Dhaka ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ৬ আগষ্ট আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ ডাঃ জলিলুর রহমান এর ৪১তম মৃত্যু বার্ষিকী।

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অগাস্ট ২০২১
  • / ১২৬৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

১৯৮০ সালের এই দিনে আজন্ম সংগ্রামী ডাঃ জলিলুর রহমান সকলকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান।  ১৯৩০ সালে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার অর্ন্তগত পাহাড়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশবিভাগের পূর্বে রাজবাড়ীতে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন।ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি বাঙ্গালির মুক্তি ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ছিলো তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৫২ সালে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ এর ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসাবে সাধারণ সম্পাদক (জি এস) নির্বাচিত হন এবং সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে একাডেমিক শাস্তি প্রদান করে। ৬৬ এর ৬দফা আন্দোলন,৬৯এর গণঅভুত্থান ৭০ এর নির্বাচন সর্বোপরি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সব আন্দোলনে তিনি সর্বাগ্রে। এই সময় তিনি ছিলেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭১ এর ৭মার্চ ভাষনের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজবাড়ীতে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ।  স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে সংগ্রাম কমিটিকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয় ১। সংসদ সদস্য কাজী হেদায়েত হোসনের নেতৃত্বে পলিটিক্যাল কাউন্সিল ২। ডাঃ জলিলুর রহমানের নেতৃত্বে পাবলিক রিলেশন কাউন্সিল ৩। ডাঃ আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে ডিফেন্স কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের ১৭ জন ব্যক্তির ওপর রাজবাড়ী সার্বিক নিয়ন্ত্রনভার ন্যস্ত করা হয়। রাজবাড়ীতে একদিকে চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ মহড়া অন্যদিকে চলতে থাকে অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ১১ই মার্চ রাজবাড়ী মিছিলের শহরে পরিনত হয়, ঐদিন সকাল ১০টার সময় ডাঃ জলিলুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা রাজবাড়ী শহরের মুজিব বিল্ডিং এর পাকিস্তানী পতাকা ছিঁড়ে ফেলে জয় বাংলা শ্লোগানের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করে। উল্লেখ্য এই পতাকা তৈরি করে স্টাইল টেইলার্স এর মালিক মজনু খলিফা আর পতাকা উত্তোলনের আলোকচিত্র ধারন করেন বলাকা স্টুডিও এর মালিক সিরাজুল আলম ভুইয়া। পরবর্তীতে ছবি তোলার জন্য তাকে অবাঙ্গালীরা নির্মম অত্যাচার করে ও তার ক্যামেরা কেঁড়ে নেয় ও ফ্লিম নষ্ট করে ফেলে। ১৭ এপ্রিল পাক বাহিনী মেজর চিমা এর নেতৃত্বে নদী পথে গান বোটে করে রাজবাড়ী প্রবেশের চেষ্টা করলে নায়েক সুবেদার শামসুল হকের নেতৃত্বে ৮নং সেক্টরের ১ প্লাটুন মু্ক্তি সেনা গোয়ালন্দ এর ফকির আব্দুল জব্বার এর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ও রাজবাড়ীর সর্বস্তরের মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। রাত ৩টা থেকে শুরু হয় সম্মুখ সমর, প্রায় ৪ঘন্টা পাক সেনারা সুবিধা করতে না পেরে বিমানে বাহিনীর সাহায্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর বোমা বর্ষন করতে থাকে, এতে মুক্তিবাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হয়। পাক বাহিনী রাজবাড়ী দখল নিয়ে নির্মম অত্যাচার করতে থাকলে মুক্তিবাহিনী রাজবাড়ী ছাড়তে বাধ্য হয়। তখন তিনি পরিবারসহ কুষ্টিয়ার মিরপুরে তার গ্রামের বাড়ীতে এসে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে থাকেন। তিনি গ্রামের ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্ভুদ্ধকরণসহ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতে থাকেন। ইতেমধ্যে গ্রামে ক্যাম্প করে সম্মুখ সমরের প্রস্তুতি গ্রহন করেন। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর যুদ্ধসহ বেশ কয়টি সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পাকসেনারা কুষ্টিয়া দখল করলে তিনি ভারতে চলে যান। ভারতে তিনি কল্যাণী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মোটিভেটরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে আবার দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। স্বাধীনতার পর আজন্ম বঙ্গবন্ধুপ্রেমী মানুষটি বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে তিনি রাজবাড়ী জেলার রেডক্রস এর চেয়ারম্যান পদ নিয়ে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহনির্মাণসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিনির্মাণের কাজে নিজেকে ব্যাপৃত করেন। ১৯৭৪ সালে বন্যাদুর্গত সাহায্যদানে দিবারাত্রি নিরলস পরিশ্রম করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার তিনি ভেঙ্গে পড়েন, তিনি প্রায়ই বলতেন, “বাঙ্গালী কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো?   কিভাবে ঐ বুকে গুলি চালালো?”
তিনি ১৯৭৮ সালে বেগম জোহরা তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে দিবারাত্রি  পরিশ্রম করেন এবং আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মী ও সমর্থকদের একত্রিত করে আওয়ামী লীগ পুণর্গঠনে ব্যপক অবদান রাখেন।
১৯৭৯ সালে তাকে বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা,বঙ্গবন্ধু আদর্শের সৈনিক মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।
১৯৮০ সালের ৬ই আগষ্ট চীর সংগ্রামী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মস্তিকে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে ইহধাম ত্যাগ করেন। আজ তার মৃত্যু দিবসে সকলের কাছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

আজ ৬ আগষ্ট আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ ডাঃ জলিলুর রহমান এর ৪১তম মৃত্যু বার্ষিকী।

প্রকাশের সময় : ১০:৫৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অগাস্ট ২০২১

১৯৮০ সালের এই দিনে আজন্ম সংগ্রামী ডাঃ জলিলুর রহমান সকলকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান।  ১৯৩০ সালে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার অর্ন্তগত পাহাড়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশবিভাগের পূর্বে রাজবাড়ীতে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন।ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি বাঙ্গালির মুক্তি ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ছিলো তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৫২ সালে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ এর ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসাবে সাধারণ সম্পাদক (জি এস) নির্বাচিত হন এবং সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে একাডেমিক শাস্তি প্রদান করে। ৬৬ এর ৬দফা আন্দোলন,৬৯এর গণঅভুত্থান ৭০ এর নির্বাচন সর্বোপরি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সব আন্দোলনে তিনি সর্বাগ্রে। এই সময় তিনি ছিলেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭১ এর ৭মার্চ ভাষনের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজবাড়ীতে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ।  স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে সংগ্রাম কমিটিকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয় ১। সংসদ সদস্য কাজী হেদায়েত হোসনের নেতৃত্বে পলিটিক্যাল কাউন্সিল ২। ডাঃ জলিলুর রহমানের নেতৃত্বে পাবলিক রিলেশন কাউন্সিল ৩। ডাঃ আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে ডিফেন্স কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের ১৭ জন ব্যক্তির ওপর রাজবাড়ী সার্বিক নিয়ন্ত্রনভার ন্যস্ত করা হয়। রাজবাড়ীতে একদিকে চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ মহড়া অন্যদিকে চলতে থাকে অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ১১ই মার্চ রাজবাড়ী মিছিলের শহরে পরিনত হয়, ঐদিন সকাল ১০টার সময় ডাঃ জলিলুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা রাজবাড়ী শহরের মুজিব বিল্ডিং এর পাকিস্তানী পতাকা ছিঁড়ে ফেলে জয় বাংলা শ্লোগানের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করে। উল্লেখ্য এই পতাকা তৈরি করে স্টাইল টেইলার্স এর মালিক মজনু খলিফা আর পতাকা উত্তোলনের আলোকচিত্র ধারন করেন বলাকা স্টুডিও এর মালিক সিরাজুল আলম ভুইয়া। পরবর্তীতে ছবি তোলার জন্য তাকে অবাঙ্গালীরা নির্মম অত্যাচার করে ও তার ক্যামেরা কেঁড়ে নেয় ও ফ্লিম নষ্ট করে ফেলে। ১৭ এপ্রিল পাক বাহিনী মেজর চিমা এর নেতৃত্বে নদী পথে গান বোটে করে রাজবাড়ী প্রবেশের চেষ্টা করলে নায়েক সুবেদার শামসুল হকের নেতৃত্বে ৮নং সেক্টরের ১ প্লাটুন মু্ক্তি সেনা গোয়ালন্দ এর ফকির আব্দুল জব্বার এর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ও রাজবাড়ীর সর্বস্তরের মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। রাত ৩টা থেকে শুরু হয় সম্মুখ সমর, প্রায় ৪ঘন্টা পাক সেনারা সুবিধা করতে না পেরে বিমানে বাহিনীর সাহায্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর বোমা বর্ষন করতে থাকে, এতে মুক্তিবাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হয়। পাক বাহিনী রাজবাড়ী দখল নিয়ে নির্মম অত্যাচার করতে থাকলে মুক্তিবাহিনী রাজবাড়ী ছাড়তে বাধ্য হয়। তখন তিনি পরিবারসহ কুষ্টিয়ার মিরপুরে তার গ্রামের বাড়ীতে এসে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে থাকেন। তিনি গ্রামের ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্ভুদ্ধকরণসহ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতে থাকেন। ইতেমধ্যে গ্রামে ক্যাম্প করে সম্মুখ সমরের প্রস্তুতি গ্রহন করেন। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর যুদ্ধসহ বেশ কয়টি সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পাকসেনারা কুষ্টিয়া দখল করলে তিনি ভারতে চলে যান। ভারতে তিনি কল্যাণী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মোটিভেটরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে আবার দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। স্বাধীনতার পর আজন্ম বঙ্গবন্ধুপ্রেমী মানুষটি বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে তিনি রাজবাড়ী জেলার রেডক্রস এর চেয়ারম্যান পদ নিয়ে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহনির্মাণসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিনির্মাণের কাজে নিজেকে ব্যাপৃত করেন। ১৯৭৪ সালে বন্যাদুর্গত সাহায্যদানে দিবারাত্রি নিরলস পরিশ্রম করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার তিনি ভেঙ্গে পড়েন, তিনি প্রায়ই বলতেন, “বাঙ্গালী কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো?   কিভাবে ঐ বুকে গুলি চালালো?”
তিনি ১৯৭৮ সালে বেগম জোহরা তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে দিবারাত্রি  পরিশ্রম করেন এবং আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মী ও সমর্থকদের একত্রিত করে আওয়ামী লীগ পুণর্গঠনে ব্যপক অবদান রাখেন।
১৯৭৯ সালে তাকে বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা,বঙ্গবন্ধু আদর্শের সৈনিক মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।
১৯৮০ সালের ৬ই আগষ্ট চীর সংগ্রামী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মস্তিকে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে ইহধাম ত্যাগ করেন। আজ তার মৃত্যু দিবসে সকলের কাছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন পরিবারের সদস্যরা।