Dhaka ০৮:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

টমেটোর ন্যায্যমূল্য চান কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৯:১০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ১০৯০ জন সংবাদটি পড়েছেন

মৌসুমের প্রথম দিকে রাজবাড়ীর কৃষকরা টমেটোর দাম ভালো পেলেও বর্তমান বাজার মূল্য অনেক কমে গেছে। যেকারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন টমেটো চাষীরা। তাই তারা ন্যায্যমূল্য চাইছেন।

জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলায় টমেটোর আবাদ বরাবরই ভালো হয়। পদ্মা নদীর চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় আবাদ হয় টমেটো। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে টমেটো ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। এছাড়া এখন দামও অনেক কম।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় ৬১৬ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় একশ হেক্টর কম। গত বছর গত বছর ৭১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল টমেটোর। সাধারণতঃ হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২২ মণ টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। আগামী বাংলা ফাল্গুন/চৈত্র মাসে হিসাব করা হলে বোঝা যাবে ফলন কেমন হয়েছে।

সদর উপজেলার উড়াকান্দা এলাকায়  সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন  জাতের টমেটোর আবাদ করেছেন চাষীরা। মাঠ জুড়ে শুধু টমেটোর ক্ষেত। টমেটো গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে কাচা পাকা টমেটো। কৃষক ও কৃষাণীরা জমি থেকে পাকা টমেটো তুলছেন। সেই টমেটো বিক্রির জন্য পাটের বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করছেন।

কৃষকদের হিসাবে বিঘা প্রতি সাধারণত ফলন হয় দেড়শ থেকে দুশ মণ। এই এলাকার কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে চরের জমিতে টমেটো আবাদ করছেন।

উড়াকান্দা এলাকার কৃষক মান্নান শেখ জানান, তিনি অন্যের জমি লিজ নিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। গতবছর বিঘা প্রতি দুইশ মণ টমেটো পেয়েছিলেন। দামও ভালো ছিলো। এবছর পেয়েছেন একশ মণ। আবার দামও কম। যেকারণে লোকসান হতে পারে। লোকসানে পুষাতে তিনি ন্যায্যমূল্য দাবি করেন।

একই এলাকার কৃষক বশিরউদ্দিন জানান, বীজ চারা রোপণ সেচ চাষ কীটনাশক প্রয়োগ শ্রমিকের মজুরিসহ এক বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। মৌসুমের শুরুতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছেন। এখন দাম কমে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি হয়েছে। এই দামে বিক্রি করলে তাদের খরচ উঠবে না।

মোহাম্মদ সিদ্দিক শেখ জানান, এবছর টমেটো রোপণের সময় ঝড়ের কারণে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। এছাড়া ঘন কুয়াশায় ফলন আরও কমে গেছে। এখন বাজারে টমেটোর দাম কম। তাদের যা খরচ হয়েছে তা তোলা নিয়ে সংশয়ে আছেন।

মঙ্গলবার রাজবাড়ী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকদের আনা টমেটো আড়তদাররা প্রকার ভেদে ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। বিক্রির উপর কেজি প্রতি এক টাকা কমিশন দিতে হয় আড়তদারদের। অর্থ্যাৎ ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে আড়তদারদের কাছ থেকে কৃষক পাবেন ১১ টাকা।

কৃষকদের হিসাবে প্রতি বিঘা জমিতে একশ মণ টমেটো উৎপাদন হলে বর্তমান বাজার মূল্যে তারা বিক্রি করতে পারবেন ৪৪ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি তাদের খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে বিঘা প্রতি তাদের লাভ হবে মাত্র ৯ হাজার টাকা। আর অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে বিঘা প্রতি খরচ ৭০ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গেলাম রাসুল জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে টমেটো রোপণ দেরিতে হয়েছে। যে কারণে কৃষক ফলন কিছু কম পাচ্ছে। তবে তা আহামরি নয়। কৃষক পর্যায়ে টমেটোর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি হলে ভালো হয়। তারপরও বাজারে টমেটোর দাম সন্তোষজনক রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

টমেটোর ন্যায্যমূল্য চান কৃষক

প্রকাশের সময় : ০৯:১০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মৌসুমের প্রথম দিকে রাজবাড়ীর কৃষকরা টমেটোর দাম ভালো পেলেও বর্তমান বাজার মূল্য অনেক কমে গেছে। যেকারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন টমেটো চাষীরা। তাই তারা ন্যায্যমূল্য চাইছেন।

জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলায় টমেটোর আবাদ বরাবরই ভালো হয়। পদ্মা নদীর চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় আবাদ হয় টমেটো। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে টমেটো ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। এছাড়া এখন দামও অনেক কম।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় ৬১৬ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় একশ হেক্টর কম। গত বছর গত বছর ৭১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল টমেটোর। সাধারণতঃ হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২২ মণ টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। আগামী বাংলা ফাল্গুন/চৈত্র মাসে হিসাব করা হলে বোঝা যাবে ফলন কেমন হয়েছে।

সদর উপজেলার উড়াকান্দা এলাকায়  সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন  জাতের টমেটোর আবাদ করেছেন চাষীরা। মাঠ জুড়ে শুধু টমেটোর ক্ষেত। টমেটো গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে কাচা পাকা টমেটো। কৃষক ও কৃষাণীরা জমি থেকে পাকা টমেটো তুলছেন। সেই টমেটো বিক্রির জন্য পাটের বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করছেন।

কৃষকদের হিসাবে বিঘা প্রতি সাধারণত ফলন হয় দেড়শ থেকে দুশ মণ। এই এলাকার কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে চরের জমিতে টমেটো আবাদ করছেন।

উড়াকান্দা এলাকার কৃষক মান্নান শেখ জানান, তিনি অন্যের জমি লিজ নিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। গতবছর বিঘা প্রতি দুইশ মণ টমেটো পেয়েছিলেন। দামও ভালো ছিলো। এবছর পেয়েছেন একশ মণ। আবার দামও কম। যেকারণে লোকসান হতে পারে। লোকসানে পুষাতে তিনি ন্যায্যমূল্য দাবি করেন।

একই এলাকার কৃষক বশিরউদ্দিন জানান, বীজ চারা রোপণ সেচ চাষ কীটনাশক প্রয়োগ শ্রমিকের মজুরিসহ এক বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। মৌসুমের শুরুতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছেন। এখন দাম কমে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি হয়েছে। এই দামে বিক্রি করলে তাদের খরচ উঠবে না।

মোহাম্মদ সিদ্দিক শেখ জানান, এবছর টমেটো রোপণের সময় ঝড়ের কারণে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। এছাড়া ঘন কুয়াশায় ফলন আরও কমে গেছে। এখন বাজারে টমেটোর দাম কম। তাদের যা খরচ হয়েছে তা তোলা নিয়ে সংশয়ে আছেন।

মঙ্গলবার রাজবাড়ী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকদের আনা টমেটো আড়তদাররা প্রকার ভেদে ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। বিক্রির উপর কেজি প্রতি এক টাকা কমিশন দিতে হয় আড়তদারদের। অর্থ্যাৎ ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে আড়তদারদের কাছ থেকে কৃষক পাবেন ১১ টাকা।

কৃষকদের হিসাবে প্রতি বিঘা জমিতে একশ মণ টমেটো উৎপাদন হলে বর্তমান বাজার মূল্যে তারা বিক্রি করতে পারবেন ৪৪ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি তাদের খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে বিঘা প্রতি তাদের লাভ হবে মাত্র ৯ হাজার টাকা। আর অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে বিঘা প্রতি খরচ ৭০ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গেলাম রাসুল জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে টমেটো রোপণ দেরিতে হয়েছে। যে কারণে কৃষক ফলন কিছু কম পাচ্ছে। তবে তা আহামরি নয়। কৃষক পর্যায়ে টমেটোর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি হলে ভালো হয়। তারপরও বাজারে টমেটোর দাম সন্তোষজনক রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।