রাজবাড়ীতে ধূলায় আঁধার মহাসড়ক ॥ বাড়ছে শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগ
- প্রকাশের সময় : ০৮:২৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মার্চ ২০১৮
- / ১৬২২ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ দৌলতদিয়াÑ কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ের রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার ভাঙাচোড়া অংশে এখন ধূলা আর ধূলা। ফলে যান চলাচলে সমস্যার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদিও এই মহাসড়কটির পুনঃনির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজের মধ্যে দুটির টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদাররা ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। এই কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা ধরা হয়েছে দেড় বছর। ধূলাবালিতে ফুসফুসের জটিল রোগ ছাড়াও বয়ষ্ক, শিশু এবং গর্ভবর্তী মায়েদের বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়গামী শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.সুশীল কুমার রায় বলেন, ধূলাবালিতে এ্যাজমা, এলার্জি, ফুসফুসের অসুখ, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে পারে শিশু, বৃদ্ধ আর গর্ভবর্তী মায়েরা। আর ধূলা যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় তাহলে যে কেউই এতে আক্রান্ত হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যাদের এ্যজমা, এলার্জি রোগ আছে তাদের ধূলায় গেলে সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব বেশি।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ৪৫.১৯ কিলোমিটার সড়কের পুনঃ নির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজের দুটির টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ পর্যন্ত ৭.৭ কিলোমিটার অংশ পুনঃ নির্মাণের জন্য ৪৭ কোটি ১৩ লাখ আট হাজার টাকা ব্যয়ে রাস্তাটির কাজ করছে মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড। জেলা পরিষদ থেকে রাজবাড়ী জেলা কারাগার পর্যন্ত ৪.১ কিলোমিটার রাস্তাটি হবে ফোর লেন। ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই অংশের কাজ পেয়েছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। জেলখানা থেকে শিয়ালডাঙ্গি পর্যন্ত অংশের টেন্ডারটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে।
আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি দিয়ে ফরিদপুর, ঢাকা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনা, পাবনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল করে থাকে।
রাজবাড়ী জেলা কারাগার থেকে জেলা পরিষদ পর্যন্ত রাস্তাটি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাঙাচোড়া আর খানাখন্দে ভরা। শহরের গুরুত্ব বিবেচনা করে বড়পুল এলাকায় ইট বিছিয়ে কোনোমতে যান চলাচলের উপযোগি করা হয়েছে বেশ ক’মাস আগে। কিন্তু শ্রীপুর বাজার থেকে জেলা পরিষদ পর্যন্ত অংশটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই অংশের মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে একটি এক্রোবেটিক সেন্টার। সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে উপজেলা পরিষদ, সার্কিট, জেলা নির্বাচন অফিস, এলজিইডি ও জেলা পরিষদ অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন যখন আসা যাওয়া করে তখন ধূলায় অন্ধকার হয়ে যায়। অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, অটোরিক্সা এই রাস্তা দিয়ে যেতেই চায়না। ধূলায় বিদ্যালয়গামী ছাত্রÑছাত্রী এবং শিক্ষকদের অনেকেই শ্বাসঃকষ্টে ভুগছে। নিয়মানুযায়ী কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ধূলা নিবারণের জন্য পানি দেয়ার কথা। কিন্তু এখনও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এ কাজটি করতে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠালেও তার প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি।
রাজবাড়ী জেলা নির্বাচন অফিসার বেলাল হোসেন জানান, ধূলায় তাদের অফিসের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দরজা, জানালা বন্ধ করে কাজ করতে হয়।
শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা গুলশান আরা মোস্তফা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রÑছাত্রীর শ্বাসকষ্ট রোগ হয়েছে এই ধূলার কারণেই। এই রাস্তা দিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হয়।
এছাড়া জেলা পরিষদ থেকে গোয়ালন্দ মোড় পর্যন্ত রাস্তাটিতেও বিরাজ করছে প্রায় একই অবস্থা। এ অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন জানান, টেন্ডারের চুক্তি মোতাবেক তারা কাজ করছেন। তারা নিয়মিতই পানি দিচ্ছেন বলে দাবি করেন।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, পুরো রাস্তাটি পুনঃ নির্মাণ করতে দেড় বছর সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আশাকরি এ সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ধূলাবালির যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে তা ঠিকাদারদের দূর করার কথা। বিষয়টি আমরা তাদের বারবার করে বলছি।