Dhaka ০৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজবাড়ীতে চিঠি উৎসব ও শ্রেণিকক্ষের পাশে বইমেলা

চিঠিতে মায়া, বইয়ে ভালোবাসা

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১১৭৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

এমন একটা সময় ছিল যখন মানুষের সুখ-দুঃখ, আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, পরিবেশ-পরিস্থিতি সবই চিঠিতে প্রকাশ করা হতো। প্রিয় মানুষের একটা চিঠির জন্য অপেক্ষাায় থাকা দীর্ঘ সময় ধরে। একমাত্র চিঠিই ছিল তখন ভাবনা, উপলব্ধি ও যোগাযোগের পারস্পরিক সেতুবন্ধন। ডাকপিয়ন বিলি করে বেড়াতেন খাম-পোস্টকার্ড। খাম-পোস্টকার্ডে বড় বড় করে ঠিকানা লেখা থাকত। ডাকপিয়নরা সেই ঠিকানা ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিঠি পৌঁছে দিতেন। প্রযুক্তির প্রসারে এসব এখন সদূর অতীত।

সেই প্রিয় চিঠিকে ফিরিয়ে এনেছে রাজবাড়ী লেখক-পাঠক কেন্দ্র। সংগঠটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় চিঠি উৎসবের। একই সাথে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের পাশে বইমেলার। শনিবার রাতে রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে চিঠি উৎসবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, চিঠি পাঠ ও সাতদিন ব্যাপী বই মেলার উদ্বোধন করা হয়।

আয়োজক কমিটির আহŸায়ক রনজিৎ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন রাজবাড়ী মহিলা পরিষদের সাবেক সভাপতি লাইলী নাহার, সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ, শিশু সাহিত্যিক কাকলী প্রধান, উপস্থাপিকা শুভাগতা গুহ রায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হামিদ, কবি নেহাল আহমেদ প্রমুখ।

রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার ছাত্রÑছাত্রী চিঠি লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে প্রথম রাজবাড়ী অংকুর স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শান্ত মোল্লা এবং দ্বিতীয় হয়েছে রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তানজিলা অরিন। তাদের হাতে পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে ১০ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া তৃতীয় স্থান অধিকারী ১০ জনকে বই উপহার দেওয়া হয়। তাদের চিঠিতে ফুটে উঠেছে মায়া, মমতা, ভালোবাসা।

২য় স্থান অধিকারী তানজিলা অরিনের চিঠিটি তার বান্ধবীকে লিখেছে; রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে যখন ভর্তি হই তখন তোমার সাথে সখ্যতা। স্কুল, সহপাঠি সবাইকে খুব ভালোবেসেছিলাম। স্কুলের শিক্ষকরাও ছিলেন খুব আন্তরিক। তারা খুব ভালোবাসতেন আমাকে। একদিন বাবা এসে জানালেন, চাকরির সুবাদে তাকে লন্ডনে চলে যেতে হবে। সবাইকে সে নিয়ে যাবে। একথা শুনে খুব কেঁদেছিলাম। লন্ডনে এসে তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছে। তোমার ছোট্ট বোনের কথাও মনে পড়ছে। শুনেছি, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর খুব প্রকোপ। বেশি জ¦র হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এসময়ে সাবধান থাকতে হবে। ছোট্ট বোনকে চোখে চোখে রাখতে হবে।

১ম স্থান অধিকারী শান্ত মোল্লা তার চিঠিটি লিখেছে তার বন্ধুকে। রাজবাড়ী থেকে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে তার কেমন লাগছে। তা তুলে ধরেছে চিঠিতে। লিখেছে, সেদিন আমাদের পাশের ফ্লাটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছে। বেরিয়ে দেখি দাউদাউ করে আগুন জ¦লছে। সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

এভাবেই শান্ত লিখেছে তার চিঠিটি।

সেরা দুটি চিঠি পাঠ করেন সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ ও কবি বাবলু মওলা। চিঠি পাঠের পর সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ তার অনুভ‚তি প্রকাশ করে বলেন, চিঠি মানুষের মনের অনুভ‚তি প্রকাশের সবচেয়ে সেরা মাধ্যম। চিঠির কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। বিষয় বৈচিত্র না থাকলেও চলে। ভালো লাগা মন্দ লাগাগুলোই উঠে আসে চিঠিতে। ছাত্রজীবনে তিনি প্রচুর চিঠি লিখেছেন। কলেজে কোনো শিক্ষকের ক্লাস ভালো লাগলে তাকে চিঠি লিখতেন। আবার খারাপ লাগলেও লিখতেন। রাজবাড়ীতে চিঠি প্রতিযোগিতায় ১০ হাজারের বেশি চিঠি এসেছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো। তার মানে চিঠির প্রতি মানুষের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ রয়েছে। তারা নানান বিষয় নিয়ে চিঠি লিখেছে। ইতিপূর্বে একটি চিঠি প্রতিযোগিতায় একজন শিক্ষার্থী মাছকে চিঠি লিখেছিল। সে লিখেছিল; প্রিয় মাছ কতদিন তোমাকে পাতে পাইনা। আরেকজন লিখেছিল পৃথিবীকে। চিঠির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।

আয়োজক কমিটির অন্যতম কবি নেহাল আহমেদ বলেন, এককেন্দ্রীক শিক্ষার বাইরে শিশুদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো, সৃষ্টিশীল করতে নানামুখি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। তারই অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন। নিঃসন্দেহে এভাবেই প্রতিভার বিকাশ ঘটবে।

এদিকে চিঠি উৎসবের পাশাপাশি ব্যতিক্রমী সাত দিনব্যাপী বই মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম দিন শিল্পকলায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং শেষ তিন দিন অংকুর স্কুল এন্ড কলেজে হবে এ বই মেলা। বই মেলায় ঢাকার  ছয়টি প্রকাশনী স্টল নিয়েছে। তারা হলো অনন্যা, অনুপম, জাগৃতি, তা¤্রলিপি, কথা এবং কাকলী। রোববার দুপুরে বইমেলায় গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রীরা আগ্রহ নিয়ে বই দেখছে। কেউ কিনছে। কেউ পড়ছে।

অনুপম প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সাখাওয়াত হোসেন জানান, মূলত শিক্ষার্থীদের বইমুখি করার লক্ষে কৈশোর তারুণ্যে বই নামের একটি সংগঠন সারা বাংলাদেশে এমন বই মেলার আয়োজন করছে। এ বিদ্যালয়ে এসে বেশ সাড়া পেয়েছেন। ছাত্রীরা বই কিনছে। কারও ইচ্ছা থাকলেও টাকা না থাকায় কিনতে পারছে না। তবুও ভালো লাগছে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীতে চিঠি উৎসব ও শ্রেণিকক্ষের পাশে বইমেলা

চিঠিতে মায়া, বইয়ে ভালোবাসা

প্রকাশের সময় : ০৮:৪০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এমন একটা সময় ছিল যখন মানুষের সুখ-দুঃখ, আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, পরিবেশ-পরিস্থিতি সবই চিঠিতে প্রকাশ করা হতো। প্রিয় মানুষের একটা চিঠির জন্য অপেক্ষাায় থাকা দীর্ঘ সময় ধরে। একমাত্র চিঠিই ছিল তখন ভাবনা, উপলব্ধি ও যোগাযোগের পারস্পরিক সেতুবন্ধন। ডাকপিয়ন বিলি করে বেড়াতেন খাম-পোস্টকার্ড। খাম-পোস্টকার্ডে বড় বড় করে ঠিকানা লেখা থাকত। ডাকপিয়নরা সেই ঠিকানা ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিঠি পৌঁছে দিতেন। প্রযুক্তির প্রসারে এসব এখন সদূর অতীত।

সেই প্রিয় চিঠিকে ফিরিয়ে এনেছে রাজবাড়ী লেখক-পাঠক কেন্দ্র। সংগঠটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় চিঠি উৎসবের। একই সাথে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের পাশে বইমেলার। শনিবার রাতে রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে চিঠি উৎসবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, চিঠি পাঠ ও সাতদিন ব্যাপী বই মেলার উদ্বোধন করা হয়।

আয়োজক কমিটির আহŸায়ক রনজিৎ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন রাজবাড়ী মহিলা পরিষদের সাবেক সভাপতি লাইলী নাহার, সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ, শিশু সাহিত্যিক কাকলী প্রধান, উপস্থাপিকা শুভাগতা গুহ রায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হামিদ, কবি নেহাল আহমেদ প্রমুখ।

রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার ছাত্রÑছাত্রী চিঠি লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে প্রথম রাজবাড়ী অংকুর স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শান্ত মোল্লা এবং দ্বিতীয় হয়েছে রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তানজিলা অরিন। তাদের হাতে পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে ১০ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া তৃতীয় স্থান অধিকারী ১০ জনকে বই উপহার দেওয়া হয়। তাদের চিঠিতে ফুটে উঠেছে মায়া, মমতা, ভালোবাসা।

২য় স্থান অধিকারী তানজিলা অরিনের চিঠিটি তার বান্ধবীকে লিখেছে; রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে যখন ভর্তি হই তখন তোমার সাথে সখ্যতা। স্কুল, সহপাঠি সবাইকে খুব ভালোবেসেছিলাম। স্কুলের শিক্ষকরাও ছিলেন খুব আন্তরিক। তারা খুব ভালোবাসতেন আমাকে। একদিন বাবা এসে জানালেন, চাকরির সুবাদে তাকে লন্ডনে চলে যেতে হবে। সবাইকে সে নিয়ে যাবে। একথা শুনে খুব কেঁদেছিলাম। লন্ডনে এসে তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছে। তোমার ছোট্ট বোনের কথাও মনে পড়ছে। শুনেছি, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর খুব প্রকোপ। বেশি জ¦র হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এসময়ে সাবধান থাকতে হবে। ছোট্ট বোনকে চোখে চোখে রাখতে হবে।

১ম স্থান অধিকারী শান্ত মোল্লা তার চিঠিটি লিখেছে তার বন্ধুকে। রাজবাড়ী থেকে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে তার কেমন লাগছে। তা তুলে ধরেছে চিঠিতে। লিখেছে, সেদিন আমাদের পাশের ফ্লাটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছে। বেরিয়ে দেখি দাউদাউ করে আগুন জ¦লছে। সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

এভাবেই শান্ত লিখেছে তার চিঠিটি।

সেরা দুটি চিঠি পাঠ করেন সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ ও কবি বাবলু মওলা। চিঠি পাঠের পর সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ তার অনুভ‚তি প্রকাশ করে বলেন, চিঠি মানুষের মনের অনুভ‚তি প্রকাশের সবচেয়ে সেরা মাধ্যম। চিঠির কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। বিষয় বৈচিত্র না থাকলেও চলে। ভালো লাগা মন্দ লাগাগুলোই উঠে আসে চিঠিতে। ছাত্রজীবনে তিনি প্রচুর চিঠি লিখেছেন। কলেজে কোনো শিক্ষকের ক্লাস ভালো লাগলে তাকে চিঠি লিখতেন। আবার খারাপ লাগলেও লিখতেন। রাজবাড়ীতে চিঠি প্রতিযোগিতায় ১০ হাজারের বেশি চিঠি এসেছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো। তার মানে চিঠির প্রতি মানুষের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ রয়েছে। তারা নানান বিষয় নিয়ে চিঠি লিখেছে। ইতিপূর্বে একটি চিঠি প্রতিযোগিতায় একজন শিক্ষার্থী মাছকে চিঠি লিখেছিল। সে লিখেছিল; প্রিয় মাছ কতদিন তোমাকে পাতে পাইনা। আরেকজন লিখেছিল পৃথিবীকে। চিঠির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।

আয়োজক কমিটির অন্যতম কবি নেহাল আহমেদ বলেন, এককেন্দ্রীক শিক্ষার বাইরে শিশুদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো, সৃষ্টিশীল করতে নানামুখি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। তারই অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন। নিঃসন্দেহে এভাবেই প্রতিভার বিকাশ ঘটবে।

এদিকে চিঠি উৎসবের পাশাপাশি ব্যতিক্রমী সাত দিনব্যাপী বই মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম দিন শিল্পকলায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং শেষ তিন দিন অংকুর স্কুল এন্ড কলেজে হবে এ বই মেলা। বই মেলায় ঢাকার  ছয়টি প্রকাশনী স্টল নিয়েছে। তারা হলো অনন্যা, অনুপম, জাগৃতি, তা¤্রলিপি, কথা এবং কাকলী। রোববার দুপুরে বইমেলায় গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রীরা আগ্রহ নিয়ে বই দেখছে। কেউ কিনছে। কেউ পড়ছে।

অনুপম প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সাখাওয়াত হোসেন জানান, মূলত শিক্ষার্থীদের বইমুখি করার লক্ষে কৈশোর তারুণ্যে বই নামের একটি সংগঠন সারা বাংলাদেশে এমন বই মেলার আয়োজন করছে। এ বিদ্যালয়ে এসে বেশ সাড়া পেয়েছেন। ছাত্রীরা বই কিনছে। কারও ইচ্ছা থাকলেও টাকা না থাকায় কিনতে পারছে না। তবুও ভালো লাগছে।