রাজবাড়ীতে মা হয়েছে ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের এতিম শিশুটি ॥ সামনে শুধুই অন্ধকার মামলার ৪ মাসেও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত মালেক
- প্রকাশের সময় : ০৮:৪১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
- / ১৪৮৭ জন সংবাদটি পড়েছেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনবোধ সম্পর্কে তার কোন ধারণা জন্মেনি। সংসার সে তো বহুদূর। মায়া, মমতা, মাতৃত্ববোধ এসব কিছুই সে বোঝেনা। কৈশোরের চপলতা এখনও দেখা হয়নি। পার হয়নি শৈশব। এক্কা দোক্কা, কানামাছি, গোল্লাাছুট, ছি কুত কুত খেলার যখন বয়স তখন তার কোলে বেড়ে উঠছে আর একটি শিশু। সদ্য পৃথিবীর আলো দেখা শিশুটির ভবিষ্যৎ কী তা কেউ জানেনা। সামনে শুধুই অন্ধকার এই দুটি শিশুর। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের পুইজোর গ্রামের ১২ বছর বয়সী এতিম এই শিশুটিকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছে একই গ্রামের আব্দুল মালেক। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই পলাতক সে। মামলা হওয়ার দীর্ঘ চার মাস পরও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অভিযুক্ত মালেক পুইজোর দাখিল মাদ্রাসায় নৈশ প্রহরীর চাকরীর পাশাপাশি বাজারে কম্পিউটার কম্পোজের ব্যবসা করতো। তার দুইটি স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে।
শিশুটির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাবাÑমায়ের আদর ভালোবাসা জোটেনি শিশুটির কপালে। অনাদর আর অবহেলায় মামাবাড়িতে বেড়ে ওঠা। দুই বছর বয়স থেকে শিশুটি পুইজোর গ্রামে মামার বাড়ি থাকে। মামা হতদরিদ্র। পেশায় সে একজন চায়ের দোকানী। যেকারণে অনাদর আর অবহেলায় বড় হচ্ছিল সে। স্থানীয় পুইজোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও হতদরিদ্র হওয়ায় পড়াশোনায় ছিল অনিয়মিত। বেশির ভাগ সময় মামার চায়ের দোকানেই কাজ করতো। এই চায়ের দোকানের পাশেই ছিল মালেকের দোকান। সেখানে চা আনা নেয়া করতে করতেই মালেকের লাম্পট্যের শিকার হয়। নানান ভয়ভীতি ও লোভ দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করতে থাকে শিশুটিকে। এ বছরের জুন মাসে শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পর জানা যায় শিশুটি অন্ত¡সত্ত্বা। এ ঘটনায় শিশুটির মামী গত ৮জুন পাংশা থানায় মালেকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। কিন্তু দীর্ঘ চার মাসেও আসামি মালেক গ্রেফতার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শিশুটি তার সদ্যজাত কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছে। পুরো চেহারায় ভয় আর আতঙ্কের ছাপ। যেন সব অন্ধকার গ্রাস করেছে তাকে। তাকে কী জিজ্ঞেস করা যায়; এটা নিয়েই দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়। শিশুটির যেটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে তা দিয়েই সে বলে, আপনারা আমার বিচার করে দেন। আমার মামা গরীব মানুষ। তার নিজেরই চলেনা। আমার চলবে কীভাবে? জন্ম নেয়া শিশুটিরই বা ভবিষ্যৎ কী?
নিপীড়িত শিশুটির মামা জানান, সংসারে তাদের অবস্থা নুন আনতে পানতা ফুরায়। সদ্য জন্ম নেয়া কন্যা শিশুটি বুকের দুধ পাচ্ছেনা। বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়ানোর সামর্থ্য তার নেই। তিনি মালেকের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
এলাকাবাসীও এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তি মালেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
পুইজোর দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান জানান, গত জুন মাস থেকে মালেক মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। তাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সবিতা চন্দ এ প্রসঙ্গে বলেন, শিশুর কোলে শিশু। এটি একটি অমানবিক ঘটনা। বড় নির্মম। অবিলম্বে অভিযুক্ত মালেককে গ্রেফতার করতে হবে। শিশুটি এতিম। তার মামার বাড়িতে থাকে। আমরা নিপীড়িত শিশুটির পাশে আছি। তিনি আরও বলেন, প্রসব পরবর্তী যেসব সাপোর্ট দরকার তার কিছুই পাচ্ছেনা শিশুটি। আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি কীভাবে দুটি শিশুকে রক্ষা করা যায়। আইনী লড়াইয়ের ব্যাপারেও তারা সহায়তা করবেন বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত মালেককে গ্রেফতারের জন্য বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। আমরা আসামি মালেককে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দিনের মত দিন চলে যাবে। সময় বয়ে যাবে আপন গতিতে। দুটি শিশু ধীরে ধীরে বড় হবে। কী অপেক্ষা করছে তাদের জীবনে? তা কেউ জানেনা!