Dhaka ০৯:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভন্ড কবিরাজের লালসার শিকার কিশোরীর ভবিষ্যৎ জীবন হুমকির মুখে \ লজ্জায় বের হতে পারছে না বাড়ি থেকে

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : ০৬:০১:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩
  • / ১১১৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী যুবক দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে এসে এক কিশোরীকে বিয়ে করে আবার ফিরেও যান। গত ২৮ মে তারিখে জানা যায় ওই কিশোরী পাঁচ মাসের অন্ত¡সত্ত¡া। ঘটনা আর বাড়তে না দিয়ে মেয়েটির বাবা শ^শুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান তার মেয়েকে। মেয়েটির জীবনে নেমে এসেছে অমানিশা। হুমকির মুখে পড়েছে তার ভবিষ্যৎ জীবন। স্থানীয় এক কবিরাজের লালসার শিকার হয়ে মেয়েটির এ দুরাবস্থা বলে জানা গেছে। একই সাথে সামাজিক লাজ লজ্জার মুখে পড়েছে দুটি পরিবার। এঘটনায় ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর পুলিশ কবিরাজ মমিন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে। সে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, বালিয়য়াকান্দি উপজেলা এলাকার একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ওই কিশোরী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কবিরাজ মমিন মন্ডলের কাছে নিয়ে যান তার অভিভাবক। চিকিৎসার সুযোগে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাকে ধর্ষণ করতো। দীর্ঘদিন যাবৎ সে এই কুকর্র্ম করে আসছিলো সে। দুই মাস আগে পাংশার প্রবাসী এক যুবকের সাথে মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরও কবিরাজ মমিন তার পিছু ছাড়েনি। মাঝে মধ্যে মোবাইল ফোনে তাকে কুপ্রস্তাব দিত। কয়েকদিন আগে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনসহ অসুস্থতার কারণে পাংশার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় শ^শুরবাড়ির লোকেরা। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানানো হয় মেয়েটি পাঁচ মাসের অন্ত¡সত্ত¡া। এরপর মেয়ের শ^শুরবাড়ি থেকে তার বাবাকে ডেকে পাঠালে তিনি মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। পরে বালিয়াকান্দির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে তার গর্ভপাত করানো হয়। গত ৮ জুন তারিখে কবিরাজ মমিন মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়ের বাবা। এসব ঘটনায় প্রচন্ডভাবে ভেঙে পড়েছে মেয়েটি। তার পড়াশোনাও গেছে বন্ধ হয়ে। সামাজিক লাজ লজ্জায় বাড়ি থেকেও বের হচ্ছে না সে। প্রচন্ড অমানিশা বিরাজ করছে তার মধ্যে।

কিশোরীর বাবা জানান, আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। সামাজিক লাজ লজ্জার মধ্যে পড়েছি। কতটা অসহায় জীবনযাপন করছি আমরা সেটা কেবল আমরাই জানি। এ ঘটনায় তিনি ধর্ষক কবিরাজের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি ভন্ড কবিরাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বালিয়াকান্দি থানার এসআই নাসির উদ্দিন জানান, মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মমিন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। মমিন মন্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শীগগীরই আদালতের কাছে রিমান্ড চাওয়া হবে।

প্রবাসী ওই যুবকের চাচা জানান, তার ভাতিজা সিঙ্গাপুর প্রবাসী। দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিল। ওই সময় পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় তার বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু মেয়ে  মিলছিল না। ছুটির মেয়াদ যখন শেষ পর্যায়ে তখন মেয়েটির সন্ধান পাওয়া যায়। এক প্রকার তড়িঘরি করে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের আগে তারা কিছুই জানতেন না। মেয়েটির বয়স কম হওয়ায় ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে দেওয়া হলেও কাবিননামা করা হয়নি। বলা ছিল ১৮ বছর পূর্ণ হলে কাবিন নামা করা হবে। বিয়ে করেই তার ভাতিজা সিঙ্গাপুর ফিরে যায়। কয়েকদিন আগে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান; পাঁচ মাসের অন্ত¡সত্ত¡া সে। তখন মেয়ের বাবাকে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়। মেয়ের বাবা তাদের জানিয়েছেন, এক কবিরাজের দ্বারা এ সর্বনাশ ঘটেছে। তিনি নিজেই তার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান। এমতাবস্থায় তারাও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। তাদের সামাজিক মান মর্যাদা আছে। এখন আর মেয়েটিকে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সিঙ্গাপুর থেকে তার ভাতিজাও জানিয়েছেন একই কথা।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

ভন্ড কবিরাজের লালসার শিকার কিশোরীর ভবিষ্যৎ জীবন হুমকির মুখে \ লজ্জায় বের হতে পারছে না বাড়ি থেকে

প্রকাশের সময় : ০৬:০১:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী যুবক দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে এসে এক কিশোরীকে বিয়ে করে আবার ফিরেও যান। গত ২৮ মে তারিখে জানা যায় ওই কিশোরী পাঁচ মাসের অন্ত¡সত্ত¡া। ঘটনা আর বাড়তে না দিয়ে মেয়েটির বাবা শ^শুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান তার মেয়েকে। মেয়েটির জীবনে নেমে এসেছে অমানিশা। হুমকির মুখে পড়েছে তার ভবিষ্যৎ জীবন। স্থানীয় এক কবিরাজের লালসার শিকার হয়ে মেয়েটির এ দুরাবস্থা বলে জানা গেছে। একই সাথে সামাজিক লাজ লজ্জার মুখে পড়েছে দুটি পরিবার। এঘটনায় ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর পুলিশ কবিরাজ মমিন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে। সে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, বালিয়য়াকান্দি উপজেলা এলাকার একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ওই কিশোরী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কবিরাজ মমিন মন্ডলের কাছে নিয়ে যান তার অভিভাবক। চিকিৎসার সুযোগে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাকে ধর্ষণ করতো। দীর্ঘদিন যাবৎ সে এই কুকর্র্ম করে আসছিলো সে। দুই মাস আগে পাংশার প্রবাসী এক যুবকের সাথে মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরও কবিরাজ মমিন তার পিছু ছাড়েনি। মাঝে মধ্যে মোবাইল ফোনে তাকে কুপ্রস্তাব দিত। কয়েকদিন আগে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনসহ অসুস্থতার কারণে পাংশার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় শ^শুরবাড়ির লোকেরা। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানানো হয় মেয়েটি পাঁচ মাসের অন্ত¡সত্ত¡া। এরপর মেয়ের শ^শুরবাড়ি থেকে তার বাবাকে ডেকে পাঠালে তিনি মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। পরে বালিয়াকান্দির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে তার গর্ভপাত করানো হয়। গত ৮ জুন তারিখে কবিরাজ মমিন মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়ের বাবা। এসব ঘটনায় প্রচন্ডভাবে ভেঙে পড়েছে মেয়েটি। তার পড়াশোনাও গেছে বন্ধ হয়ে। সামাজিক লাজ লজ্জায় বাড়ি থেকেও বের হচ্ছে না সে। প্রচন্ড অমানিশা বিরাজ করছে তার মধ্যে।

কিশোরীর বাবা জানান, আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। সামাজিক লাজ লজ্জার মধ্যে পড়েছি। কতটা অসহায় জীবনযাপন করছি আমরা সেটা কেবল আমরাই জানি। এ ঘটনায় তিনি ধর্ষক কবিরাজের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি ভন্ড কবিরাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বালিয়াকান্দি থানার এসআই নাসির উদ্দিন জানান, মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মমিন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। মমিন মন্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শীগগীরই আদালতের কাছে রিমান্ড চাওয়া হবে।

প্রবাসী ওই যুবকের চাচা জানান, তার ভাতিজা সিঙ্গাপুর প্রবাসী। দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিল। ওই সময় পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় তার বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু মেয়ে  মিলছিল না। ছুটির মেয়াদ যখন শেষ পর্যায়ে তখন মেয়েটির সন্ধান পাওয়া যায়। এক প্রকার তড়িঘরি করে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের আগে তারা কিছুই জানতেন না। মেয়েটির বয়স কম হওয়ায় ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে দেওয়া হলেও কাবিননামা করা হয়নি। বলা ছিল ১৮ বছর পূর্ণ হলে কাবিন নামা করা হবে। বিয়ে করেই তার ভাতিজা সিঙ্গাপুর ফিরে যায়। কয়েকদিন আগে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান; পাঁচ মাসের অন্ত¡সত্ত¡া সে। তখন মেয়ের বাবাকে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়। মেয়ের বাবা তাদের জানিয়েছেন, এক কবিরাজের দ্বারা এ সর্বনাশ ঘটেছে। তিনি নিজেই তার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান। এমতাবস্থায় তারাও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। তাদের সামাজিক মান মর্যাদা আছে। এখন আর মেয়েটিকে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সিঙ্গাপুর থেকে তার ভাতিজাও জানিয়েছেন একই কথা।