Dhaka ০৮:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তারুণ্যের হাতে নতুন বাংলাদেশ

ওসমান গনি
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 49

তরুণ সমাজ একটি দেশের সম্পদ। বর্তমানে দেশের তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। যে দেশের তরুণরা স্বপ্ন দেখতে পারে, শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার দুর্বার সাহস দেখে, সে দেশ উন্নতির সোপানে দ্রুত অগ্রসর হতে সক্ষম। কিন্তু তরুণদের স্বপ্ন ও উদ্যমকে অবহেলা করে যদি সামনে এগোনোর চিন্তা করা হয়, তাহলে সে অগ্রযাত্রা একসময় ভেস্তে যায়। তাই তরুণ জনসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।

এজন্য তরুণরা যেন দেশের উন্নতিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে পারে, সে রকম পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। একটি দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর সে দেশের ভবিষ্যৎ অনেকাংশেই নির্ভর করে। কারণ তারাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে। তাই দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এসব তরুণ প্রজন্মের সঠিক সামাজিকীকরণ নিশ্চিত সমান গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকীকরণ বিশ্লেষণ করলে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাই যেমন: পরিবার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ধর্ম, বিনোদন মাধ্যম ইত্যাদি। তবে আতঙ্কের বিষয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের সামাজিকীকরণ ও প্রতিদিনকার জীবনে যে ভুল বার্তা, অপূর্ণ অনুভূতি ও বাস্তবতা বিবর্জিত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাচ্ছে তা মানুষ হিসেবে ক্রমে আমাদের অসামাজিক করে তুলছে। সামাজিকীকরণের আড়ালে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হয়তো আমাদের জীবনকে গতিশীল করে তুলছে, অপরদিকে বাধা তৈরি করছে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে। তাই তরুণ প্রজন্মকে বাস্তবমুখী করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এখনই। আশা রাখি তারুণ্যের দীপ্তদৃষ্টি শুধু মোবাইল ফোনে নয়, ছড়িয়ে পড়ুক পুরো বাংলাদেশে। তারুণ্যের আলোয় আরও একবার আলোকিত হোক বাংলাদেশ। সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে পারে।

দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ ৩৫ বছরের কম যারা তরুণ এবং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সুযোগ প্রদান করা উচিত। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং টেকসই উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তাদের সমালোচনামূলক চিন্তা, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাথে তরুণ প্রজন্মের পরিচিতি তাদের প্রযুক্তি-চালিত বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সহায়ক। সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা যুব নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে, যেখানে ঐতিহ্যগত পন্থাগুলো উন্নয়নের জন্য অন্তরায় এবং ধীরগতির, সেখানে তরুণ প্রজন্মের দ্বারা নতুন ধারণা গতিশীলতা প্রদান করে। প্রযুক্তি, ব্যবসা বা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেই হোক না কেন, তরুণ নেতারা সবসময়ই স্মার্ট সমাধানগুলো গ্রহণ করে।

তারুণ্যই শক্তি- কথাটি তখনই পূর্ণতা পায় যখন কোনো সমাজের তরুণরা চিন্তাভাবনায় সত্যিকারের তরুণ হয়। তারা কখনোই নিজেদের তরুণ বলে পরিচয় দিতে পারে না, যাদের সম্পর্কে কাজী নজরুল বলেছিলেন,তাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধ্যকের কঙ্কাল মূর্তি। একজন তরুণ হিসেবে এমন এক সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে- যেখানে দেশের খেটেখাওয়া মানুষ তাদের ন্যায্যমূল্য পাবে, যেখানে কারও বাক স্বাধীনতাকে হরণ করা হবে না, যেখানে মানুষ নিজের ভোটের অধিকার স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক্সারসাইজ করতে পারবে। এমন এক সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে সবার শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। যেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে তার বৈধ সিটের জন্য কারও তাঁবেদারি করতে হবে না। যে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্বের পরিচয় দিতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করবে না, এমন বাংলাদেশের স্বপ্নেই বিভোর তরুণ সমাজ।

তরুণরা প্রতিটি জাতির সবচেয়ে বড় মানবসম্পদ। তাদের আলোতেই সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠছে বিশ্বের কাছে অতিপ্রিয়। তরুণরাই বদলে দেবে আগামীর বিশ্ব তথা বাংলাদেশ। তাদের সৃজনশীল চিন্তাধারা এগিয়ে নেবে বাংলাদেশকে। তরুণদের মধ্যে আছে অজেয়কে জয় করার প্রত্যাশা। তারা স্বপ্ন দেখবে, স্বপ্ন দেখাবে, স্বপ্নের সমান হবে আর এক সময় স্বপ্নকে অতিক্রম করে গড়ে তুলবে বাংলাদেশকে। পৃথিবীর একটি স্বর্গ আমাদের বাংলাদেশ! এই বাংলাদেশকে নিয়ে তরুণদের অপার স্বপ্ন। তরুণ সমাজকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তরুণদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে তরুণ সমাজের মেধা ও সৃজনশীলতা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ; এই চারটি ক্ষেত্রে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখতে তরুণ সমাজকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

তরুণরা সমাজের সমৃদ্ধি চাই জ্ঞানভিত্তিক গুণগত শিক্ষা ও অনুকূল পরিবেশ। তরুণ সমাজ হচ্ছে প্রবল প্রাণশক্তি, অফুরন্ত সম্ভাবনা ও হাজারও স্বপ্নের সমষ্টি। তাদের সৃজনী শক্তির বিকাশের জন্য চাই একটি অনুকূল পরিবেশ ও জ্ঞানভিত্তিক গুণগত শিক্ষা। গুণগত শিক্ষা ও সুষ্ঠু পরিবেশ তাদের জ্ঞানপিপাসু করে তুলবে। জ্ঞানপিপাসা তরুণদের অন্তরকে আলোকিত করবে, তারা হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসী ও কর্মোদ্যোগী। প্রতিটি তরুণের মধ্যে জেগে উঠবে একটি নৈতিক জীবন ও সমৃদ্ধশীল দেশ গড়ে তোলার স্পৃহা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ভালো নেই। তাদের মধ্যে হতাশা ও ঘাটতি প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়। গুণগত শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার অভাব, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেকারত্ব প্রভৃতি সমস্যা এই তরুণ সমাজকে আকড়ে ধরে রেখেছে। ছাত্ররাজনীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে অনেক তরুণ বিপথগামী হয়। একটি উন্নয়নকামী সভ্য দেশের মধ্যে এরূপ অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। বাংলাদেশের তরুণদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের তরুণরা মেধাবী ও কর্মঠ। খুব দ্রম্নতই শিখতে ও মানিয়ে নিতে পারে তারা। দেশ-বিদেশে সব জায়গায় তার প্রমাণও দিচ্ছে তারা। রাষ্ট্র যদি এদিকে নজর দেয় তাহলে আমাদের তরুণ সমাজ আরও দ্বিগুণভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে। তরুণদের প্রথমেই শিক্ষা অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। সমাজকে বদলে দিতে পারে, মূলোৎপাটন করতে পারে সব ধরনের কুসংস্কারের। শিক্ষাজীবন থেকেই একজন তরুণ সততা এবং নৈতিক গুণাবলি অর্জন করতে সক্ষম হবে। তরুণ ভালোবাসবে নিজেকে, নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশকে

সময়টা যে খুব বেশি ভালো যাচ্ছে তা কিন্তু নয়! পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় বিভিন্ন অপরাধের সবিস্তার বর্ণনা ফলাও করে প্রচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অপরাধ তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। হানাহানি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপৃত চারদিক। সমাজের এ অবস্থা বদলাতে তরুণ ও যুবসমাজকে বিশেষ করে শিক্ষিত এবং যারা সৎ তাদের এগিয়ে আসতে হবে। যারা নৈতিক ও সততায় অগ্রগামী হবে। মানুষের উপকারে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে। সাহসী হয়ে সব মন্দের শেকড় উপড়াবে। এ জন্য তরুণদের প্রথমেই শিক্ষা অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। তাছাড়া এমনিতে শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সমাজ ও রাষ্ট্রে শিক্ষিত লোক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ সমাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তারা সমাজকে বদলে দিতে পারে। মূলোৎপাটন করতে পারে সব ধরনের কুসংস্কারের। পাঠ্যপুস্তকগুলোয় তরুণদের চরিত্র ও জীবন গঠনে নীতিমূলক পাঠ সংযোজন করা দরকার। ফলে শিক্ষাজীবন থেকেই একজন তরুণ সততা এবং নৈতিক গুণাবলি অর্জন করতে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তনে তরুণদের ভূমিকা একটি বহুমুখী, গতিশীল শক্তি- যা আমাদের সম্মিলিত অস্তিত্বের প্রতিটি দিককে পরিব্যাপ্ত করে। তাদের প্রভাব নিছক বিদ্রোহের বাইরেও প্রসারিত- এটি উদ্ভাবন, সক্রিয়তা ও একটি উন্নত ভবিষ্যতের নিরলস সাধনাকে অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা যখন দ্রুত বিকশিত বিশ্বের জটিলতাগুলোকে নেভিগেট করি, তখন তরুণদের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ব্যবহার করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। শিক্ষার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা, সৃজনশীলতাকে লালন করে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের কণ্ঠস্বরকে একীভূত করা এমন একটি সমাজকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ- যা শুধু যুবকদের দ্বারা গঠিত নয় বরং তাদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষাও অন্তর্ভুক্ত।

দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, কিছু সমাজসেবী মানুষের সহযোগিতায় দেশের প্রান্তে প্রান্তে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করছে। তারা দেশের সংকটময় মুহূর্তে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া তরুণরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজ ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে অর্থ সংগ্রহ করাসহ নানামুখী জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। তারুণ্যের হাত ধরেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে নিয়েই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

(মত-দ্বিমত এ প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব মতামত। এর জন্য জনতার আদালত কোনোভাবেই দায়বদ্ধ নয়।)

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

তারুণ্যের হাতে নতুন বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১১:৫৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

তরুণ সমাজ একটি দেশের সম্পদ। বর্তমানে দেশের তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। যে দেশের তরুণরা স্বপ্ন দেখতে পারে, শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার দুর্বার সাহস দেখে, সে দেশ উন্নতির সোপানে দ্রুত অগ্রসর হতে সক্ষম। কিন্তু তরুণদের স্বপ্ন ও উদ্যমকে অবহেলা করে যদি সামনে এগোনোর চিন্তা করা হয়, তাহলে সে অগ্রযাত্রা একসময় ভেস্তে যায়। তাই তরুণ জনসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।

এজন্য তরুণরা যেন দেশের উন্নতিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে পারে, সে রকম পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। একটি দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর সে দেশের ভবিষ্যৎ অনেকাংশেই নির্ভর করে। কারণ তারাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে। তাই দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এসব তরুণ প্রজন্মের সঠিক সামাজিকীকরণ নিশ্চিত সমান গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকীকরণ বিশ্লেষণ করলে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাই যেমন: পরিবার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ধর্ম, বিনোদন মাধ্যম ইত্যাদি। তবে আতঙ্কের বিষয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের সামাজিকীকরণ ও প্রতিদিনকার জীবনে যে ভুল বার্তা, অপূর্ণ অনুভূতি ও বাস্তবতা বিবর্জিত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাচ্ছে তা মানুষ হিসেবে ক্রমে আমাদের অসামাজিক করে তুলছে। সামাজিকীকরণের আড়ালে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হয়তো আমাদের জীবনকে গতিশীল করে তুলছে, অপরদিকে বাধা তৈরি করছে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে। তাই তরুণ প্রজন্মকে বাস্তবমুখী করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এখনই। আশা রাখি তারুণ্যের দীপ্তদৃষ্টি শুধু মোবাইল ফোনে নয়, ছড়িয়ে পড়ুক পুরো বাংলাদেশে। তারুণ্যের আলোয় আরও একবার আলোকিত হোক বাংলাদেশ। সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে পারে।

দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ ৩৫ বছরের কম যারা তরুণ এবং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সুযোগ প্রদান করা উচিত। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং টেকসই উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তাদের সমালোচনামূলক চিন্তা, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাথে তরুণ প্রজন্মের পরিচিতি তাদের প্রযুক্তি-চালিত বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সহায়ক। সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা যুব নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে, যেখানে ঐতিহ্যগত পন্থাগুলো উন্নয়নের জন্য অন্তরায় এবং ধীরগতির, সেখানে তরুণ প্রজন্মের দ্বারা নতুন ধারণা গতিশীলতা প্রদান করে। প্রযুক্তি, ব্যবসা বা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেই হোক না কেন, তরুণ নেতারা সবসময়ই স্মার্ট সমাধানগুলো গ্রহণ করে।

তারুণ্যই শক্তি- কথাটি তখনই পূর্ণতা পায় যখন কোনো সমাজের তরুণরা চিন্তাভাবনায় সত্যিকারের তরুণ হয়। তারা কখনোই নিজেদের তরুণ বলে পরিচয় দিতে পারে না, যাদের সম্পর্কে কাজী নজরুল বলেছিলেন,তাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধ্যকের কঙ্কাল মূর্তি। একজন তরুণ হিসেবে এমন এক সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে- যেখানে দেশের খেটেখাওয়া মানুষ তাদের ন্যায্যমূল্য পাবে, যেখানে কারও বাক স্বাধীনতাকে হরণ করা হবে না, যেখানে মানুষ নিজের ভোটের অধিকার স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক্সারসাইজ করতে পারবে। এমন এক সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে সবার শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। যেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে তার বৈধ সিটের জন্য কারও তাঁবেদারি করতে হবে না। যে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্বের পরিচয় দিতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করবে না, এমন বাংলাদেশের স্বপ্নেই বিভোর তরুণ সমাজ।

তরুণরা প্রতিটি জাতির সবচেয়ে বড় মানবসম্পদ। তাদের আলোতেই সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠছে বিশ্বের কাছে অতিপ্রিয়। তরুণরাই বদলে দেবে আগামীর বিশ্ব তথা বাংলাদেশ। তাদের সৃজনশীল চিন্তাধারা এগিয়ে নেবে বাংলাদেশকে। তরুণদের মধ্যে আছে অজেয়কে জয় করার প্রত্যাশা। তারা স্বপ্ন দেখবে, স্বপ্ন দেখাবে, স্বপ্নের সমান হবে আর এক সময় স্বপ্নকে অতিক্রম করে গড়ে তুলবে বাংলাদেশকে। পৃথিবীর একটি স্বর্গ আমাদের বাংলাদেশ! এই বাংলাদেশকে নিয়ে তরুণদের অপার স্বপ্ন। তরুণ সমাজকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তরুণদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে তরুণ সমাজের মেধা ও সৃজনশীলতা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ; এই চারটি ক্ষেত্রে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখতে তরুণ সমাজকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

তরুণরা সমাজের সমৃদ্ধি চাই জ্ঞানভিত্তিক গুণগত শিক্ষা ও অনুকূল পরিবেশ। তরুণ সমাজ হচ্ছে প্রবল প্রাণশক্তি, অফুরন্ত সম্ভাবনা ও হাজারও স্বপ্নের সমষ্টি। তাদের সৃজনী শক্তির বিকাশের জন্য চাই একটি অনুকূল পরিবেশ ও জ্ঞানভিত্তিক গুণগত শিক্ষা। গুণগত শিক্ষা ও সুষ্ঠু পরিবেশ তাদের জ্ঞানপিপাসু করে তুলবে। জ্ঞানপিপাসা তরুণদের অন্তরকে আলোকিত করবে, তারা হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসী ও কর্মোদ্যোগী। প্রতিটি তরুণের মধ্যে জেগে উঠবে একটি নৈতিক জীবন ও সমৃদ্ধশীল দেশ গড়ে তোলার স্পৃহা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ভালো নেই। তাদের মধ্যে হতাশা ও ঘাটতি প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়। গুণগত শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার অভাব, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেকারত্ব প্রভৃতি সমস্যা এই তরুণ সমাজকে আকড়ে ধরে রেখেছে। ছাত্ররাজনীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে অনেক তরুণ বিপথগামী হয়। একটি উন্নয়নকামী সভ্য দেশের মধ্যে এরূপ অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। বাংলাদেশের তরুণদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের তরুণরা মেধাবী ও কর্মঠ। খুব দ্রম্নতই শিখতে ও মানিয়ে নিতে পারে তারা। দেশ-বিদেশে সব জায়গায় তার প্রমাণও দিচ্ছে তারা। রাষ্ট্র যদি এদিকে নজর দেয় তাহলে আমাদের তরুণ সমাজ আরও দ্বিগুণভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে। তরুণদের প্রথমেই শিক্ষা অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। সমাজকে বদলে দিতে পারে, মূলোৎপাটন করতে পারে সব ধরনের কুসংস্কারের। শিক্ষাজীবন থেকেই একজন তরুণ সততা এবং নৈতিক গুণাবলি অর্জন করতে সক্ষম হবে। তরুণ ভালোবাসবে নিজেকে, নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশকে

সময়টা যে খুব বেশি ভালো যাচ্ছে তা কিন্তু নয়! পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় বিভিন্ন অপরাধের সবিস্তার বর্ণনা ফলাও করে প্রচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অপরাধ তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। হানাহানি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপৃত চারদিক। সমাজের এ অবস্থা বদলাতে তরুণ ও যুবসমাজকে বিশেষ করে শিক্ষিত এবং যারা সৎ তাদের এগিয়ে আসতে হবে। যারা নৈতিক ও সততায় অগ্রগামী হবে। মানুষের উপকারে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে। সাহসী হয়ে সব মন্দের শেকড় উপড়াবে। এ জন্য তরুণদের প্রথমেই শিক্ষা অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। তাছাড়া এমনিতে শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সমাজ ও রাষ্ট্রে শিক্ষিত লোক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ সমাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তারা সমাজকে বদলে দিতে পারে। মূলোৎপাটন করতে পারে সব ধরনের কুসংস্কারের। পাঠ্যপুস্তকগুলোয় তরুণদের চরিত্র ও জীবন গঠনে নীতিমূলক পাঠ সংযোজন করা দরকার। ফলে শিক্ষাজীবন থেকেই একজন তরুণ সততা এবং নৈতিক গুণাবলি অর্জন করতে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তনে তরুণদের ভূমিকা একটি বহুমুখী, গতিশীল শক্তি- যা আমাদের সম্মিলিত অস্তিত্বের প্রতিটি দিককে পরিব্যাপ্ত করে। তাদের প্রভাব নিছক বিদ্রোহের বাইরেও প্রসারিত- এটি উদ্ভাবন, সক্রিয়তা ও একটি উন্নত ভবিষ্যতের নিরলস সাধনাকে অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা যখন দ্রুত বিকশিত বিশ্বের জটিলতাগুলোকে নেভিগেট করি, তখন তরুণদের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ব্যবহার করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। শিক্ষার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা, সৃজনশীলতাকে লালন করে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের কণ্ঠস্বরকে একীভূত করা এমন একটি সমাজকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ- যা শুধু যুবকদের দ্বারা গঠিত নয় বরং তাদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষাও অন্তর্ভুক্ত।

দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, কিছু সমাজসেবী মানুষের সহযোগিতায় দেশের প্রান্তে প্রান্তে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করছে। তারা দেশের সংকটময় মুহূর্তে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া তরুণরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজ ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে অর্থ সংগ্রহ করাসহ নানামুখী জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। তারুণ্যের হাত ধরেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে নিয়েই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

(মত-দ্বিমত এ প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব মতামত। এর জন্য জনতার আদালত কোনোভাবেই দায়বদ্ধ নয়।)