হোসেন চপলের চাকরিসূত্রে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন তারা। বাবার মৃত্যুতে এলিনা তার ছয় মাসের ছেলে আরফানকে নিয়ে এসেছিলেন রাজবাড়ীতে। ফেরার সময় বেনাপোল ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিখোঁজ তিনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শনিবার দুপুর ৩টা) এলিনার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই খবরটি এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি এলিনার বৃদ্ধা মা হোসনেআরাকে। এদিকে খোঁজ মিলছে না রাজবাড়ীর আরও দজুনের। তারা হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের চিত্তরঞ্জন চৌধুরীর মেয়ে চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমি ও রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের শিকজান গ্রামের হক মন্ডলের ছেলে তাসলাম (২০)।

শনিবার দুপুরে লক্ষীকোল গ্রামে এলিনাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলিনার স্বজনরা বসে আছে। শুনশান নীরবতা। কারও চোখে পানি। এসময় কথা হয় এলিনার মামাতো ভাই গাজী পলাশের সাথে। জানালেন, গত ২৭ ডিসেম্বর এলিনার বাবা মারা যান। সেকারণেই তিনি ঢাকা থেকে ছয় মাসের ছেলে আরফানকে সাথে করে বাবার বাড়ি এসেছিলেন। সন্ধ্যা ৬টায় রাজবাড়ী স্টেশন থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা ফিরছিলেন। তাদের সাথে ফুফাতো বোন ডেইজি আক্তার রতœা, রতœার স্বামী ইকবাল বাহার খান, দুই ছেলে দিহান(১২) ও রেহান (৬) ছিল। সবাই বের হতে পারলেও এলিনা বের হতে পারেনি। তিনি আরও জানান, তার ফুফু স্বামীর মৃত্যুশোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মেয়ের এই খবরটি তারা জানাবেন কেমন করে। এজন্য তাকে বলা হয়েছে এলিনা হাসপাতালে ভর্তি। তার ফুফুকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ছয় মাসের ছেলে আরফানকে নিয়ে এলিনা ও সাজ্জাদের সুখের সংসার ছিল। কখনও কোনো সমস্যা হয়নি। এলিনা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার স্বামী সাজ্জাদ নির্বাক হয়ে গেছেন। স্ত্রী শোকে পাগল প্রায় সে।

বাড়ির এক কোণে বসে কাঁদছিলেন এলিনার চাচা কলিবর রহমান। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তিনি সন্ধ্যায় এলিনাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসেন। আমার ভাতিজি খুব ভালো ও পরোপাকারী ছিল। সবাইকে আগে নিরাপদে বের করে দিয়ে নিজে মারা গেছে বলে ধারণা তার। যখন আগুনে পুড়ছিল তখন এলিনা তার স্বামী সাজ্জাদকে ফোন করে বলেছিল আমি পুড়ে যাচ্ছি। খুব খারাপ অবস্থায় আছি। এর এক মিনিট পর ফোন করে আর তাকে পাওয়া যায়নি। স্বগতোক্তি করে বলেন, এলিনার আরও কয়েকদিন পর যাওয়ার কথা ছিল। কেন যে সে গেল।

অন্যদিকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমিরও। সৌমি রাজধানী ঢাকার ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক থেকে ফার্মেসীতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরির চেষ্টা করছিলেন। তার দাদা শাওন চৌধুরীর সাথে ঢাকায় থাকতেন। সৌমির মামাতো ভাই তুর্য দত্ত জানান, বেনাপোল ট্রেনে সৌমি ঢাকায় দাদার কাছে যাচ্ছিল। রাতে তারা খবর পান ট্রেনে আগুন দিয়েছে কারা যেন। সৌমিকে পাওয়া যাচ্ছে না।  এখন পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। সৌমির মা স্কুল শিক্ষিকা ইতি রানী পাগল প্রায় অবস্থায় মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

অপর নিখোঁজ যুবক তাসলাম তার বড় ভাই আবু তালহার সাথে একই ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছিলেন দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে। আগুনে দগ্ধাবস্থায় আবু তালহা ট্রেন থেকে নামতে পারলেও বের হতে পারেননি তাসলাম। আবু তালহা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। নিখোঁজ তাসলামের বাবা হক মন্ডল ভোর ৪টায় খবর পেয়ে ঢাকা ছুটে গেছেন। হন্যে হয়ে খুঁজছেন তার ছেলেকে।

রাজবাড়ী স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত জানান, বেনাপোল ট্রেনটিতে রাজবাড়ী স্টেশন থেকে ৫০ জনের  মত যাত্রী উঠেছিল। ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিন দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া খুলনা থেকে ঢাকাগামী নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনটিও তিন দিন বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

ট্রেনের আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বপ্ন

এলিনা সৌমি ও তাসলামের ছবি এখন শুধুই স্মৃতি

প্রকাশের সময় : ০৮:২৬:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪

আগুন কেড়ে নিয়েছে সাজ্জাদ-এলিনার সুখের সংসার। স্ত্রী এলিনাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সাজ্জাদ হোসেন। নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমীন রাজবাড়ী শহরের লক্ষীকোল গ্রামের মৃত সাইদুর রহমান বাবুর মেয়ে। স্বামী সাজ্জাদ হোসেন চপলের চাকরিসূত্রে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন তারা। বাবার মৃত্যুতে এলিনা তার ছয় মাসের ছেলে আরফানকে নিয়ে এসেছিলেন রাজবাড়ীতে। ফেরার সময় বেনাপোল ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিখোঁজ তিনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শনিবার দুপুর ৩টা) এলিনার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই খবরটি এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি এলিনার বৃদ্ধা মা হোসনেআরাকে। এদিকে খোঁজ মিলছে না রাজবাড়ীর আরও দজুনের। তারা হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের চিত্তরঞ্জন চৌধুরীর মেয়ে চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমি ও রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের শিকজান গ্রামের হক মন্ডলের ছেলে তাসলাম (২০)।

শনিবার দুপুরে লক্ষীকোল গ্রামে এলিনাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলিনার স্বজনরা বসে আছে। শুনশান নীরবতা। কারও চোখে পানি। এসময় কথা হয় এলিনার মামাতো ভাই গাজী পলাশের সাথে। জানালেন, গত ২৭ ডিসেম্বর এলিনার বাবা মারা যান। সেকারণেই তিনি ঢাকা থেকে ছয় মাসের ছেলে আরফানকে সাথে করে বাবার বাড়ি এসেছিলেন। সন্ধ্যা ৬টায় রাজবাড়ী স্টেশন থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা ফিরছিলেন। তাদের সাথে ফুফাতো বোন ডেইজি আক্তার রতœা, রতœার স্বামী ইকবাল বাহার খান, দুই ছেলে দিহান(১২) ও রেহান (৬) ছিল। সবাই বের হতে পারলেও এলিনা বের হতে পারেনি। তিনি আরও জানান, তার ফুফু স্বামীর মৃত্যুশোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মেয়ের এই খবরটি তারা জানাবেন কেমন করে। এজন্য তাকে বলা হয়েছে এলিনা হাসপাতালে ভর্তি। তার ফুফুকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ছয় মাসের ছেলে আরফানকে নিয়ে এলিনা ও সাজ্জাদের সুখের সংসার ছিল। কখনও কোনো সমস্যা হয়নি। এলিনা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার স্বামী সাজ্জাদ নির্বাক হয়ে গেছেন। স্ত্রী শোকে পাগল প্রায় সে।

বাড়ির এক কোণে বসে কাঁদছিলেন এলিনার চাচা কলিবর রহমান। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তিনি সন্ধ্যায় এলিনাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসেন। আমার ভাতিজি খুব ভালো ও পরোপাকারী ছিল। সবাইকে আগে নিরাপদে বের করে দিয়ে নিজে মারা গেছে বলে ধারণা তার। যখন আগুনে পুড়ছিল তখন এলিনা তার স্বামী সাজ্জাদকে ফোন করে বলেছিল আমি পুড়ে যাচ্ছি। খুব খারাপ অবস্থায় আছি। এর এক মিনিট পর ফোন করে আর তাকে পাওয়া যায়নি। স্বগতোক্তি করে বলেন, এলিনার আরও কয়েকদিন পর যাওয়ার কথা ছিল। কেন যে সে গেল।

অন্যদিকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমিরও। সৌমি রাজধানী ঢাকার ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক থেকে ফার্মেসীতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরির চেষ্টা করছিলেন। তার দাদা শাওন চৌধুরীর সাথে ঢাকায় থাকতেন। সৌমির মামাতো ভাই তুর্য দত্ত জানান, বেনাপোল ট্রেনে সৌমি ঢাকায় দাদার কাছে যাচ্ছিল। রাতে তারা খবর পান ট্রেনে আগুন দিয়েছে কারা যেন। সৌমিকে পাওয়া যাচ্ছে না।  এখন পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। সৌমির মা স্কুল শিক্ষিকা ইতি রানী পাগল প্রায় অবস্থায় মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

অপর নিখোঁজ যুবক তাসলাম তার বড় ভাই আবু তালহার সাথে একই ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছিলেন দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে। আগুনে দগ্ধাবস্থায় আবু তালহা ট্রেন থেকে নামতে পারলেও বের হতে পারেননি তাসলাম। আবু তালহা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। নিখোঁজ তাসলামের বাবা হক মন্ডল ভোর ৪টায় খবর পেয়ে ঢাকা ছুটে গেছেন। হন্যে হয়ে খুঁজছেন তার ছেলেকে।

রাজবাড়ী স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত জানান, বেনাপোল ট্রেনটিতে রাজবাড়ী স্টেশন থেকে ৫০ জনের  মত যাত্রী উঠেছিল। ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিন দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া খুলনা থেকে ঢাকাগামী নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনটিও তিন দিন বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।