বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট, দাম বাড়াতে প্রস্তাব
- প্রকাশের সময় : ০৯:৪৮:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / 10
দাম বাড়ানোর এক মাস পরও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট কাটেনি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ক্রেতাসাধারণ। তদারকি সংস্থার নজরদারির অভাবে মিল থেকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় ডিলারের কাছে পর্যাপ্ত তেল নেই। ফলে খুচরা পর্যায়ে সরবরাহে টান পড়েছে।
অন্যদিকে জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম আবারো বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। গত ৯ ডিসেম্বর লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পর সম্প্রতি আবারও দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোয় এখনো চড়া মুরগির দাম। তবে ক্রেতার নাগালে রয়েছে পেঁয়াজ, আলু, ডিম ও সবজি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট এখনো কাটেনি। বোতলজাত পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা সরবরাহ থাকলেও এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। হাতে গোনা দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরো ১১ টাকা বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে কম্পানিগুলো। এ কারণে তারা বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স হাজী স্টোরের বিক্রেতা মো. কামাল গাজী বলেন, ‘কম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। জোরাজুরি করে শুধু একটি কম্পানি থেকে পাঁচ লিটারের কয়েকটি বোতল আনতে পারছি। তা-ও আবার আটা ও ময়দা কেনার শর্ত দিয়ে রেখেছে কম্পানিটি।
বাকি কম্পানিগুলো সয়াবিন তেল সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে। এ কারণে ক্রেতাদের এক বা দুই লিটারের বোতল দিতে পারছি না।’
কারওয়ান বাজারের মেসার্স বন্ধু জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, ‘ডিলাররা আমাদের জানিয়েছেন তেলের দাম আবার বাড়ছে। কিছুদিন পর বাজারে নতুন দরের তেল ঢুকবে, তাই তেল সরবরাহ কমানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মেঘনা গ্রুপের পণ্য ফ্রেশ তেলের ডিলার বিপ্লব চন্দ্র পাল বলেন, ‘কম্পানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যার কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না। তাই দোকানদারদেরও তেল দেওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কম্পানিগুলো নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আশা করছি, নতুন দাম কর্যকর হলে তেলের সরবরাহ বাড়বে।’
সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর ভোজ্য তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম আট টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। খোলা পাম তেলের দামও লিটারে ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা। ভোক্তাদের প্রত্যাশা ছিল, দাম বাড়ানোর পর সংকট কেটে যাবে, কিন্তু তা হয়নি। সয়াবিন তেলের সংকট এখনো কাটেনি। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বোতলজাত তেল ড্রামে ভরে খোলা তেলের দামে বিক্রি করছেন। এতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ক্রেতাকে বেশি দাম গুনতে হচ্ছে। বাজারে সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত এবং স্বচ্ছতা আনতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে ভোক্তারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ মানভেদে কেজি ৫০ থেকে ৬৫ টাকায় এবং নতুন আলু কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন এখনো আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এখনো চড়া মুরগির বাজার। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯৫ থেকে ২১০ টাকায় আর সোনালি মুরগি মানভেদে কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. সোহেল রানা বলেন, ‘বাজারে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম, যার কারণে দাম কমছে না। সরবরাহ বাড়লে আবার দাম নেমে যাবে।’
শীতকালীন সবজি শিম মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকায়, বেগুন মানভেদে কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায়, কাঁচা টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, পাকা টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, লম্বা লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায়, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।