রাজবাড়ীতে দুদিন ব্যাপী ক্যারিয়ার ফেস্ট
এভারেস্ট জয়ের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন এমএ মহিত
- প্রকাশের সময় : ০৯:২৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪
- / ১০৯৯ জন সংবাদটি পড়েছেন
‘শাণিত মেধার উপযুক্ত পরিচর্যা’ ¯েøাগানকে সামনে রেখে রাজবাড়ীতে দুই দিনব্যাপী ক্যারিয়ার ফেস্ট শুরু হয়েছে। ক্যারিয়ার ক্লাব অফ রাজবাড়ীর উদ্যোগে শুক্রবার সকালে রাজবাড়ী ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন এভারেস্ট বিজয়ী এমএ মুহিত। তিনি এভারেস্ট জয়ের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সিদ্ধার্থ ভৌমিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত সরকার, রাজবাড়ীর সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার, সাবেক পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজা খানম, বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এমএ হাকিম, ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ইসরাইল হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ক্যারিয়ার ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক এম মুহিত তার পর্বতাহরণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। ২৯ হাজার ২৯ ফুট উচ্চতায় উঠতে গিয়ে অনেকে মারাও যায়। প্রায় দুই মাস লাগে সেখানে উঠতে। সেখানে ঠিকমত অক্সিজেন পাওয়া যায়না। খাবার খাওয়া যায়না। ঘুম আসবে না। না খেতে খেতে শরীর ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। কোনো শক্তিই পাওয়া যায়না। তাপমাত্রা নেমে আসে মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে শরীরের সেলগুলো মরে যায়। মাথা ব্যথাসহ নানান উপসর্গ দেখা দেয়। মস্তিষ্কে ও ফুসফুসে পানি জমে যায়। সবচেয়ে যেটা ভয়ংকর সেটা হলো তুষার ধস। কখন তুষার ধস হবে কেউ সেটা বলতে পারেনা। আমি এমন ধসের মধ্যে পড়েছিলাম। তিনবার অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছি। সবকিছুর সাথে মোকাবেলা করে টিকে থাকা খুবই কঠিন কাজ। পর্বতাহরণের সময় তিনি সাতটি মৃতদেহ দেখতে পেয়েছেন। সেখানে মৃতদেহগুলো পচে যায়না। কারণ সেখানে ব্যাকটেরিয়া নেই। জজ এলোবি নামে এক ব্যক্তি ১৯২৪ সালে পর্বতাহরণ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। তার মৃতদেহ পাওয়া যায় ১৯৯৯ সালে। পর্বতাহরণের সময় তার কপালে থাকা লাইট থেকে একটি মৃতদেহ দেখতে পান। সেটি দেখে আতকে ওঠেন। ভোরের দিকে জোরে বাতাস বইতে থাকে। তিনি চোখে ঝাপসা দেখতে থাকেন। তারা একই দলে সাতজন ছিলেন। এভারেস্ট থেকে তখন তিনশ মিটার দূরে। তিনি একটু শ্লথ হয়ে গেলে শেফ তার কাছে কারণ জানতে চান। তিনি চোখে ঝাপসা দেখার কথা বললে শেফ নীচে নেমে যাবে কীনা জানতে চায়। তিনি বলেন, না আমি এবার হারব না। যখন একটু এগিয়ে যান তার সামনেই একজনর পর্বতারোহী মারা যান। সেটা দেখে তিনি আরও ঘাবড়ে যান। তবে হাল ছাড়েননি। বলেন, মানসিকভাবে খুব শক্ত ছিলাম। নেপাল সময় সকাল সাতটায় তিনি এভারেস্ট চ‚ড়ায় পৌছান। তখন তার মনে হচ্ছিল আমি কি সত্যিই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জায়গায় আছি। যখন সূর্যোদয় হচ্ছে তখন তিনি দেখতে পান তার পায়ের নীচ থেকে সূর্য উঠছে। আমি আনন্দে কেঁদে ফেলি। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর অর্ধেকটা দেখতে পাচ্ছি। যখন বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরি তখন মনে হচ্ছিল আমার প্রিয় বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে।
তবে, তিনি একবারেই এই এভারেস্ট জয় করেননি। তিনবার চেষ্টার পর সফল হয়েছেন। একারণে কোনো কাজে ব্যর্থ হলে আবারও ঘুরে দাঁড়ানো শিখতে হবে তরুণদের।
দুদিন ব্যাপী ক্যারিয়ার ফেস্টে নিজেকে উপস্থাপন প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, তরুণ প্রজন্মের ক্যারিয়ার ভাবনা শীর্ষক সেমিনার, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ বিষয়ক সেমিনার, পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।