Dhaka ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্লাটফর্ম ও ট্রেনে অবাধে চলে ধূমপান

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১১১০ জন সংবাদটি পড়েছেন

পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও রেলওয়ে প্লাটফর্ম এমনকি ট্রেনের ভেতরেও চলছে অবাধে ধূমপান। এক শ্রেণির যাত্রী আইনের তোয়াক্কা না করে সহযাত্রীদের সুবিধা অসুবিধার কথা না ভেবে ধূমপান চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে ধূমপানকারীর পাশে থাকা ব্যক্তিরও সমান ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ক্ষতি হচ্ছে বেশি।

 রেল সূত্র জানায়, রাজবাড়ী রেল স্টেশন থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, ভাঙ্গা, ভাটিয়াপাড়া, পোড়াদহ, রাজশাহী ও খুলনা অভিমুখে মোট ১১ বার ট্রেন ছেড়ে যায়। প্রতিটি ট্রেনই খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনটিতে যাত্রীদের ভিড় থাকে বেশি। এই ট্রেনটি সকাল ১০টায় রাজবাড়ী স্টেশনে এসে গোয়ালন্দ ঘাটের উদ্দেশ্যে যায়। একই ট্রেন দুপুর ২টায় রাজবাড়ী আসে। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে ছেড়ে যায় খুলনার উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি সরেজমিনে রাজবাড়ী রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে মেইল ট্রেনের অপেক্ষায় রয়েছে যাত্রীরা। যাদের মধ্যে অনেক নারী শিশুও রয়েছেন। এসময় প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কয়েকজন যাত্রীকে ধূমপান করতে দেখা গেছে। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষেধ সত্বেও কেন এটা করছেন জানতে চাইলে একজন ধূমপায়ী জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আর করলে অসুবিধা কী?

ট্রেনের ভেতরেও অনেক যাত্রীকে ধূমপান করতে দেখা গেছে। কিছু যাত্রীকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ধূমপান করতে দেখা যায়। আবার অনেক যাত্রী সিটে বসেই ধূমপান করে। যদি কখনও পাশে থাকা যাত্রী তাকে ধূমপান করতে নিষেধ করে তাহলে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে যায়।

রাজবাড়ী থেকে ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা বিলকিস। তিনি জানান, মাঝে মধ্যেই তিনি প্লাটফর্মে এমনকি ট্রেনের ভেতরেও যাত্রীদের ধূমপান করতে দেখেন। তাদের বলেও কোনো লাভ হয়না। কাপড়ে মুখ ঢেকে ধোঁয়া থেকে রক্ষা নিজেদের রক্ষা করেন।

২০০৫ সালে সরকার প্রথম ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে। এরপর ২০১৩ সালে সংশোধিত ও ২০১৫ সালে আইনের বিধান অনুসারে বিধিমালা তৈরি হয়। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় হরহামেশায় মানুষ অবাধে ধূমপান করে চলেছে পাবলিক প্লেসে।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় দত্ত জানান, মাঝে মধ্যে তারা এবিষয়ে নজরদারি করেন। যতক্ষণ সম্ভব হয় প্লাটফর্মে মানুষকে ধূমপান করা থেকে বিরত রাখেন। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের তিনটি প্লাটফর্ম। প্রতিটিই অনেক বড়। যেকারণে সব সময় নজরদারি করা সম্ভব হয়না। এবিষয়ে জিআরপি পুলিশ ও আরএনবি একটু তৎপর হলে ভালো হয়। পাবলিক প্লেস বিশেষ করে স্টেশন ও ট্রেনে যাতে যাত্রীরা ধূমপান না করে এজন্য প্রচারাভিযান চালানো হবে। এর আগে কয়েকবার প্লাটফর্মে ধূমপানের কারণে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ী জিআরপি থানার ওসি সোমনাথ বসু জানান, একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। যাদের অনেকেই ধূমপান আইন সম্পর্কে জানে না। না জেনেই অনেকে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে। এটি বন্ধ করতে তারা তৎপর রয়েছেন।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহীম হোসেন টিটন বলেন, যিনি ধূমপান করেন তার যতটুকু ক্ষতি হয় তার পাশের জনেরও সমান ক্ষতি হয়। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষতি আরও বেশি হয়। কারণ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। একারণে পাবলিক প্লেসে ধূমপান একেবারেই বন্ধ করা উচিৎ।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান জানান, পাবলিক প্লেসে ধূমপানে তাদের করণীয় তেমন কিছু নেই। তবে তারা মানুষকে সচেতন করতে পারেন। যেটি তারা নিয়মিতই করছেন।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

প্লাটফর্ম ও ট্রেনে অবাধে চলে ধূমপান

প্রকাশের সময় : ০৮:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩

পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও রেলওয়ে প্লাটফর্ম এমনকি ট্রেনের ভেতরেও চলছে অবাধে ধূমপান। এক শ্রেণির যাত্রী আইনের তোয়াক্কা না করে সহযাত্রীদের সুবিধা অসুবিধার কথা না ভেবে ধূমপান চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে ধূমপানকারীর পাশে থাকা ব্যক্তিরও সমান ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ক্ষতি হচ্ছে বেশি।

 রেল সূত্র জানায়, রাজবাড়ী রেল স্টেশন থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, ভাঙ্গা, ভাটিয়াপাড়া, পোড়াদহ, রাজশাহী ও খুলনা অভিমুখে মোট ১১ বার ট্রেন ছেড়ে যায়। প্রতিটি ট্রেনই খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনটিতে যাত্রীদের ভিড় থাকে বেশি। এই ট্রেনটি সকাল ১০টায় রাজবাড়ী স্টেশনে এসে গোয়ালন্দ ঘাটের উদ্দেশ্যে যায়। একই ট্রেন দুপুর ২টায় রাজবাড়ী আসে। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে ছেড়ে যায় খুলনার উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি সরেজমিনে রাজবাড়ী রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে মেইল ট্রেনের অপেক্ষায় রয়েছে যাত্রীরা। যাদের মধ্যে অনেক নারী শিশুও রয়েছেন। এসময় প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কয়েকজন যাত্রীকে ধূমপান করতে দেখা গেছে। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষেধ সত্বেও কেন এটা করছেন জানতে চাইলে একজন ধূমপায়ী জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আর করলে অসুবিধা কী?

ট্রেনের ভেতরেও অনেক যাত্রীকে ধূমপান করতে দেখা গেছে। কিছু যাত্রীকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ধূমপান করতে দেখা যায়। আবার অনেক যাত্রী সিটে বসেই ধূমপান করে। যদি কখনও পাশে থাকা যাত্রী তাকে ধূমপান করতে নিষেধ করে তাহলে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে যায়।

রাজবাড়ী থেকে ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা বিলকিস। তিনি জানান, মাঝে মধ্যেই তিনি প্লাটফর্মে এমনকি ট্রেনের ভেতরেও যাত্রীদের ধূমপান করতে দেখেন। তাদের বলেও কোনো লাভ হয়না। কাপড়ে মুখ ঢেকে ধোঁয়া থেকে রক্ষা নিজেদের রক্ষা করেন।

২০০৫ সালে সরকার প্রথম ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে। এরপর ২০১৩ সালে সংশোধিত ও ২০১৫ সালে আইনের বিধান অনুসারে বিধিমালা তৈরি হয়। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় হরহামেশায় মানুষ অবাধে ধূমপান করে চলেছে পাবলিক প্লেসে।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় দত্ত জানান, মাঝে মধ্যে তারা এবিষয়ে নজরদারি করেন। যতক্ষণ সম্ভব হয় প্লাটফর্মে মানুষকে ধূমপান করা থেকে বিরত রাখেন। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের তিনটি প্লাটফর্ম। প্রতিটিই অনেক বড়। যেকারণে সব সময় নজরদারি করা সম্ভব হয়না। এবিষয়ে জিআরপি পুলিশ ও আরএনবি একটু তৎপর হলে ভালো হয়। পাবলিক প্লেস বিশেষ করে স্টেশন ও ট্রেনে যাতে যাত্রীরা ধূমপান না করে এজন্য প্রচারাভিযান চালানো হবে। এর আগে কয়েকবার প্লাটফর্মে ধূমপানের কারণে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ী জিআরপি থানার ওসি সোমনাথ বসু জানান, একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। যাদের অনেকেই ধূমপান আইন সম্পর্কে জানে না। না জেনেই অনেকে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে। এটি বন্ধ করতে তারা তৎপর রয়েছেন।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহীম হোসেন টিটন বলেন, যিনি ধূমপান করেন তার যতটুকু ক্ষতি হয় তার পাশের জনেরও সমান ক্ষতি হয়। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষতি আরও বেশি হয়। কারণ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। একারণে পাবলিক প্লেসে ধূমপান একেবারেই বন্ধ করা উচিৎ।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান জানান, পাবলিক প্লেসে ধূমপানে তাদের করণীয় তেমন কিছু নেই। তবে তারা মানুষকে সচেতন করতে পারেন। যেটি তারা নিয়মিতই করছেন।