ভ্রমণ গল্প
দর্শনীয় স্থানের সন্ধানে
- প্রকাশের সময় : ০৯:১৬:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
- / ১০৪৫ জন সংবাদটি পড়েছেন
আমাদের দলের বেশির ভাগ সদস্যের সময়জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থেকেই নিয়মটা করেছিলাম ‘নির্ধারিত সময়ের ১ মিনিট দেরি করলে ১০ টাকা জরিমানা’। আমি কি জানতাম এই নিয়মের ফাঁদে আমাকেই পড়তে হবে।
সিদ্ধান্তটা প্রায় সাতদিন আগের। ৪ অক্টোবর শুক্রবার টাঙ্গাইল ভ্রমণ। সবকিছু ঠিকঠাক। বৃহস্পতিবার হঠাৎ আকাশের মুখ ভার। কখনও কখনও গুড়ি গুড়ি, কখনও ক্যাটস এন্ড ডগস বৃষ্টি। মেঘের গর্জনও শোনা যায় মাঝে মধ্যে। চার বছর ধরে যেতে যেতে যাওয়া হয়নি। এবারও হবেনা? বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সিদ্ধান্তহীনতায় সবাই। বৃহস্পতিবার রাত তখন সাড়ে ৯টা। চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত যাওয়া হচ্ছে। যা হবার হবে। সকাল সাড়ে ৬টায় মাইক্রো ছাড়বে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্ত¡র থেকে। বলে দিলাম, ‘১ মিনিট দেরি করলে ১০ টাকা জরিমানা’। রাতে বাড়ি গিয়ে দুইটা মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখলাম। সকাল ৬টায় উঠলে হাত-মুখ ধুয়ে সাড়ে ৬টার মধ্যে যেতে কোনো সমস্যা হবে না। পরদিন ফারুক উদ্দিনের ডাকে ঘুম ভাঙে। হুড়মুড় করে উঠে দেখি সোয়া সাতটা। উঠেই বউকে গালাগাল করতে শুরু করলাম- কেন ডেকে দেয়নি! উদ্দিনকে বললাম, তুমি যাও। ১৫ মিনিটের মধ্যে আসছি। কোনোমতে ব্রাশটা দাঁতে লাগিয়ে গায়ে ২ মগ জল ঢেলে রওনা হয়েছি। পথে আসার সময় পার্থ দা ফোনে জানালেন, অপেক্ষা করা সম্ভব হলোনা। সবাই বড়পুল মোড়ে আছে। ওখানে আসেন। বড়পুলে যখন যাই তখন সকাল আটটার কাছাকাছি। জানি আমাকে চরম জেরার মুখে পড়তে হবে। জেরা থেকে বাঁচতে বললাম, তাড়াহুড়ো করে চা খেতে গিয়ে ঠোঁট পুড়িয়েছি। ফারুক উদ্দিন কি ছেড়ে দেয়ার পাত্র। সবাই মাইক্রোতে উঠে পড়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে আমরা যে সাতজন (সিদ্দিক স্যার, কমলকান্তি সরকার, আহসান হাবীব, জয়ন্ত দাস, পার্থ প্রতীম দাস, ফারুক উদ্দিন ও আমি) গিয়েছিলাম তার সাথে চারজন যোগ হয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১১তে। এই দলটাকে বেস্ট ইলেভেন বলা যেতে পারে। নতুন চারজনের মধ্যে দম্পতি আজিজা ম্যাডাম ও মঞ্জু ভাই রয়েছেন। আছেন সাইফুল্লাহ ভাই এবং সুব্রত। মাইক্রো চলছে। আমার দেরি করা নিয়ে আলোচনাও চলছে। পার্থ প্রতীম দাস হিসাব কষে জানিয়ে দিলেন মোট জরিমানার পরিমাণ ৭৭০ টাকা। সবাই আমাকে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে। আমার পক্ষে কেউ ছিল না। ট্রাক চেঞ্জ করারও কোনো লক্ষণ নেই। সবাই যেন বিষয়টিতে খুব মজা পাচ্ছে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে সবাই যখন নামলো আলোচনাটাও থামল। ভেবেছিলাম, ফেরিতে উঠেই পদ্মা নদীর ছবি তুলব। তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে ফোনটাই ভুলে রেখে এসেছি।
এখন প্রশ্ন হলো যাবে কোন রুট দিয়ে। একটি রুট বরঙ্গাইল দিয়ে। আরেকটি নবীনগর ঘুরে। বরঙ্গাইল রুটের দূরত্ব কম, কিন্তু ভাঙাচোড়া রাস্তা। বর্ষীয়ান কমল দার প্রস্তাব মেনে বরঙ্গাইল দিয়ে যাচ্ছি আমরা। ভেবেছিলাম অল্প ভাঙাচোড়া। কিন্তু তাই বলে এরকম। হেলে দুলে গাড়ি চলছে। আমরা যে চারজন পেছনে বসেছি কিছুটা ঝাঁকি খেতেই হয়েছে। সম্ভবতঃ জায়গাটার নাম চাষাভাদ্রা। রাস্তাটা এমন ভাবে ভেঙেছে অর্ধেকটা দেখা যাচ্ছে। বাকী অর্ধেক পানির নীচে। ঠিক কতটা ভাঙা তা বোঝা গেলনা। চালক অনেক সতর্কতার সাথে ওই ভাঙা অংশটুৃকু পার করলো। তার ঠিক সামনেই একটা অবাক দৃশ্য! রাস্তাটা যেখান দিয়ে গেছে সেখানে কোনো খাল নেই। তার পাশে নির্মাণাধীন একটি ব্রিজ। অর্ধেক কাজ হয়েছে। ব্রিজের সামনে পেছনে দোকানপাট। কিছুই বুঝতে পারলাম না। এই ব্রিজ কেন বানানো হচ্ছে?
সামনে গিয়ে একটু সেতু পার হতে হলো। সেতুটির নাম শামসুল ইসলাম সেতু। খুব বড় নয় সেতুটি। রাস্তায় আড়াআড়ি বাঁশ ফেলা হয়েছে। বুঝলাম টোল দিতে হবে। ৬০ টাকা টোল দিয়ে পার হলাম। মাইক্রোর জানালা দিয়ে ডানপাশে দেখা গেল ‘উপন্দ্রে সরোবর’ লেখা সাইনবোর্ড। বেশ বড় সরোবর। আমরা ‘মেজরিটি মাস্ট বি গ্যারান্ডে’ থিউরিতে বিশ^াসী। নামলেই সময় লাগবে- বেশিরভাগ সদস্যের দ্বিমতের কারণে আর নামা হলোনা সেখানে। দুপুর তখন সাড়ে ১২টা। আমরা পৌছেছি দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি। কিন্তু বাড়িতে ঢোকার প্রধান ফটক বন্ধ। জমিদার বাড়ির পাশেই একটি মসজিদ। মসজিদটি ছোট হলেও দেখতে অসাধারণ। একজন জানালো মসজিদটির বয়স চারশ বছর। এত বছরেও মসজিদটি একই রকম রয়ে গেছে। কিন্তু জমিদার বাড়িতে ঢোকার কী উপায়। একজন কেয়ারটেকার আছে। তার কাছে রয়েছে চাবি। পেছন দিয়ে কেয়ারটেকারের বাড়ি যাওয়ার পথে এক কিশোরকে পেলাম। নাম বিশাল সাহা। ছেলেটিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলাম। জয়ন্ত দা এসে বললেন, ছেড়ে দিন। আমরা সামনে যাই। ভেতরে আর ঢোকা হয়নি। আমরা ফিরে এলাম। যতটুকু জানা গেল, জমিদার আব্দুল করিম গজনভির বাড়ি এটি। তার বংশধরেরা কেউ আছেন। মাঝে মধ্যে আসেন। দেলদুয়ার যে একটি উপজেলা সেটি তখনই জানলাম।
এবার আমাদের গন্তব্য আতিয়া জামে মসজিদ। ১০ টাকার নোটে যেই মসজিদের ছবি রয়েছে। সম্ভবতঃ ২০ মিনিটের পথ ছিল। রাস্তার সাথে বড় একটি পুকুর। ওই পুকুর পাড়েই আতিয়া জামে মসজিদ। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্মতাত্তি¡ক নিদর্শন। লাল ইট দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটি আকার প্রায় ১৯ মিটার। মসজিদটির চারকোণে ৪টি অষ্টকোণাকৃতীর মিনার রয়েছে। উপরে রয়েছে একটি গম্বুজ। যা এর সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়েছে। সেদিন শুক্রবার ছিল। জুম্মার নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা আসছেন দলে দলে। আমাদের কেউ পুকুর পাড়ে, কেউ মসজিদের সামনে। মসজিদটির কারুকাজ খুবই মনোরম। দেখার পালা শেষ হলেও ফেরা হচ্ছেনা এখনই। মাইক্রোতে আমরা বসে আছি। ঝুম বৃষ্টি নামছে। সেটা সমস্যা নয়। আহসান হাবীব স্যারের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি এলেন, মাইক্রো ছাড়ল। যেতে হবে সন্তোষ। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। দুপুর প্রায় তিনটা স্বাভাবিকভাবেই সবার পেটে তাত লেগেছে। খাওয়া হবে কোথায়? স্যারের একজন শুভাকাক্সিক্ষর পরামর্শে আমরা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাফেটরিয়ায় খেলাম। অসাধারণ খাবার, দামেও সাশ্রয়ী। মনে হয় আরেকবার গিয়ে খেয়ে আসি। ক্যাফেটরিয়ার সামনে একটি বিশাল পোট্রেট। মুখচছবি ভেঙে ফেলা হয়েছে। একজন তরুণী (বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রী) কে আসতে দেখে জানতে চাইলাম, এখানে কি বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল। জানালো হ্যাঁ। দীর্ঘশ^াস ফেললাম। আমরা বিচ্ছিন্নভাবে বিশ^বিদ্যালয় ঘুরছি। সুরম্য অট্টালিকা একাডেমিক ভবনটির সামনে পুকুর সেটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সবাই একসাথে মিলিত হয়ে গেলাম ভাসানীর মাজারে। এটি বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। মাজারের সামনে ছোট আকৃতির একটি প্রতীকি কুড়েঘর। তার পাশে ভাসানীর কর্মজীবন নিয়ে লেখা লম্বাকৃতির ফেস্টুন টাঙানো রয়েছে। ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের মোটামোটি একটা বর্ণনাও রয়েছে। বিশে^র কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এসেছিলেন, কী উদ্দেশ্য ছিল সম্মেলনের তার একটা সংক্ষেপিত বর্ণনা। কাগমারী সম্মেলন সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না। মঞ্জু ভাইয়ের কাগমারী সম্মেলনের আদ্যপান্ত মুখস্ত। তার কাছ থেকে জেলে নিলাম অনেক কিছু। ভাসানীর মাজার দর্শণ করতে আমরা ভেতরে গেলাম। বাম পাশে ভাসানী এবং ডানপাশে তার স্ত্রী চিরনিদ্রায় শায়িত। তার পেছনে বড় একটি কুড়েঘর। বিশ^বিদ্যালয় ঘুরতে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা প্রায়। বিশ^বিদ্যালয়ের গেট দিয়ে বের হওয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ফটোসেশন হলো।
এবার আমরা যাবো মহেড়া জমিদার বাড়ি। টাঙ্গাইল শহর অতিক্রম করার সময় আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন শিপন আলম। দীর্ঘদিন তিনি রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক ছিলেন। এখন রয়েছেন করটিয়া সাদত কলেজে। টাঙ্গাইলের চমচমের সুনাম রয়েছে। সেটা কি রাজবাড়ীর থেকে ভালো? ‘চমচম খাবে কি খাবে না, নেবে কি নেবে না?’ এই নিয়ে যখন আলোচনা তখন সময়ের অভাবে সেটা আর চেখে দেখা হলোনা। টাঙ্গাইলের চমচম টাঙ্গাইলেই থাক। আমরা রাজবাড়ীর চমচম নিয়েই খুশী থাকি। সন্তোষ থেকে মহেড়া যেতে আধা ঘণ্টার মত লেগেছিল। মাইক্রোর জানালা দিয়ে সাদা রংয়ের দালানগুলো দেখে বললাম, ওটা কী? ফারুকের উত্তর ওটাই মাহেরা জমিদার বাড়ি। মাইক্রো থেকেই দেখা যাচ্ছিল পুলিশ পিটি করছে সাথে হাঁক ছাড়ছে। তখনও জানিনা ওটা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার। কাছে যেতে সব পরিস্কার হলো। চৌধুরীদের জমিদার বাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার। জমিদার বাড়িতে পুলিশের কর্মকর্তারা থাকেন। তারাই রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করেন। সেই সাথে দর্শণীর বিনিময়ে পর্যটকদের দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। তথ্যানুসারে ‘১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ির কূলবধূসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে (১৯৭১)। পরবর্তীতে তারা লৌহজং নদীর নৌপথে এ দেশ ত্যাগ করেন। এখানেই তখন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। এ জমিদার বাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় (১৯৭২) এবং পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।
আমরা পুলিশের পিটি করা দেখছি। মুখ ও শরীরের ব্যায়াম একসঙ্গে। এটা বেশ কঠিনই মনে হলো। জনপ্রতি একশ টাকা টিকিট কেটে আমরা ভেতরে ঢুকলাম। জমিদার বাড়ির মুগ্ধতায় আমাদের দলের সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন মুহূর্তেই। আমি একেবারেই একা হয়ে গেছি। জমিদার বাড়ির সামনে এবং পেছনে রয়েছে দুটি পুকুর। বিশালকায় লজ রয়েছে চারটি। সবই সাদা রংয়ের। একটি ব্যবহৃত হচ্ছে পুলিশের জাদুঘর হিসেবে। সেখানে জমিদার আমলের প্রাচীন কিছু নিদর্শনও স্থান পেয়েছে। পেছনে শিশুদের জন্য একটি পার্ক করা হয়েছে। পার্কের পেছনে পুকুরে ছাড়া হয়েছে রঙিন মাছ। মনের আনন্দে মাছেরা খেলা করে সেখানে। একজন খাবার দিচ্ছিলেন মাছগুলোকে। জানতে চাইলাম, ব্যক্তিগত উদ্যোগ নাকি কর্তৃপক্ষ। লোকটি হেসে উত্তর দিল ব্যক্তিগত। খাবার পেয়ে মাছগুলো কী উৎফুল্ল। পানির গুড়গুড় শব্দের সাথে মাছের কিলবিল ধ্বনিও কানে বাজছে। আমার কাছে ক্যামেরা নেই। থাকলে ছবি তুলতে পারতাম। চারদিকে ঘেরা একটি স্থানে রয়েছে ১০টি হরিণ। বৃষ্টিতে মাটি কাদা হয়ে গেছে। ওই কাদার মধ্যেই রয়েছে হরিণগুলো। দেখে একটু খারাপ লাগছিল। এর মধ্যে দেখা হয়ে গেল পার্থ প্রতীম, আহসান হাবীব, জয়ন্ত দাস ও সুব্রতর সাথে। তাদের বদান্যতায় কিছু ছবি ধারণ হলো। সন্ধ্যা নেমে আসছে। এখন জমিদার বাড়ি থেকে বের হতে হবে। সূর্যাস্তের পর এখানে থাকার নিয়ম নেই। জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে ‘বিশেষ কারণে’ হাঁটছি। জমিদার বাড়ির পাশেই একটি স্কুল। নাম আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয়। ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও টিনশেডের রয়ে গেছে। অনেক কিছু দেখার ছিল। কিন্তু দিনের আলো ফুরিয়ে ধীরে ধীরে আঁধার নামছে। আবারও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজেই মাইক্রোতে উঠতে হলো। রাত হলেও ভ্রমণ তৃষ্ণা কারও মেটেনি। এখন গন্তব্য করটিয়া জমিদার বাড়ি আর তার পাশেই সাদত কলেজ। তখন বিদ্যুৎ ছিলনা। আলো আঁধারিতে গিয়ে উঠলাম করোটিয়া জমিদার বাড়ি। গেট বন্ধ। ‘ভেতরে প্রবেশ নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলছে। তবুও গেট গুতিয়ে খুলে ভেতরে গেলাম। আরও অন্ধকার। সামনে বাগানের মত। দূরে একটি বাড়ি ্েদখা যাচ্ছে। ওটাই বোধ হয় জমিদার বাড়ি। আমি বেশিক্ষণ দাঁড়ালাম না। চলে এলাম। স্যার, মঞ্জু ভাই আর আমি বসে একটি স্টলে চা খেলাম। মঞ্জু ভাই একজন সমৃদ্ধ মানুষ। ইতিহাস তার মুখস্ত। কে কবে কোন পদে ছিলেন। কারা কয় ভাই-বোন। সব তিনি বলে দিতে পারেন। চা খেতে খেতে সেসব গল্প হলো। যারা জমিদার বাড়িতে ঢুকেছিল তারা সবাই ফিরে এলো। মাইক্রোতে উঠে পড়েছি। শিপন ভাই তার কলেজ ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখালেন। গোল বাঁধল এবার। জয়ন্ত দা পাতরাইল যাবেন। বেশির ভাগই না যাওয়ার পক্ষে থাকায় তিনি প্রথমে সায় দিলেন। দু মিনিট না যেতেই বললেন, পাতরাইল গেলে সমস্যা কী। বুঝতে বাকী রইল না পাতরাইল যদি তিনি না যান তাহলে আর বাড়ি ফিরতে পারবে না। কেন তিনি পাতরাইল যাওয়ার জন্য গো ধরলেন- এটা যদি বলি তাহলে জয়ন্ত দা আমাকে ছেড়ে দেবেন না। আমরা সবার সুখী ও সমৃদ্ধশালী দাম্পত্য জীবন কামনা করি। অবশেষে পাতরাইল পৌঁছালাম রাত সাড়ে ৮টার দিকে। কেউ কিনলেন, কেউ খালি হাতেই ফিরলেন। এবার চ‚ড়ান্তভাবেই বাড়ি ফিরছি। সারাদিনের ভ্রমণ ক্লান্তির ছাপ সবার চোখে মুখে। স্যার বললেন, যারা পেছনে বসেছেন তারা সামনে আসুক। পার্থ প্রতীম বড়ই সজ্জন মানুষ। বললেন, না আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মাইক্রো চলছে। কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে। আমরা চাইলেও ঘুমাতে পারবনা। কারণ ঘুমুতে গেলে মাইক্রো ঝাকি দেয়। সকালে ঝাকিতে দুবার মাথা মাইক্রোর ছাদে গিয়ে ঠেকেছে। তারপর থেকে সাবধান হয়ে গেছি। রাজবাড়ী ফিরতে অনেক রাত হবে। তাই পথে কিছু খেয়ে যেতে হবে। মির্জাপুর উপজেলায় কুমুদিনি হাসপাতাল আর ভারতেশ^রী হোমসের কাছে একটি রেস্তোঁরা ফুড ভিলেজ। রেস্তোঁরাটা মন্দ নয়। পরোটা, ডাল, সবজি আর ডিম। আহসান হাবীব স্যার মূগ ডালটা বোধ ভাল খান। এটা জেনে রাখলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ। বাইরে বেরিয়ে আবার বৃষ্টির কবলে। রেস্তোঁরার সামনে দাঁড়িয়ে একটু ব্যানার দেখছিলাম। সেখানকার এক নেতা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তা তিনি জানাতেই পারেন। তার নামটা একেবারেই ব্যতিক্রম। এই নাম এর আগে কখনও দেখিনি শুনিনি। তার নাম ‘সঠিক’। এই যে অচেনা শহর অচেনা পথে টাঙ্গাইলের ৫টি উপজেলা (সদরের সন্তোষ, নাগরপুর, দেলদুয়ার, করটিয়া, মির্জাপুর) কোনো বিঘœ ছাড়াই ঘুরে ফিরে রাজবাড়ী ফিরছি তার কৃতিত্ব একজনকে দিতেই হবে। পার্থ প্রতীম দাস গুগল ম্যাপিং করে সঠিক রাস্তা ধরে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করছিলেন, তা এক কথায় অনন্য অসাধারণ।
আমরা রাজবাড়ী ফিরেছি রাত একটায়। সবার শরীর ক্লান্ত শ্রান্ত। তাছাড়া সব ঠিক আছে। নো প্রবেøম।