‘আর আমার দেহ চলেনা’
- প্রকাশের সময় : ০৬:২৬:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১
- / ১৩৮৫ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ আর আমার দেহ চলেনা, কোন বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই, ওগো সুনাম সওদাগর তোমার কোথায় বাড়িঘর – এমন সব জনপ্রিয় গানের শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জয়ী এই বাউল শিল্পী এখন চরম অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অর্থাভাবে ওষুধও কিনতে পারছেন না তিনি। এই দুর্দিনে তার নাতনী শিল্পী আক্তারের চাকরির মেয়াদও শেষ পর্যায়ে। দুই বছর যাবৎ বেতন না পাওয়ায় হয়ে ঋণ করে সংসার চালাতে গিয়ে পুরো পরিবারটি হয়ে পড়েছে দেনাগ্রস্ত।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া। তার বয়স এখন প্রায় ৭৫ বছর। ভালো করে কানে শোনেন না তিনি। কখনও কখনও লাঠি ভর দিয়ে চলেন। তার সঙ্গে থাকেন মেয়ে পুষ্প। কাঙ্গালিনী সুফিয়া জানান, তার নিজস্ব কোনো জায়গা জমি ছিলনা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে গান গেয়ে বেড়ান। ২০১৪ সালে রাজবাড়ীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল সদর উপজেলার কল্যাণপুরে ২০ শতাংশ জমি ্েদন। সেখানে কাঙ্গালিনী সুফিয়া একাডেমি করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর ডিসি রফিকুল ইসলাম আসার পর ওই জমিতে ঘর করে দেন। কিন্তু তারপর আর কিছুই হয়নি। ওই সময় ডিসি রফিকুল ইসলামকে অনেক কাকুতি মিনতি করে তার নাতনী শিল্পীর চাকরীর ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে জানতে পারেন সেটি অস্থায়ী নিয়োগ। নাতনী শিলপী দুই বছর যাবৎ বেতন পায়না। শুনছেন চাকরীর মেয়াদও শেষ পর্যায়ে। তিনি জানান, দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কোথাও গান গাইতে পারছেন না। আগে গান গেয়ে টাকা রোজগার করতেন। এখন সে উপায় নেই। শরীরে নানান অসুখ বাসা বেঁধেছে। সেভাবে চলতেও পারেন না। মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয় তাকে। এরপর সংসার আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মাসে যে ১০ হাজার টাকা পান সেটা দিয়ে ওষুধ কেনার টাকাই হয়না। তিনি তার নাতনী শিল্পী আক্তারের চাকরি স্থায়ী করার জন্য আকুল আবেদন জানান।
নাতনী শিল্পী আক্তার জানান, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি কালুখালী উপজেলার ভূমি অফিসে নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ পান। তবে তিনি ডেপুটেশনে কালুখালী ইউএনও অফিসে দিনের বেলায় দায়িত্ব পালন করতেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়মিত বেতন পেয়েছেন। তারপর আর বেতন পাননি। কয়েক মাস বেতন না পাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়; বেতন আটকে গেছে। ২০২০ সালে এসে জানতে পারেন তাকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যার মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বেতন পাবেন এই আশায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছন। তার তিনটি ছেলে মেয়ে। ওদের পড়াশোনার খরচ আছে। এখন তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খুব খারাপ অবস্থায় আছেন বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, বাউল শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া আমার কাছে এসেছিলেন। তার সমস্যার কথা জানিয়ে একটি লিখিত আবেদন দিতে বলেছি। সেটা দিলে উনি কী চাচ্ছেন সেটা দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব। আর ওনার নাতনী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে। সেটা সরকারি নীতিমালা অনুযায়ীই চলবে। এখানে আমার আলাদা করে কিছু করার সুযোগ নেই।
রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতীম দাস জানান, কাঙ্গালিনী সুফিয়া একজন শিলপী হিসেবে শিল্পকলা একাডেমি থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। তাকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তার প্রচেষ্টা করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, মাত্র ১৪ বছর বয়সে সঙ্গীত জীবন শুরু কাঙ্গালিনী সুফিয়ার। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় পাঁচশ। নিজে পড়াশোনা জানেন না। একারণে মুখে বলে অন্যকে দিয়ে গান লেখান তিনি। চলচ্চিত্রেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। অ্যমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।