Dhaka ০৯:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খড়া আর অনাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাদাম ক্ষেত, লোকসানের মুখে চাষীরা

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৪৮:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
  • / ১২৩১ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর পদ্মার বিস্তীর্ণ চরে আবাদ হয় বাদামের। অর্থকরী এ ফসল চাষ করে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন চরাঞ্চলের অনেক মানুষ। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাদাম চাষ। তবে প্রচন্ড খড়া আর অনাবৃষ্টিতে এ বছর ক্ষতি হয়েছে বাদাম ক্ষেতের। ভাল হয়নি ফলন। লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষীরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনাবৃষ্টির পাশাপাশি সেচের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর এলাকায় পদ্মা নদীর চরে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দশক ধরে পদ্মা নদীর ভাঙনে ফসলি জমি, ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে বর্ষা শেষে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার বুকে জেগে ওঠে  বিশাল চর। এই চরে চাষীরা চাষ করেন বাদাম, তিল, সবজি। বাদাম সাধারণতঃ পৌষ মাসের শেষ দিকে রোপণ করা হয়। ক্ষেত থেকে তোলা শুরু হয় জৈষ্ঠের শুরু থেকেই। এ বছর খড়া আর অনাবৃষ্টিতে ক্ষেতের বাদাম পুড়ে গেছে। যেকারণে আশানুরূপ হয়নি বাদাম চাষ।

সোনাকান্দর গ্রামের বাদাম চাষী আব্দুর রহমান গাজী জানান, পদ্মার তীরে নতুন চর জেগে ওঠায় তারা ২০ জন মিলে চরের একশ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। এতে আড়াই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে সাধারণতঃ ১০ মণ করে বাদাম হয়ে থাকে। সেই হিসাবে একশ বিঘায় লক্ষমাত্রা ছিলো এক হাজার মণ। কিন্তু এবছর খরায় বাদামের গাছ মরে যাওয়ার কারণে আশানুরূপ ফলন নেই। ফলে বিঘা প্রতি বাদাম উঠছে তিন থেকে চার মণ করে। বাদাম চাষের খরচ উঠাতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

আরেক বাদাম চাষী নজরুল মন্ডল জানান,বীজ, ,সার, আবাদ, শ্রমিকসহ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে আট থেকে ১০ হাজার টাকা করে। আর বিঘা প্রতি বাদাম হচ্ছে তিন থেকে চার মণ করে। প্রতি মণ বাদামের বাজার মূল্য দুই হাজার টাকা। সে হিসাবে বিঘা প্রতি লোকসান গুণতে হবে দুই হাজার টাকা করে।

কৃষাণী হালিমা বেগম জানান, কয়েকদিন আগে চরে গিয়ে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়েছি। মণ প্রতি পেতাম একশ টাকা করে। সারাদিনে তিন মণ বাদাম গাছ থেকে ছাড়াতে পারতাম। যে টাকা পেতাম সেটা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারতাম। প্রচন্ড রোদ আর গরমের জন্য এখন কেউ চরে যাই না। চরে গিয়ে বাদাম ছাড়ানো খুবই কষ্টের। সেখানে নেই ছায়ার কোন ব্যবস্থ্যা। রোদ আর গরমে অসুস্থ হয়ে যাই। যে কারণে চাষীরা চর থেকে ট্রলারে করে পাড়ে নিয়ে আসে। সেখান থেকে আমরা রান্নার কাজে জ্বালানী হিসাবে বাদামের গাছের বিনিময়ে বাদাম ছাড়াচ্ছি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহউদ্দিন সেক জানান, এবছর সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার দরকার ছিল তখন বৃষ্টি হয়নি। আবার পর্যাপ্ত সেচ না দেওয়ায় বাদাম চাষ ভালো  না হওয়ার অন্যতম কারণ। সদর উপজেলার খানগঞ্জ, মিজানপুর ও চন্দনী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাদাম চাষ হয়। পদ্মার চরে সেচের  তেমন সুবিধা নেই। পাটের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া গেলেও বাদামের ক্ষতি  পোষানো একটু কষ্ট। তবে আগামী রবি মৌসুমে যখন প্রান্তিক  চাষীদের প্রণোদনা দেওয়া হবে তখন ক্ষতিগ্রস্ত  এসব কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া  হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

খড়া আর অনাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাদাম ক্ষেত, লোকসানের মুখে চাষীরা

প্রকাশের সময় : ০৫:৪৮:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর পদ্মার বিস্তীর্ণ চরে আবাদ হয় বাদামের। অর্থকরী এ ফসল চাষ করে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন চরাঞ্চলের অনেক মানুষ। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাদাম চাষ। তবে প্রচন্ড খড়া আর অনাবৃষ্টিতে এ বছর ক্ষতি হয়েছে বাদাম ক্ষেতের। ভাল হয়নি ফলন। লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষীরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনাবৃষ্টির পাশাপাশি সেচের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর এলাকায় পদ্মা নদীর চরে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দশক ধরে পদ্মা নদীর ভাঙনে ফসলি জমি, ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে বর্ষা শেষে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার বুকে জেগে ওঠে  বিশাল চর। এই চরে চাষীরা চাষ করেন বাদাম, তিল, সবজি। বাদাম সাধারণতঃ পৌষ মাসের শেষ দিকে রোপণ করা হয়। ক্ষেত থেকে তোলা শুরু হয় জৈষ্ঠের শুরু থেকেই। এ বছর খড়া আর অনাবৃষ্টিতে ক্ষেতের বাদাম পুড়ে গেছে। যেকারণে আশানুরূপ হয়নি বাদাম চাষ।

সোনাকান্দর গ্রামের বাদাম চাষী আব্দুর রহমান গাজী জানান, পদ্মার তীরে নতুন চর জেগে ওঠায় তারা ২০ জন মিলে চরের একশ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। এতে আড়াই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে সাধারণতঃ ১০ মণ করে বাদাম হয়ে থাকে। সেই হিসাবে একশ বিঘায় লক্ষমাত্রা ছিলো এক হাজার মণ। কিন্তু এবছর খরায় বাদামের গাছ মরে যাওয়ার কারণে আশানুরূপ ফলন নেই। ফলে বিঘা প্রতি বাদাম উঠছে তিন থেকে চার মণ করে। বাদাম চাষের খরচ উঠাতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

আরেক বাদাম চাষী নজরুল মন্ডল জানান,বীজ, ,সার, আবাদ, শ্রমিকসহ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে আট থেকে ১০ হাজার টাকা করে। আর বিঘা প্রতি বাদাম হচ্ছে তিন থেকে চার মণ করে। প্রতি মণ বাদামের বাজার মূল্য দুই হাজার টাকা। সে হিসাবে বিঘা প্রতি লোকসান গুণতে হবে দুই হাজার টাকা করে।

কৃষাণী হালিমা বেগম জানান, কয়েকদিন আগে চরে গিয়ে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়েছি। মণ প্রতি পেতাম একশ টাকা করে। সারাদিনে তিন মণ বাদাম গাছ থেকে ছাড়াতে পারতাম। যে টাকা পেতাম সেটা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারতাম। প্রচন্ড রোদ আর গরমের জন্য এখন কেউ চরে যাই না। চরে গিয়ে বাদাম ছাড়ানো খুবই কষ্টের। সেখানে নেই ছায়ার কোন ব্যবস্থ্যা। রোদ আর গরমে অসুস্থ হয়ে যাই। যে কারণে চাষীরা চর থেকে ট্রলারে করে পাড়ে নিয়ে আসে। সেখান থেকে আমরা রান্নার কাজে জ্বালানী হিসাবে বাদামের গাছের বিনিময়ে বাদাম ছাড়াচ্ছি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহউদ্দিন সেক জানান, এবছর সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার দরকার ছিল তখন বৃষ্টি হয়নি। আবার পর্যাপ্ত সেচ না দেওয়ায় বাদাম চাষ ভালো  না হওয়ার অন্যতম কারণ। সদর উপজেলার খানগঞ্জ, মিজানপুর ও চন্দনী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাদাম চাষ হয়। পদ্মার চরে সেচের  তেমন সুবিধা নেই। পাটের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া গেলেও বাদামের ক্ষতি  পোষানো একটু কষ্ট। তবে আগামী রবি মৌসুমে যখন প্রান্তিক  চাষীদের প্রণোদনা দেওয়া হবে তখন ক্ষতিগ্রস্ত  এসব কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া  হবে।