টিম রাজবাড়ী ফাউন্ডেশনের মানবিক উদ্যোগ
প্রতিবন্ধী রাকিব পেল নতুন জীবন। শিশু অর্জুনের মায়ের চোখে নতুন স্বপ্ন
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩
- / ১১১৩ জন সংবাদটি পড়েছেন
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ২২ বছরের যুবক রাকিব শেখ। চলাফেরা করতে পারেনা। বাড়ির সামনে একটি টং দোকানে স্বল্প কিছু বিস্কুট, চানাচুর, সিগারেট বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করে। সে রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর লোকোসেড এলাকার মৃত মোস্তফা শেখের ছেলে। রাকিবের পাশে দাঁড়িয়েছে টিম রাজবাড়ী ফাউন্ডেশন। রাকিবের চলাফেরা করার জন্য দিয়েছে একটি হুইল চেয়ার। ব্যবসা করার জন্য দোকানে তুলে দিয়েছে ছয় হাজার টাকার বিভিন্ন পণ্য। রাকিবের তাই আনন্দের শেষ নেই। যেন সে নতুন করে জীবন পেয়েছে। আনন্দাশ্রæ তার মা তৈয়বা বেগমের চোখেও।
এছাড়া সংগঠনটির উদ্যোগে একই এলাকার রাজকুমার সাহার শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু অর্জুনকেও দেওয়া হয়েছে একটি হুইল চেয়ার। তার মা ঝর্না সাহা ছেলেকে লেখাপড়্ াশিখিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন দেখছেন। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
রাকিব শেখ জানান, তার বাবা নেই। চার ভাই, দুই বোন তারা। সে সবার ছোট। বড় তিন ভাই অটোরিক্সা চালায়। ছোটকাল থেকে সে চলাফেরা করতে পারেনা। চলাফেরা করতে না পারায় ইচ্ছে থাকলেও লেখাপাড়া করতে পারেনি। বাড়িতে সব সময় শুয়ে বসে থাকতে হয়। এক বছর আগে তার মা তাকে দোকানটি করে দেয়। বাড়ি থেকে দোকানে আসে ছেচড়ে ছেচড়ে। দিনভর দোকানেই থাকে। কিছু বেচাকেনা হয়।
হুইল চেয়ারটি পাওয়ায় তাকে আর ছেচড়ে দোকানে আসতে হবেনা। দোকানে যে পণ্য দিয়েছে তাতে তার খুবই আনন্দ হচ্ছে। যেন নতুন জীবন পেয়েছি। এই দোকান এখন তার স্বপ্ন, আশা। ঈদের আগে এমন উপহার পেয়ে খুব খুশী সে।
রাকিবের মা তৈয়বা বেগম জানান, ছোটকাল থেকেই রাকিব চলাফেরা করতে পারেনা। রাচজবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসার অর্থ জোগাতে সবকিছু বিক্রি করেছেন। তবুও রাকিব ভালো হয়নি। রাকিবের বাবা মারা গেছে ১৬ বছর আগে। তারপর থেকে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি। রাকিবকে একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিছুদিন সেখানে পড়াশোনাও করেছে। কিন্তু তিনি কোলে করে অত দূর নিয়ে যেতে পারেন না। রিক্সায় করে নিয়ে যাবেন সে আর্থিক সামর্থ্যও তার নেই। যে কারণে আর পড়াশোনা করানো হয়নি। হুইল চেয়ার আর দোকানে মালামাল তুলে দেওয়ায় কী যে শান্তি লাগছে। খুব দুশ্চিন্তা ছিল ছেলেটাকে নিয়ে। তার মৃত্যুর পর কী হবে ছেলেটার। এখন দুশ্চিন্তা দূর হলো। ঈদের আগে এমন উপহারের তুলনা হয়না। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জীবনেও এত আনন্দ পাই নাই।
অপর প্রতিবন্ধী শিশু অর্জুন সাহার মা ঝর্না সাহা জানান, তার ছেলের বয়স ১০ বছর। ছোটকাল থেকে সে চলাফেরা করতে পারেনা। দুই বছর বয়সেও যখন চলাফেরা করতে পারছিল না তখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার বলেছিলেন পুষ্টির অভাবে এমনটি হয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আজও ছেলেটা চলাফেরা করতে পারেনা। যেবকারণে ছেলেটাকে স্কুলেও ভর্তি করাতে পারেননি। তার স্বামী ভাড়ায় অটোরিক্সা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে কেনোমতে সংসার চলে। ছেলের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য তার নেই। হুইল চেয়ার পাওয়ায় এখন স্কুলে ভর্তি করাবেন। লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করবেন।
তিনি জানান, তারা রেলের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করছেন। শুনছেন এখান থেকে তাদের তুলে দেওয়া হবে। তাহলে আর যাওয়ার জায়গা থাকবেনা। এ আরেক দুশ্চিন্তা।
টিম রাজবাড়ী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব জানান, রাকিব ও অর্জুন সম্পর্কে জানতে পেরে তারা উদ্যোগি হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাকিবের দোকানে কোনো মালামাল ছিল না। তার দোকানে পর্যাপ্ত মালামাল তুলে দিয়েছেন। দোকান থেকে যা আয় হবে তা দিয়ে তার সংসার ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
টিম রাজবাড়ী ফাউন্ডেশনের সভাপতি জয়ন্ত দাস জানান, আমরা এক বছর ধরে আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। কিছু দিন আগে জানতে পারি এখানে দুজন প্রতিবন্ধী আছে। সে কথা জেনে আমরা তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। রাকিবের জন্য একটি হুইল চেয়ার ও দোকানের জন্য মালামাল কিনে দিয়েছি। এর মাধ্যমে সে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি। একই সাথে শিশু অর্জুনকেও একটি হুইল চেয়ার দেওয়া হয়েছে।
হুইল চেয়ার ও দোকানের পণ্য বিতরণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ীর সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজা খানম, টিম রাজবাড়ী ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি কমল কান্তি সরকার, মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রভাষক এসএম শামীম, জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতীম দাশ, কবি খোকন মাহমুদ প্রমুখ।