সীমানা প্রাচীর ভেঙে নারীসহ ৫ জনকে পিটিয়ে জখম ॥ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী শাখার সভাপতি সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি
- প্রকাশের সময় : ১০:২৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
- / ১২৩১ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ী পৌর এলাকার ভবানীপুর গ্রামের অলোকেন্দু মজুমদারের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে নারীসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইসকন রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কর্মকারের বিরুদ্ধে। তিনি শহরের বিনোদপুর কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা। হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে রাজবাড়ী সদর থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হয়েছে। এদিকে এঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি অ্যড. গণেশ নারায়ণ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কর্মকারকে কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে জানিয়েছে, ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। ইসকনের মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী অলোকেন্দু মজুমদার জানান, ভবানীপুর এলাকায় জয়দেব কর্মকারের নিজের জমি আছে। সেখানে সে হাউজিং প্লট করছে। ইসকন মন্দিরটিকে সে সামনে রেখে ব্যবহার করছে। ওই জমিতে যাওয়ার জন্য অনেক দিন ধরেই তার কাছে জমি কিনতে চাইছে। কিন্তু জমিটি নিয়ে মামলা থাকায় তা বিক্রির উপায় নেই। একথা তাকে বহুবার বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জয়দেব কর্মকারসহ ৩০/৩৫ জন লোক চাপাতি, দা, কুড়াল, লাঠি সোঠা নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এসময় বাধা দিতে গেলে তার বড় ভাই অমরেন্দু মজুমদার, সেঝ ভাই অমিতেন্দু মজুমদার, তার স্ত্রী সম্পা দত্ত, ভ্রাতৃবধূ মিতা মজুমদার এবং ছোট বোন অপর্ণা মজুমদারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। তারা সকলেই রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ইসকনের রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ থেকে সদ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত অভিযুক্ত জয়দেব কর্মকার বলেন, আমরা দুই বছর আগে ভবানীপুর এলাকায় ইসকন মন্দিরের জন্য জায়গা কিনেছি। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ভিক্ষার টাকায় মন্দির নির্মাণ করেছি। মন্দিরের অর্ধেক কাজ হওয়ার পর অলোকেন্দু মজুমদার যেখান দিয়ে মন্দিরে যাবার রাস্তা ছিল সেখানে বাঁশের বেড়া দেয়। তখনই তাকে বলেছিলাম এটা আপনি করতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে এমপিসহ অনেকের কাছেই গেছেন। এ নিয়ে সালিশও হয়। সে সালিশের রায়ও মানে না। আমি তাদের বলেছি রাস্তার জন্য যে টাকা বাজার মূল্য তা আমি দেব। কিন্তু সেসব না শুনে তারা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে। পরে এমপি জিল্লুল হাকিমকে বিষয়টি জানাই। ১০ তারিখে মন্দির উদ্বোধন। এর মধ্যে সীমানা প্রাচীর দিয়েছে। সীমানা প্রাচীর অপসারণ না করলে তো মন্দির উদ্বোধন করতে পারব না। এমপি সাহেবকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত দিতে বলেন। দরখাস্ত দিয়েও যখন কোনো সুরাহা হলোনা তখন এমপি জিল্লুল হাকিম সীমানা প্রাচীর অপসারণ করার পরামর্শ দেন। সেটা করতে কৃষ্ণভক্তদের নিয়ে কালকে(বৃহস্পতিবার) সেখানে গিয়েছিলেন। এছাড়া কাউকে মারধর করা হয়নি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ স্থগিতের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি অ্যড. গণেশ নারায়ণ চৌধুরী বলেন, আমি কোনো ভাবেই এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলামও না। তবু কেন কেন্দ্র এ সিদ্ধান্ত নিল তা কেন্দ্রের নেতারাই ভালো বলতে পারেন। আমাকে শোকজের প্রতিবাদে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী জেলা কমিটির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।
জয়দেব কর্মকারের কর্মকান্ডকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জয়দেব কর্মকার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একাজে যুক্ত হয়নি। ইসকনের সভাপতি হিসেবে হয়ত কোনো কর্মকান্ড করেছে। সেটি অভিপ্রেতও হতে পারে আবার অনভিপ্রেতও হতে পারে। তার জন্য আমি কেন দায়ী হবো।
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি শাহাদত হোসেন জানান, এ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কখনই সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেইনি। যে যেভাবে পারে আমার নাম ব্যবহার করছে। এটা ঠিক নয়। আমি বিষয়টি প্রশাসনকে বলেছি। প্রশাসন এটার সমাধান করবে।
হামলা ভাংচুরের ঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি চিঠি বৃহস্পতিবার রাতে অ্যড. গণেশ নারায়ণ চৌধুরী ও জয়দেব কর্মকার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গঠনতন্ত্রের ৭(ঙ)(২) ধারার বিধানুযায়ী কেন আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা পত্র প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক বরাবর জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আপনার দায়িত্ব স্থগিত করা হলো।
পত্রে ডা. পারিজাত কুমার পাল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং অ্যড. উমা সেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন বলে উল্লেখ করা হয়।