Dhaka ১২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীর বন্ধ লোকোশেড চালু হবে কবে? 

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:০৬:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১
  • / ১৫২৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রেলকে ঘিরে রাজবাড়ী শহরটি গড়ে উঠেছে। তাই রেলের শহর হিসেবেই পরিচিত রাজবাড়ী। একটা সময় রাজবাড়ীর মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলের উপর ছিল নির্ভরশীল। মানুষের পদচারণায় তখন থেকেই জমজমাট রাজবাড়ী শহর। সময়ের বিবর্তনে মাঝে কিছুটা হলেও ঘটে ছন্দ পতন। তবে পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে রাজবাড়ীর রেল। কিন্তু দীর্ঘকাল বন্ধ হয়ে থাকা লোকোশেডটি এখনও চালু হয়নি। যেকারণে ইঞ্জিন বিকল বা বগি লাইনচ্যুত হলে নির্ভর থাকতে হয় পাকশী অথবা ঈশ^রদী রেলওয়ের উপর। অন্যদিকে লোকোশেডটি পুনরায় চালু হলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো বহু মানুষের। যদিও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লোকোশেডটি চালুর বিষয়ে শুনিয়েছেন আশার বাণী।

রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৮৯০ সালে রাজবাড়ী রেল স্টেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই রেল যোগাযোগের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে রাজবাড়ী। ট্রেনের শব্দ আর হুইসেলে মুখর থাকতো রাজবাড়ী শহর। বেশি সংখ্যক ট্রেন চলাচল করায় রাজবাড়ীতে গড়ে তোলা হয় লোকেশেড। যেখানে ইঞ্জিন মেরামত, তেল লোড, সিডিউলসহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ছিল বগি উদ্ধারের জন্য রিলিফ ট্রেনও। রমরমা অবস্থা ছিল রাজবাড়ী রেলওয়ের। রাজবাড়ী-পুখুরিয়া, রাজবাড়ী-পোড়াদহ, রাজবাড়ী-রাজশাহী, রাজবাড়ী-পার্বতীপুর, রাজবাড়ী-খুলনা, রাজবাড়ী-রাজশাহী, রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে মেইল, লোকাল ও আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করতো। পরবর্তীতে রেল সংকোচন নীতির কারণে ১৯৯৮ সালের পর থেকে একে একে বন্ধ হয়ে যায় রাজবাড়ী-পুখুরিয়া, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া ও রাজবাড়ী-পার্বতীপুর রুটে ট্রেন চলাচল।  রাজবাড়ী-খুলনা রুটে চলাচলকারী আন্তনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে লোকোশেডটির কার্যক্রমও হয়ে যায় শিথিল।

দীর্ঘ সময় পরে ২০১৪ সালে আবারও চালু হয় রাজবাড়ী-ফরিদপুর-ভাঙ্গা, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ। রেলের রমরমা অবস্থা কিছুটা হলেও ফিরেছে। ফিরে পেয়েছে প্রাণ। কিন্তু চালু হয়নি লোকোশেডটি।

রাজবাড়ীর লোকোশেডটি রেল স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে বিনোদপুর-নুরপুর এলাকায় অবস্থিত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে লোকোশেডের অফিস এখনও আছে। দুটি কক্ষ খোলা থাকলেও বাকীগুলো বন্ধ। মূলত লোকোশেড বলা হয় সেই শেড দুটি পরিত্যক্ত হলেও অক্ষত আছে এখনও। একটি শেডের উপরে মাঝখান থেকে টিন খুলে পড়েছে। জং ধরেছে রেল লাইনগুলোতে।

রাজবাড়ী রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত এলএম (লোকোমাস্টার) মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তিনি  ১৯৫২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রেলে চাকরী করেছেন। রাজবাড়ীতে সার্বক্ষণিক ৩৫টি স্টিম ইঞ্চিন ছিল। ইঞ্জিন খারাপ হলে লোকোশেডে মেরামত করা হতো। সাড়ে চারশ মানুষ দিন রাত কাজ করতো লোকোশেডে। খুবই রমরমা অবস্থা ছিল তখন।

আরেক অবসরপ্রাপ্ত এলএম গোলাম মওলা জানান, সম্ভবতঃ ২০০০ সালের দিকে লোকোশেডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় যারা লোকোশেডে কাজ করতো কিছু গোল্ডেন হ্যান্ডশেক নিয়ে চাকরী থেকে চলে যায়। লোকোশেডটি আবার চালু হলে রেলের জন্য ভালো।

রেলের একজন কর্মকর্তা জানান, ইঞ্জিন বিকল হলে সেটিকে ঈশ^রদী পাঠিয়ে মেরামত করে আনতে হয়। কোথাও বগি জটিলভাবে লাইনচ্যুত হলে ঈশ^রদী থেকে রিলিফ ট্রেন আনতে হয় উদ্ধারের জন্য। কিন্তু লোকোশেডটি চালু হলে ঈশ^রদীর উপর নির্ভর থাকতে  হতো না। রাজবাড়ীতে এখন যে চারটি ইঞ্জিন আছে সেগুলো রেলের পকেটে রাখা হয়।

রাজবাড়ী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী, ইনচার্জ (লোকো) হুমায়ুন কবীর বলেন, মাঝখানে কয়েকটি রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গুরুত্ব হারিয়ে যায় লোকোশেডের। একারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে লোকোশেডের সেকশন রাজবাড়ীতে আছে এখনও। ইঞ্জিনের ছোট খাট সমস্যা হলে মেরামত করা হয় এখানেই। বড় কোনো সমস্যা হলে ঈশ^রদী পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, রাজবাড়ীতে  যেসব ইঞ্জিন আছে সেগুলো পুরনো হওয়াতে প্রায়ই সমস্যা হয়। যেকারণে ট্রেন চলাচলে কিছুটা হলেও সমস্যা হয়। রাজবাড়ীর লোকোশেডটি পুনরায় চালু হলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের রেলের গুরুত্ব আরও বাড়বে। যা সকলের জন্যই ভালো হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. কুদরত ই খোদার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাজবাড়ীতে লোকোশেডটি পুরনায় চালু করার পরিকল্পনা আছে। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে রাজবাড়ীর গুরুত্ব বাড়বে। সেখানে একটা কোচ মেরামত কারখানাও নির্মাণ করা হবে। আপাতত যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। এখন ওখানে (রাজবাড়ীতে) জনবল ও স্টাফ নেই। ইঞ্জিন মেরামত বা কোনো সমস্যা হলে ঈশ^রদী নিয়ে এসে মেরামত করা হয়।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীর বন্ধ লোকোশেড চালু হবে কবে? 

প্রকাশের সময় : ০৮:০৬:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১

জনতার আদালত অনলাইন ॥ রেলকে ঘিরে রাজবাড়ী শহরটি গড়ে উঠেছে। তাই রেলের শহর হিসেবেই পরিচিত রাজবাড়ী। একটা সময় রাজবাড়ীর মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলের উপর ছিল নির্ভরশীল। মানুষের পদচারণায় তখন থেকেই জমজমাট রাজবাড়ী শহর। সময়ের বিবর্তনে মাঝে কিছুটা হলেও ঘটে ছন্দ পতন। তবে পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে রাজবাড়ীর রেল। কিন্তু দীর্ঘকাল বন্ধ হয়ে থাকা লোকোশেডটি এখনও চালু হয়নি। যেকারণে ইঞ্জিন বিকল বা বগি লাইনচ্যুত হলে নির্ভর থাকতে হয় পাকশী অথবা ঈশ^রদী রেলওয়ের উপর। অন্যদিকে লোকোশেডটি পুনরায় চালু হলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো বহু মানুষের। যদিও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লোকোশেডটি চালুর বিষয়ে শুনিয়েছেন আশার বাণী।

রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৮৯০ সালে রাজবাড়ী রেল স্টেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই রেল যোগাযোগের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে রাজবাড়ী। ট্রেনের শব্দ আর হুইসেলে মুখর থাকতো রাজবাড়ী শহর। বেশি সংখ্যক ট্রেন চলাচল করায় রাজবাড়ীতে গড়ে তোলা হয় লোকেশেড। যেখানে ইঞ্জিন মেরামত, তেল লোড, সিডিউলসহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ছিল বগি উদ্ধারের জন্য রিলিফ ট্রেনও। রমরমা অবস্থা ছিল রাজবাড়ী রেলওয়ের। রাজবাড়ী-পুখুরিয়া, রাজবাড়ী-পোড়াদহ, রাজবাড়ী-রাজশাহী, রাজবাড়ী-পার্বতীপুর, রাজবাড়ী-খুলনা, রাজবাড়ী-রাজশাহী, রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে মেইল, লোকাল ও আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করতো। পরবর্তীতে রেল সংকোচন নীতির কারণে ১৯৯৮ সালের পর থেকে একে একে বন্ধ হয়ে যায় রাজবাড়ী-পুখুরিয়া, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া ও রাজবাড়ী-পার্বতীপুর রুটে ট্রেন চলাচল।  রাজবাড়ী-খুলনা রুটে চলাচলকারী আন্তনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে লোকোশেডটির কার্যক্রমও হয়ে যায় শিথিল।

দীর্ঘ সময় পরে ২০১৪ সালে আবারও চালু হয় রাজবাড়ী-ফরিদপুর-ভাঙ্গা, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ। রেলের রমরমা অবস্থা কিছুটা হলেও ফিরেছে। ফিরে পেয়েছে প্রাণ। কিন্তু চালু হয়নি লোকোশেডটি।

রাজবাড়ীর লোকোশেডটি রেল স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে বিনোদপুর-নুরপুর এলাকায় অবস্থিত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে লোকোশেডের অফিস এখনও আছে। দুটি কক্ষ খোলা থাকলেও বাকীগুলো বন্ধ। মূলত লোকোশেড বলা হয় সেই শেড দুটি পরিত্যক্ত হলেও অক্ষত আছে এখনও। একটি শেডের উপরে মাঝখান থেকে টিন খুলে পড়েছে। জং ধরেছে রেল লাইনগুলোতে।

রাজবাড়ী রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত এলএম (লোকোমাস্টার) মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তিনি  ১৯৫২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রেলে চাকরী করেছেন। রাজবাড়ীতে সার্বক্ষণিক ৩৫টি স্টিম ইঞ্চিন ছিল। ইঞ্জিন খারাপ হলে লোকোশেডে মেরামত করা হতো। সাড়ে চারশ মানুষ দিন রাত কাজ করতো লোকোশেডে। খুবই রমরমা অবস্থা ছিল তখন।

আরেক অবসরপ্রাপ্ত এলএম গোলাম মওলা জানান, সম্ভবতঃ ২০০০ সালের দিকে লোকোশেডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় যারা লোকোশেডে কাজ করতো কিছু গোল্ডেন হ্যান্ডশেক নিয়ে চাকরী থেকে চলে যায়। লোকোশেডটি আবার চালু হলে রেলের জন্য ভালো।

রেলের একজন কর্মকর্তা জানান, ইঞ্জিন বিকল হলে সেটিকে ঈশ^রদী পাঠিয়ে মেরামত করে আনতে হয়। কোথাও বগি জটিলভাবে লাইনচ্যুত হলে ঈশ^রদী থেকে রিলিফ ট্রেন আনতে হয় উদ্ধারের জন্য। কিন্তু লোকোশেডটি চালু হলে ঈশ^রদীর উপর নির্ভর থাকতে  হতো না। রাজবাড়ীতে এখন যে চারটি ইঞ্জিন আছে সেগুলো রেলের পকেটে রাখা হয়।

রাজবাড়ী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী, ইনচার্জ (লোকো) হুমায়ুন কবীর বলেন, মাঝখানে কয়েকটি রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গুরুত্ব হারিয়ে যায় লোকোশেডের। একারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে লোকোশেডের সেকশন রাজবাড়ীতে আছে এখনও। ইঞ্জিনের ছোট খাট সমস্যা হলে মেরামত করা হয় এখানেই। বড় কোনো সমস্যা হলে ঈশ^রদী পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, রাজবাড়ীতে  যেসব ইঞ্জিন আছে সেগুলো পুরনো হওয়াতে প্রায়ই সমস্যা হয়। যেকারণে ট্রেন চলাচলে কিছুটা হলেও সমস্যা হয়। রাজবাড়ীর লোকোশেডটি পুনরায় চালু হলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের রেলের গুরুত্ব আরও বাড়বে। যা সকলের জন্যই ভালো হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. কুদরত ই খোদার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাজবাড়ীতে লোকোশেডটি পুরনায় চালু করার পরিকল্পনা আছে। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে রাজবাড়ীর গুরুত্ব বাড়বে। সেখানে একটা কোচ মেরামত কারখানাও নির্মাণ করা হবে। আপাতত যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। এখন ওখানে (রাজবাড়ীতে) জনবল ও স্টাফ নেই। ইঞ্জিন মেরামত বা কোনো সমস্যা হলে ঈশ^রদী নিয়ে এসে মেরামত করা হয়।