বালিয়াকান্দির দুটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা ॥ ৪টি গাড়িতে আগুন ॥ ৫১ রাউন্ড গুলি ॥ গ্রেপ্তার ৬
- প্রকাশের সময় : ০৬:১০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ নভেম্বর ২০২১
- / ১৩৩৭ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইককান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও জামালপুর ইউনিয়নের সাঙ্গুরা ভোট কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছিল। এ নিয়ে উভয় স্থানে সংঘর্ষ, চারটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোট ৫১ রাউন্ড গুলি করে। রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রায় একই সময়ে ঘটনা দুটি ঘটে। এসব ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেছয়জনকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে তিনজন মেম্বার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পাইককান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আকরাম হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর পরাজিত মেম্বার প্রার্থী খোকনের সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে জোর করে গণনাকৃত ব্যালটের বস্তা ও ব্যালট বাক্স কেড়ে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত সমর্থকরা দুটি মাহেন্দ্র ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলাকারীরা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে চারজন পুলিশ ও আনসার সদস্য আহত হয়। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪৯ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। তবে, পুলিশের গুলিতে কেউ হতাহত হয়নি।
ওই কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনকারী বালিয়াকান্দি থানার এসআই আশরাফ হোসেন জানান, পাইককান্দি কেন্দ্রের ভোট গণনার আগে থেকেই উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রের সড়কের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট নিক্ষেপ করে। এসময় নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত দুটি মাহেন্দ্র ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান মুন্সী বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ অজ্ঞাত ৬০/৭০জনকে আসামি করে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা করেছেন।
অপরদিকে, উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সাঙ্গুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে ফেরার পথে হামলা চালানো হয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপর। নির্বাচন কর্মকর্তারা দ্রুত ফিরে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে অবস্থান নেন। তারপরও হামলাকারীরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তিন রাউন্ড শর্টগানের গুলি করে। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্যালট ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলো বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সাঙ্গুরা গ্রামের গফুর সরদারের ছেলে আশিক সরদার, বিপুল সরদারের স্ত্রী নুপুর বেগম, সোহেল রানার স্ত্রী পাপিয়া বেগম, ঝিনাইদহ জেলার হাটগোপালপুর গ্রামের রাসেল হোসেনের স্ত্রী তানজিলা আক্তার, ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার পশ্চিম গাড়াকোলা গ্রামের আকিদুল মিয়ার স্ত্রী ঝুমুর বেগম, শ্রীনাথপুর গ্রামের তৈয়বুর রহমানের ছেলে নাহিদ হাসান।
এ হামলার ঘটনায় ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও রামদিয়া বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলীমুদ্দিন শেখ বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা করেছেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন আহমেদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাইককান্দি কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থী ঝামেলা করে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালটের বস্তা ও বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটেছে।
বালিয়াকান্দি থানার ওসি তারেকুজ্জামান জানান, নির্বাচন পরবর্তী দুটি ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। সাঙ্গুরার ঘটনায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পাইককান্দির ঘটনায় এখনও কেউ কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।