কৃষিতে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষাবাদের লক্ষ্যে ধানের চারা রোপণ উদ্বোধন
- প্রকাশের সময় : ০৮:৪০:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
- / 36
প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপন না করে প্লাস্টিকের ট্রে’তে বিশেষ পদ্ধতিতে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয় ধানের বীজ। এতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে রোপণের উপযোগী হবে।
রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করে সামান্য জৈব সারের ব্যবহারে খরচ কমে প্লাস্টিকের ট্রে-তে বীজ উৎপাদন করায় ধানের চারা উত্তোলন, রোপণ, ফসল মাড়াই ও সবই একযোগে করা যাবে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করায় ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব।
ধান চাষে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন, সময় অপচয়রোধ ও অতিরিক্ত খরচ রোধে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি ব্লকের বারুগ্রাম এলাকায় ‘সমলয়’ চাষ পদ্ধতিতে বীজতলা ও ধানের চারা রোপণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে কৃষিতে খুলছে এক নতুন দিগন্ত ।
বালিয়াকান্দির বহরপুর ইউনিয়নের বারুগ্রামে এ বছর প্রথমবারের মতো বেশকিছু জমিতে কয়েকশত ট্রে-তে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। এরপর স্থানীয় কৃষকের কয়েক একর জমিতে ধান রোপণ করার উদ্বোধন করা হয়।
বুধবার জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি প্রনোদনা কর্মসুচির আওতায় ‘সমলয়ে’ চাষাবাদ পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ব্রীধান -৯২ জাতের ধানের চারা রোপনের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) এহসানুল হক শিপন এর সভাপতিত্বে ও উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোশরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি জেলা কৃষি সম্প্রসারন এর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ গোলাম রসুল, বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা মৎস কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) হালিমা সর্দার, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ আলাউদ্দীন, শহিদুল ইসলাম, ইতি আক্তার, কৃষক শ্যামল কুমার দাস, আব্দুল মজিদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপণ, চারা রোপণে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, ধান কাটায় কম্বাইনড হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে ধান কাটার সময় কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধানে ‘সমলয়’ চাষাবাদ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে। বিশেষ অটোমেটিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রে-তে চারা বপন করা হয়। ট্রে-তে চারা বপন যন্ত্রের ৩টি চেম্বার থাকে। প্রথম চেম্বারে মাটি দেওয়া হয়। মেশিনের মাধ্যমে মাটি সরাসরি ট্রেতে পড়ে। দ্বিতীয় চেম্বারে অঙ্কুরিত বীজ দেওয়া হয়। সেই বীজও মেশিনের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে ট্রে-তে পড়ে।
তৃতীয় চেম্বারে আবারো মাটি দেওয়া হয়। সেই মাটিও মেশিনের মাধ্যমে বীজসহ ট্রে-তে পড়ে বীজ ঢেকে দেয়।
এরপর ট্রেগুলো জমিতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। মাটি যেন শুকিয়ে না যায়, সেজন্য পানি স্প্রে করা হয়। শীতে চারার যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। চারার উচ্চতা ৪ ইঞ্চি হলে বা চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হলে তা জমিতে রোপণ করার উপযোগী হয়।
ট্রে-তে চারা উৎপাদনে জমির অপচয়ও কম। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বাড়ে। একসঙ্গে রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে ও কৃষকরা একসঙ্গে ধান ঘরেও তুলতে পারবেন।
বোরো ধান চাষাবাদে তারা এর আগে কখনো আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রে-তে ধানের চারা উৎপাদন করেননি।
কৃষক শ্যামল কুমার দাস বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এমন পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা করেছি। রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে না। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ট্রে-তে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন হচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের চারা রোপণের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
“একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে,’ উল্লেখ করে তারা আরও জানান, স্বল্প জমিতে অধিক পরিমাণ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে বোরোর বীজতলা ও চাষাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
এর মধ্যে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় কৃষকরা ট্রে-তে বীজ বপন করেছেন। এতে উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক সংকট দূর হবে। কৃষকরা আরও লাভবান হবেন।