মুক্তিপণ নিয়েও হত্যা : তথ্য গোপন রাখে মিলনের পরিবার, আটক ৩

- প্রকাশের সময় : ০২:২২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
- / 26
ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও অপহৃত মিলনকে ফিরে পেল না তার পরিবার। ২৫ দিন পর (২০ মার্চ) বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টায় একটি পরিত্যাক্ত টয়লেটের নিচ থেকে মিলনের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মিলন হোসেন (২৩) পীরগঞ্জ উপজেলার ৩ নং খনগাঁও ইউনিয়নের চাপাপাড়া এলাকার বাসিন্দা পানজাব আলীর ছেলে।
এদিকে তদন্ত কাজে মিলনের পরিবারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ পুলিশের।
অপহরণকারীদের সঙ্গে ২৫ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টিও গোপন রেখেছিলেন মিলনের বাবা। এঘটনায় কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানায় পুলিশ।
এঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মো. সেজান আলী (২৬), মোছা. রত্না আক্তার রিভা (১৯) ও মুরাদ (২৫) নামে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। অপহরণকারী সেজান আলী সদর উপজেলা শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকার মতিয়ার রহমানের ছেলে, মুরাদ শিবগঞ্জ আরাজী পাইকপাড়া সাইফুল ইসলামের ছেলে ও মোছা. রত্না আক্তার রিভা সদর উপজেলা সালন্দর শাহীনগর (তেলীপাড়া) এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে।
মিলনের পরিবার জানায়, ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হওয়ায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছনে ওই প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার সময় ভুক্তভোগী পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা।
প্রথম ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। এরপর ধাপে ধাপে মুক্তিপণের টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়।
সবশেষ ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র। ৯ মার্চ রাতে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী ১০টার ট্রেনে উঠতে বলে অপহরণকারীরা। এরপর চক্রটি জেলার পীরগঞ্জের সেনুয়া এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে ২৫ লাখ টাকার ব্যাগটি বাইরে ফেলে দিতে বললে সেই ব্যাগ ফেলে দেন মিলনের বাবা।
ট্রেন থেকে ২৫ লাখ টাকা ফেলে দেওয়ার ১০ মিনিট পর টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে অপহরণকারী চক্র। এরপর দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে অপহৃত মিলনকে পাওয়া যাবে বলে তথ্য দেয় চক্রটি।
কিন্তু স্টেশনে গিয়ে পাওয়া যায়নি তাকে। এ বিষয়ে ৫ মার্চ সদর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করে মিলনের বাবা পানজাব আলী।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘প্রযুক্তির সহায়তায় সেজান আলী ও মোছ. রত্না আক্তার রিভা নামে দুজনকে আটক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মিলন হত্যার তথ্য বেরিয়ে আসে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিলনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরো কেও জড়িত আছে কি না তা জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরো জানানা, এর আগে, অপহরণের ঘটনার পরদিন মৌখিকভাবে পুলিশকে জানায় মিলনের পরিবার এবং ৫ মার্চ সদর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করে মিলনের বাবা পানজাব আলী। এর পর থেকে পুলিশের সঙ্গে পানজাব আলী আর কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখেননি। তদন্ত কাজে মিলনের পরিবারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অপহরণকারীদের সঙ্গে ২৫ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টিও গোপন রেখেছিলেন মিলনের বাবা। এঘটনায় কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে মিলনের অপহরণকারী সেজান আলীর বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সেজানের ফাঁসির দাবিতে দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। পরে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা দোষিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।