পাংশার ‘অপহৃত’ শিশু মোরছালিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ॥ আপন দাদা ও চাচাতো ভাই গ্রেপ্তার
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মে ২০২১
- / ১৫০২ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের সাজুরিয়া গ্রামে ‘অপহৃত’ শিশু মোরছালিন (৬)হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পাংশা থানার পুলিশ। এঘটনায় নিহত শিশুর আপন দাদা মো. হাবিবুর রহমান ও চাচাতো ভাই শাকিল আহমেদ রনিকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা একই গ্রামের বাসিন্দা। নিহত মোরছালিন নবাব মন্ডলের ছেলে। মোরছালিনকে কেউ অপহরণ করেনি। তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছিল। এক বছর বয়সী ভাইকে থাপড় দেওয়ায় রাগ সামলাতে না পেরে রনির হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে ফুটফুটে শিশু মোরছালিনকে।
ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের বিবরণ দিয়ে পাংশা থানার ওসি একেএম শাহাদত হোসেন জানান, গত ১৬ মে রোববার সকালে মোরছালিনের বাবা কাজের জন্য পাটক্ষেতে যাওয়ার সময় মোরছালিন তার সাথে যাবার বায়না ধরে। নবাব মোরছালিনকে নিয়ে আনুমানিক দুশ গজ দূরে তার বাবার বাড়ি হাবিবুর রহমানের কাছে রেখে যান। নবাব কাজ শেষে ফেরার সময় মোরছালিনকে নিয়ে যেতে চাইলে সে পরে যাবে বলে জানায়। নবাবের মেজো ভাই নজরুলের দুই ছেলে রনি (১৫) ও আরিয়ান (১)। মোরছালিন আরিয়ানের সাথে খেলাচ্ছলে একটি থাপড় দেয়। রনি বিষয়টি দেখে মোরছালিনকে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে ফেলে দেয়। এতে মোরছালিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মোরছালিন মারা গেছে ভেবে রনি ভয় পেয়ে যায়। সে মোরছালিনকে একটি পনি ভর্তি বালতির মধ্যে চুবিয়ে রাখে। ধারণা করা যায়, পানিতে চুবিয়ে রাখার কারণেই মোরছালিনের মৃত্যু হয়েছে। রনি পরে মোরছালিনের লাশ একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে আবার পানির বালতিতে চুবিয়ে রাখে। এরপর বালতিসহ লাশটি বাড়ির পেছনে নির্জন জায়গায় পায়খানার স্লাবের কাছে লকিয়ে রাখে। তারপর মোরছালিন অপহরণ হরেয়ছে বলে প্রচার চালায়। ওসি জানান, আমরা অপহরণের কথা শুনে ঘটনার বিস্তারিত জেনে রনিকে সন্দেহ করেছিলাম। কিন্তু রনি সে সময় স্বীকার করেনি কিছুই। সে তার দাদা হাবিবুর রহমানকে দোষারোপ করতে থাকে। কিন্তু তখন পর্যন্ত হাবিবুর রহমান কিছুই জানতেন না। এমনকি পরিবারের অন্য কেউও না। ঘটনার দুইদিন পর সকালে হাবিবুর রহমানের স্ত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে দুর্গন্ধ পান। বিষয়টি তিনি স্বামী হাবিবুর রহমানকে জানালে তিনি পায়খানার কাছে গিয়ে বস্তাটি দেখতে পান। হাবিববুর রহমান ভেবেছিলেন; তাকে কেউ ফাঁসাতে একাজ করেছে। তিনি ভয়ে কাউকে কিছু না বলে বস্তাটি বাড়ির পেছনে পাটক্ষেতে ফেলে দেন। আর বালতিটি ফেলেন অন্য একটি পাট ক্ষেতে। পুলিশ বালতি ও বস্তা জব্দ করেছে। যেহেতু হাবিবুর রহমান লাশটি গুম করার চেষ্টা করেছেন একারণে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনেই পুলিশের কাছে সবকিছু স্বীকার করেছে। শুক্রবার তাদেরকে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। এই মামলাতেই চার্জশীট দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে শিশু মোরছালিন নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় মোরছালিনের বাবা নবাব মন্ডল বাদী হয়ে গত ১৭ মে সোমবার পাংশা থানায় মামলা করেন। গত ১৯ মে বুধবার বাড়ির অদূরে একটি পাট ক্ষেত থেকে মোরছালিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।