Dhaka ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অভিযুক্ত যুবদল নেতাকে বহিস্কার

২ ইউপি সদস্যকে বেঁধে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৬:০৫:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১০৩৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্যকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিতভাবে পেটানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের একটি ভিডিও শুক্রবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় যুবদল নেতা রায়হান খানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি একই ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের আজিজ খানের ছেলে। রায়হান জিয়া ফাইবার ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত বলে শোনা গেলেও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা সোনিয়া আক্তার স্মৃতি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে দুইজন একজন নারী ও একজন পুরুষ ইউপি সদস্য কয়েকটি মন্ডপে যান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুরুষ ইউপি সদস্য নারী ইউপি সদস্যকে তার বাড়িতে এগিয়ে দিতে গেলে রায়হানসহ কয়েকজন তাদের আটক করে। পরকীয়ার অভিযোগ তুলে তাদের মহারাজপুর বাজারের একটি দোকানে নিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বর্বর নির্যাতন করেন। ওই সময় নারী সদস্যের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় নির্যাতনকারীরা। নির্যাতনে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই ইউপি সদস্যকে সাদা রংয়ের নাইলনের রশি দিয়ে পিঠমোরা করে বাঁধা হয়েছে। পুরুষ ইউপি সদস্য দাঁড়িয়ে আর নারী ইউপি সদস্য মেঝেতে বসে আছেন। রায়হান খানসহ তার সহযোগীরা লাঠি দিয়ে তাদের পর্যায়ক্রমে বর্বরভাবে পেটাচ্ছে। লাঠির আঘাতে নারী সদস্য মারে বাবারে আল্লাহ বলে চিৎকার করছেন। একজন বলছে, গিড়ায় না মাংসতে মার। রায়হান অকথ্য ভাষায় দুজনকে গালিগালাজ করছেন। এক পর্যায়ে নারী ইউপি সদস্যের গলা থেকে চেইন খুলে নেয় তারা। চেইন খোলার সময় ইউপি সদস্য নারী সদস্যক বলতে শোন যায়, ‘এটি বিয়ের সময় আমার স্বামী আমাকে দিয়েছে। পাশ থেকে আরও এক যুবককে লাঠি হাতে তেড়ে এসে দুই ইউপি সদস্যকে মারধর করেন।

এলাকাবাসী বলছে, দুই ইউপি সদস্য কোনো অপরাধ করে থাকলে সালিস বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া যেত। কিন্তু  যেভাবে তাদের বেঁধে পেটানো হয়েছে তা অমানবিক ও  বর্বরোচিত ঘটনা। এ ঘটনার নিন্দা জানান তারা।

এবিষয়ে রায়হান খানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কেন মেরেছি তা এলাকায় গিয়ে জানেন। এরপর ব্যস্ত আছি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বসন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, নারী মেম্বারের ঘরে পুরুষ মেম্বারকে পেয়েছে বলে শুনেছেন। পরে সেনাবাহিনী এসেছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। তারা কোথায় আছে তাও তিনি জানেন না। আর কোনো মন্তব্যও করতে তিনি রাজী হননি।

রাজবাড়ী জেলা যুবদলের আহŸায়ক খায়রুল আনাম বকুল বলেন, বিষয়টি জানার পর শুক্রবার রাতেই রায়হানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জিয়া সাইবার ফোর্সের ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সোনিয়া আক্তার স্মৃতি জানান, রায়হান তাদের সংগঠনের কেউ নয়। কখনও ছিলনা।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব বলেন, ভুক্তভোগী হেলেনা বেগম রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হবে। ঘটনার সাথে যে বা যারাই যুক্ত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

নির্যাতনের শিকার দুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

অভিযুক্ত যুবদল নেতাকে বহিস্কার

২ ইউপি সদস্যকে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশের সময় : ০৬:০৫:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্যকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিতভাবে পেটানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের একটি ভিডিও শুক্রবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় যুবদল নেতা রায়হান খানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি একই ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের আজিজ খানের ছেলে। রায়হান জিয়া ফাইবার ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত বলে শোনা গেলেও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা সোনিয়া আক্তার স্মৃতি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে দুইজন একজন নারী ও একজন পুরুষ ইউপি সদস্য কয়েকটি মন্ডপে যান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুরুষ ইউপি সদস্য নারী ইউপি সদস্যকে তার বাড়িতে এগিয়ে দিতে গেলে রায়হানসহ কয়েকজন তাদের আটক করে। পরকীয়ার অভিযোগ তুলে তাদের মহারাজপুর বাজারের একটি দোকানে নিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বর্বর নির্যাতন করেন। ওই সময় নারী সদস্যের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় নির্যাতনকারীরা। নির্যাতনে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই ইউপি সদস্যকে সাদা রংয়ের নাইলনের রশি দিয়ে পিঠমোরা করে বাঁধা হয়েছে। পুরুষ ইউপি সদস্য দাঁড়িয়ে আর নারী ইউপি সদস্য মেঝেতে বসে আছেন। রায়হান খানসহ তার সহযোগীরা লাঠি দিয়ে তাদের পর্যায়ক্রমে বর্বরভাবে পেটাচ্ছে। লাঠির আঘাতে নারী সদস্য মারে বাবারে আল্লাহ বলে চিৎকার করছেন। একজন বলছে, গিড়ায় না মাংসতে মার। রায়হান অকথ্য ভাষায় দুজনকে গালিগালাজ করছেন। এক পর্যায়ে নারী ইউপি সদস্যের গলা থেকে চেইন খুলে নেয় তারা। চেইন খোলার সময় ইউপি সদস্য নারী সদস্যক বলতে শোন যায়, ‘এটি বিয়ের সময় আমার স্বামী আমাকে দিয়েছে। পাশ থেকে আরও এক যুবককে লাঠি হাতে তেড়ে এসে দুই ইউপি সদস্যকে মারধর করেন।

এলাকাবাসী বলছে, দুই ইউপি সদস্য কোনো অপরাধ করে থাকলে সালিস বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া যেত। কিন্তু  যেভাবে তাদের বেঁধে পেটানো হয়েছে তা অমানবিক ও  বর্বরোচিত ঘটনা। এ ঘটনার নিন্দা জানান তারা।

এবিষয়ে রায়হান খানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কেন মেরেছি তা এলাকায় গিয়ে জানেন। এরপর ব্যস্ত আছি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বসন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, নারী মেম্বারের ঘরে পুরুষ মেম্বারকে পেয়েছে বলে শুনেছেন। পরে সেনাবাহিনী এসেছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। তারা কোথায় আছে তাও তিনি জানেন না। আর কোনো মন্তব্যও করতে তিনি রাজী হননি।

রাজবাড়ী জেলা যুবদলের আহŸায়ক খায়রুল আনাম বকুল বলেন, বিষয়টি জানার পর শুক্রবার রাতেই রায়হানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জিয়া সাইবার ফোর্সের ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সোনিয়া আক্তার স্মৃতি জানান, রায়হান তাদের সংগঠনের কেউ নয়। কখনও ছিলনা।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব বলেন, ভুক্তভোগী হেলেনা বেগম রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হবে। ঘটনার সাথে যে বা যারাই যুক্ত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

নির্যাতনের শিকার দুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।