কালুখালীতে ত্রাণের কার্ড না পেয়ে আ’লীগ নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত নারী ইউপি সদস্য, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রাণভয়ে
- প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মে ২০২০
- / ১৪৯৮ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ ত্রাণের কার্ড না পেয়ে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ইউনিয়ন পরিষদ অবরুদ্ধ করে রাখে একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক সহিদ মুহুরি ও তাদের লোকেরা। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। বর্তমানে তিনি এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এব্যাপারে ফাতেমা বেগম বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ফাতেমা বেগম মদাপুর ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য। তিনি মদাপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।
লিখিত অভিযোগে ফাতেমা বেগম উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে করিম নামে এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যেতে বলে। তিনি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাওয়া মাত্র মদাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক সহিদ মুহুরিসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ধরে বলে, ত্রাণের সব কার্ড তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। তিনি দিতে রাজী না হওয়ায় রোকনুজ্জামান তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ত্রাণের তালিকা ছিনিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে গেলে তাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে এলোপাথারীভাবে মারপিট শুরু করে। ওই সময় তার শ্লীলতাহানিও ঘটায়। তার আর্তচিৎকারে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। ওই সময় চেয়ারম্যান কার্যালয়ে ছিলেন না। তিনি অপর নারী ইউপি সদস্য বিউটি প্রামানিকের সাথে ছিলেন। এর আধা ঘণ্টা পর রোকনুজ্জামান আবারও দলবল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালিয়ে বিউটি প্রামানিককে কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ খবর পেয়ে কালুখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরুল আলম, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম, সমাজসেবা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কালুখালী উপজেলা পরিষদে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা সেখানেও হানা দিলে তিনি প্রাণভয়ে বাথরুমে পালিয়ে থাকেন। পরে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে রাজবাড়ী এসে আত্মগোপন করেন।
মদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, বিষয়টি অতি দুঃখজনক এবং কষ্টের। উপজেলায় মিটিং করে তিনি এসে বিষয়টি জানতে পারেন। ওই নারী সদস্য যদি কোনো ভুল করে থাকেন তাহলে এটি বসে আলোচনা করে সমাধান করা যেত। এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন নারী ইউপি সদস্যকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বলেন, নারী ইউপি সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করে আনা হয়। বিষয়টি দলীয় কোন্দল বলেই মনে হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়টি দেখতে বলেছি।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম জানান, বিষয়টি কালুখালী থানার ওসিকে দেখতে বলেছেন।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক অভিযোগপত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ মুহরি বলেন, ত্রাণের কার্ড দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় করে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। সবাই সেটা করেছে। কিন্তু ফাতেমা বেগম সেটা করে নাই। এটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আর কিছু হয়নি। তাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
অপর অভিযুক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বহুবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।