রাজবাড়ীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির চরম অবনতি ॥ তিল ধারণের ঠাঁই নেই হাসপাতালে ॥ তদন্ত কমিটি গঠন
- প্রকাশের সময় : ০৯:১৭:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২
- / ১১৬৭ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যা, মেঝে পেরিয়ে করিডোরে ঠাঁই নিয়েছে রোগীরা। কোথাও আর তিল ধারণের জায়গা নেই। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে স্যালাইনের সংকট। বাথরুম সমস্যায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও তার স্বজনরা। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্স ও চিকিৎসকদের। ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধানে সিভিল সার্জনের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ১২ শয্যা বিশিষ্ট ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বেড ও মেঝে পরিপূর্ণ। সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে হাসপাতালের মূল ভবনের বারান্দার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত রোগীরা ঠাঁই নিয়েছে। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। অসুস্থ রোগীদের তার স্বজনরা পাখায় বাতাস দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সেবা শুশ্রুষা করছেন। কর্তব্যরত নার্সরা ক্লান্তিহীনভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছেন। এসময় দ্ ুএকজন রোগী সুস্থ হয়ে চলে গেলেও নতুন করে আসছে তার চেয়েও বেশি।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোববার দুপুর পর্যন্ত ২২ জন রোগী ভর্তি ছিল। ওদিন দুপুরের পর থেকে আবারও বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জন রোগী এসেছিল হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ৬০ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। বর্তমানে ভর্তি আছে ৫০ জন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শহরের বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা খাতুন জানান, তার দুই বছরের মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত তিনদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর ১০ বছরের মেয়েটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ধুঞ্চি গ্রামের হাবিব প্রামানিক জানান, তিনি ভর্তি হয়েছেন সোমবার রাতে। নার্স ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু বাথরুমের প্রচন্ড দুর্গন্ধ। বারবার যেতে হচ্ছে। খুবই সমস্যায় আছেন।
একই কথা জানালেন, আমেনা খাতুন নামে এক বৃদ্ধাও। তিনি ভর্তি আছেন দুদিন ধরে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্মরত সিরিয়র স্টাফ নার্স মিনতি রায় চৌধুরী জানান, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা মাত্র ১২টি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র পাঁচজন নার্স দায়িত্বে রয়েছেন। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। রোগীর চাপে তারা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তবুও সেবা দিতে কোনো কার্পন্য করছেন না। ডায়রিয়ার ওষুধের সংকট না থাকলেও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএমএ হান্নান জানান, রাজবাড়ীতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে। একদিনেই বেড়েছে সাত আট গুণ। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় তাদেরকে করিডোরে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলেছেন। যেসব এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব এলাকায় গিয়ে স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হবে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ৪ হাজার চারশটি স্যালাইন মজুত আছে। যখন রোগীদের দরকার তখনই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই স্যালাইন যথেষ্ঠ নয় বলে জানান তিনি।
বাথরুম সমস্যার বিষয়ে বলেন, হাসপাতালের ওয়ার্ডের একটি মাত্র বাথরুম। সেটি পরিষ্কার করলে আবারও ব্লক হয়ে যায়। একটি সেফটি ট্যাংক স্থাপন না করা পর্যন্ত এর স্থায়ী সমাধান হবে না। রোগীদেরকে হাসপাতালের বাথরুম এবং স্বজনদের পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার কথা বলেছেন। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহীম টিটন জানান, ডায়রিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শামীম আহসানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য তিনটি টিম করা হয়েছে। যারা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেবে। তিনি নিজে শহরের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মানুষের মাঝে খাবার স্যালাইন বিতরণ করেছেন। এছাড়া তথ্য অফিসের মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার জন্য মাইকিং করা হবে।