Dhaka ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৭৫ পেরিয়েও যেন ফিরে গেছেন কৈশোরে

রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম পুনর্মিলনী উৎসবে প্রাণের ঊচ্ছ¡াস

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ১০:৪৭:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১১৫১ জন সংবাদটি পড়েছেন

কারো বয়স ১৮, কেউ ৫০ পেরিয়েছেন, রয়েছেন ৮০ বছরের অশীতিপর বৃদ্ধাও। তারা সবাই মিলিত হয়েছেন একসাথে। এক প্রাণে, এক মনে। তারা সবাই যেন ফিরে গেছেন কৈশোরে। রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম পুনর্মিলনীতে দেখা গেছে এ চিত্র। ১৯৬১ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম আয়োজন করা হয়েছে এ অনুষ্ঠানের। শুক্রবার দিনব্যাপী বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এর ¯েøাগান ‘ হোক না বয়স আঠানো কিংবা আশি, এসো প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে এক সাথে হাসি’।
সকাল ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গন নানা রঙ, ¯েøাগান, ফেস্টুন, বেলুন দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। দিনব্যাপী চলে স্মৃতি চারণ, গান ও কবিতা। আয়োজন করা হয় মেহেদী উৎসব। মোট ৭৮৭ জন বিভিন্ন বয়সী প্রাক্তন ছাত্রী এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে।
সুরাইয়া বেগমের বয়স এখন ৭৫ বছর। তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপরই ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে এসএসসি পাশ করেন। পুনর্মিলনীর কথা শুনেই চলে এসেছেন ঢাকা থেকে। জানালেন, দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় পর এ স্কুলে আসলেন। অনেক স্মৃতি আছে তার এ স্কুলকে ঘিরে। ওই সময় তার এক বান্ধবী ছিল খুব দুষ্টুমি করতো। তার মধ্যে ছেলে ছেলে ভাব ছিল বলে ‘ভাই’ বলে ডাকতাম। এখানে এসে তাকে খুঁজেছিলেন। কিন্তু পাননি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা তার মনে আছে। তখন তিনি খুব ছোট। তার চাচাতো বোনরা স্কুলে আসতেন। তা দেখে তিনি কাঁদতেন। তাদের সাথে তিনি স্কুলে আসতে শুরু করেন। একটি মাটির ঘরে তাদের ক্লাস হতো। এখানে এসে খুব আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে সেই কৈশোরে ফিরে গেছি।
সুরাইয়া বেগমের মত ডা. লুৎফুন্নেছা, শামসুন্নাহার বেগম ও হোসনে আরাও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকের ছাত্রী ছিলেন। তারাও ছুটে এসেছেন। নিশ্চয় তারাও পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করছেন।
রওশন আরা শিল্পী ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাশ করেছেন। তার শ^শুরবাড়ি মাগুরা। তিনিও ছুটে এসে যোগ দিয়েছেন। জানালেন, পুরনো বান্ধবীদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে সেই ছোট বেলায় ফিরে গেছি।
হৈমন্তি বিজয়, সানজিদা সনোকা, মুক্তা খাতুন তিনজনই ২০০৭ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এখন আত্মনির্ভরশীল। প্রাণের টানে ছুটে এসেছেন তারা। তারা জানালেন, এখানে এসে সবাইকে আনন্দ করতে দেখে খুব ভালো লাগছে। আমরা সাধারণত পছন্দের বান্ধবীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করি। এখানে এসে ফুপু, খালা, তাদের বান্ধবীদের সাথে দেখা হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলছি, গল্প করছি, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিচ্ছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। খুব মজা লেগেছে। মনে হচ্ছে আমরা যেন এখনও ছোট আছি। আমাদের আপুরা স্কুলজীবনে যেমন ছিলাম তেমনই ব্যবহার করছে।
আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মীরুনা বানু মুন বলেন, শুরুটা খুবই কঠিন ছিল। কঠিন পথ পেরিয়ে আমরা এ আয়োজন করতে পেরেছি এটাই বড় কথা। আমরা আজ একত্রিত হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমাদের এ আয়োজনে অনেকেই অনেক ভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আয়োজক কমিটির আহŸায়ক দেবাহুতি চক্রবর্তী বলেন, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীদের প্রথম পুনর্মিলন অনুষ্ঠান হিসেবে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। অবশ্যই বিদ্যালয় ও রাজবাড়ীর জন্য এটি ইতহাসের অংশ হয়ে থাকবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারীসহ আয়োজকরা বিগত কয়েকটি মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সকলের সহযোগিতা ছাড়া এ অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করা যেত না। অতীত আর বর্তমান এক হয়ে আজ এই বিদ্যালয়ের গৌরব গাঁথা বহুদূর এগিয়ে গেল।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমরেশ চন্দ্র বিশ^াস বলেন, নিঃসন্দেহে এটি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান পর প্রথম পুনর্মিলনীর সাক্ষী হয়ে থাকলাম। কিশোরী থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত যারা এ স্কুলের ছাত্রী ছিলেন তারা সবাই এসেছেন। সবুজ চত্ত¡রে সবুজ রং ধারণ করেছে। ভাবতেই ভালো লাগছে। আজকের যে হাসি, আজকের যে ঊচ্ছ¡াস তা সবার ব্যস্ত জীবনকে ভালোভাবে থাকার প্রেরণা জোগাবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

৭৫ পেরিয়েও যেন ফিরে গেছেন কৈশোরে

রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম পুনর্মিলনী উৎসবে প্রাণের ঊচ্ছ¡াস

প্রকাশের সময় : ১০:৪৭:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কারো বয়স ১৮, কেউ ৫০ পেরিয়েছেন, রয়েছেন ৮০ বছরের অশীতিপর বৃদ্ধাও। তারা সবাই মিলিত হয়েছেন একসাথে। এক প্রাণে, এক মনে। তারা সবাই যেন ফিরে গেছেন কৈশোরে। রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম পুনর্মিলনীতে দেখা গেছে এ চিত্র। ১৯৬১ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম আয়োজন করা হয়েছে এ অনুষ্ঠানের। শুক্রবার দিনব্যাপী বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এর ¯েøাগান ‘ হোক না বয়স আঠানো কিংবা আশি, এসো প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে এক সাথে হাসি’।
সকাল ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গন নানা রঙ, ¯েøাগান, ফেস্টুন, বেলুন দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। দিনব্যাপী চলে স্মৃতি চারণ, গান ও কবিতা। আয়োজন করা হয় মেহেদী উৎসব। মোট ৭৮৭ জন বিভিন্ন বয়সী প্রাক্তন ছাত্রী এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে।
সুরাইয়া বেগমের বয়স এখন ৭৫ বছর। তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপরই ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে এসএসসি পাশ করেন। পুনর্মিলনীর কথা শুনেই চলে এসেছেন ঢাকা থেকে। জানালেন, দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় পর এ স্কুলে আসলেন। অনেক স্মৃতি আছে তার এ স্কুলকে ঘিরে। ওই সময় তার এক বান্ধবী ছিল খুব দুষ্টুমি করতো। তার মধ্যে ছেলে ছেলে ভাব ছিল বলে ‘ভাই’ বলে ডাকতাম। এখানে এসে তাকে খুঁজেছিলেন। কিন্তু পাননি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা তার মনে আছে। তখন তিনি খুব ছোট। তার চাচাতো বোনরা স্কুলে আসতেন। তা দেখে তিনি কাঁদতেন। তাদের সাথে তিনি স্কুলে আসতে শুরু করেন। একটি মাটির ঘরে তাদের ক্লাস হতো। এখানে এসে খুব আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে সেই কৈশোরে ফিরে গেছি।
সুরাইয়া বেগমের মত ডা. লুৎফুন্নেছা, শামসুন্নাহার বেগম ও হোসনে আরাও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকের ছাত্রী ছিলেন। তারাও ছুটে এসেছেন। নিশ্চয় তারাও পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করছেন।
রওশন আরা শিল্পী ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাশ করেছেন। তার শ^শুরবাড়ি মাগুরা। তিনিও ছুটে এসে যোগ দিয়েছেন। জানালেন, পুরনো বান্ধবীদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে সেই ছোট বেলায় ফিরে গেছি।
হৈমন্তি বিজয়, সানজিদা সনোকা, মুক্তা খাতুন তিনজনই ২০০৭ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এখন আত্মনির্ভরশীল। প্রাণের টানে ছুটে এসেছেন তারা। তারা জানালেন, এখানে এসে সবাইকে আনন্দ করতে দেখে খুব ভালো লাগছে। আমরা সাধারণত পছন্দের বান্ধবীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করি। এখানে এসে ফুপু, খালা, তাদের বান্ধবীদের সাথে দেখা হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলছি, গল্প করছি, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিচ্ছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। খুব মজা লেগেছে। মনে হচ্ছে আমরা যেন এখনও ছোট আছি। আমাদের আপুরা স্কুলজীবনে যেমন ছিলাম তেমনই ব্যবহার করছে।
আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মীরুনা বানু মুন বলেন, শুরুটা খুবই কঠিন ছিল। কঠিন পথ পেরিয়ে আমরা এ আয়োজন করতে পেরেছি এটাই বড় কথা। আমরা আজ একত্রিত হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমাদের এ আয়োজনে অনেকেই অনেক ভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আয়োজক কমিটির আহŸায়ক দেবাহুতি চক্রবর্তী বলেন, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীদের প্রথম পুনর্মিলন অনুষ্ঠান হিসেবে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। অবশ্যই বিদ্যালয় ও রাজবাড়ীর জন্য এটি ইতহাসের অংশ হয়ে থাকবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারীসহ আয়োজকরা বিগত কয়েকটি মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সকলের সহযোগিতা ছাড়া এ অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করা যেত না। অতীত আর বর্তমান এক হয়ে আজ এই বিদ্যালয়ের গৌরব গাঁথা বহুদূর এগিয়ে গেল।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমরেশ চন্দ্র বিশ^াস বলেন, নিঃসন্দেহে এটি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান পর প্রথম পুনর্মিলনীর সাক্ষী হয়ে থাকলাম। কিশোরী থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত যারা এ স্কুলের ছাত্রী ছিলেন তারা সবাই এসেছেন। সবুজ চত্ত¡রে সবুজ রং ধারণ করেছে। ভাবতেই ভালো লাগছে। আজকের যে হাসি, আজকের যে ঊচ্ছ¡াস তা সবার ব্যস্ত জীবনকে ভালোভাবে থাকার প্রেরণা জোগাবে।