চাঁদ সওদাগর ও তার সপ্তডিঙ্গা।
- প্রকাশের সময় : ০৬:১৪:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০
- / ২৪৭০ জন সংবাদটি পড়েছেন
## নেহাল আহমেদ##
প্রতিটি জেলায় খুজঁলে কিছু অলৌকিক কাহিনি পাওয়া যাবে।কেহ বিশ্বাস করে কেহ করেনা।তবু কাহিনি তো থেকে যায়।তেমনি একটা নদীর নাম হড়াই।রাজবাড়ী শহর থেকে অল্প কিছু দুরে চন্দনীতে অবস্থিত। এই নদীতে চাঁদ সওদাগরের বানিজ্যিক নৌকা ডুবেছিল কথিত অাছে।প্রথম ছবিতে হড়াই নদী দ্বিতীয় এবং শেষ ছবিটা যেখানে নৌকা ডুবেছিল সেই স্থান।কযেকদিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করছি কারো কিছু জানা থাকলে জানাবেন।শতবর্শী মানুষের কাছে জিঞ্জাসা করলে সবাই বলে বাপ দাদার কাছে শুনেছেন।তবে এলাকার শিশু বৃদ্ধ সবাই স্বীকার করে চিহৃিত স্থানটিতেই ডিঙ্গাটি ডুবেছিলো।বিস্তারিত লিখবো অাশা রাখি।ধারনা করা যেতে পারে ১৪৯৫-৯৬সালে মননা মঙ্গল কাব্যে প্রথম সপ্তডিঙ্গা তথা চাঁদ সওদাগর কাহিনী লিপি বদ্ধ করেন।মনসা দেবীর পুজা করাকে অস্বীকার করায় সে অভিসপ্ত বা মনসার বিরাগ ভাজন হলে তার সপ্তডিঙ্গা হড়াই নদীতে প্রবল ঝড়ে পড়ে চাদঁ সওদাগড় ছাড়া সবাই মারা যান। তার এক সন্তানের নাম লক্ষিন ধর যার বিবাহ হয় বেহুলার সাথে।বেহুলা লক্ষিন ধর একটা জনপ্রিয় কাহিনী যা যুগ যুগ ধরে অামাদের লোকজ সাংস্কৃতিকে বহন করে চলেছে। বিপ্রদাস পিপলাই (মতান্তরে বিপ্রদাস পিপিলাই) ছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীর এক বিশিষ্ট বাঙালি কবি। ১৪-৯৬ সালে মনসা বিজয় রচনায় প্রথম তিনি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত বাদুড়িয়া-বাটাগ্রামের বাসিন্দা মুকুন্দ পিপলাইয়ের পুত্র ছিলেন। বিপ্রদাস মনসা-পাঁচালীর সবচেয়ে পুরনো কবি।[১] মনসার সম্পূর্ণ কাহিনী একমাত্র তার কাব্যেই লভ্য। গৌড়ের রাজা হোসেন শাহের সময়ে ১৪৯৫-৯৬ সালে এই ‘মনসাবিজয়’ কাব্য রচিত হয়।ফরিদপুরের ইতিহাসে অানন্দ নাথ রায়ের লেখায় যে টুকু পাওয়া যায় তা হচ্ছে
হড়াই নদী যেখানে নৌকাডুবিতে চাঁদ সওদাগরের ৬ পুত্র মারা যায়। মহাস্থানগড় হতে বানিজ্য তরী নিয়ে করতোয়া হড়াই গড়াই কুমার হয়ে তিনি শ্যামদেশ, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা যেতেন। সে সময় পদ্মার প্রবাহ ছিল না। গঙ্গার স্রোত এসব নদী দিয়ে সাগর মুখে ধাবমান ছিল। এ অঞ্চলের সকল নদীর মধ্যে হড়াই ছিল বেশি খরস্রোতা ও ভয়াল। এ কারণে নাকি চাঁদ সওদাগরের মা তাকে হড়াই নদীকে উদ্দেশ্য করে সাবধান করেছিল। কিন্তু বিধি বাম। সেই হড়াই নদীর স্রোতের বাঁকে চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গার (বৃহৎ নৌকা) মধ্যে ৪/৫টি ডুবে যায়। দীর্ঘদিন নৌকাগুলোর সাথে পলি জমে স্তুপাকার ঢিবি আকার ধারণ করে। ঘটনার প্রবাহে গঙ্গার মুখের জলধারার পথের পরিবর্তন ঘটে। পদ্মা, ইছামতি, আড়িয়াল হয়ে ওঠে বেগবান। গঙ্গা যমুনার জলরাশি পদ্মা মেঘনা দিয়ে প্রবাহিত হয়। হড়াই, গড়াই, কুমার মাথাভাঙ্গার ধারা ক্ষীণ হয়ে ওঠে। কিন্তু ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকে চাঁদ সওদাগরের ঢিবি।।
মনসা মঙ্গলকাব্যে দেখানো হয়েছে শৈব্যধর্মে বিশ্বাসী হলেও চাঁদ সওদাগর কীভাবে সাপের দেবী মনসার পূজা করতে বাধ্য হন। চাঁদ সওদাগর ও তার পুত্র লখিন্দর, পুত্রবধু বেহুলা ও মনসা দেবীকে কেন্দ্র করে কাহিনীর বিন্যাস। অত্র অঞ্চলে কাহিনীটি ‘ভাষান যাত্রা’ বলে পরিচিত। রাজবাড়িতে বিগত শতকে বহু ভাসান যাত্রা দল গড়ে ওঠে এবং গ্রামে গ্রামে সে সব পালাগান অনুষ্ঠিত হত।
মহাস্থানগড় হতে দক্ষিন-পশ্চিমে এবং বেহুলার বাসর ঘর হতে প্রায় ২ কিমি পশ্চিমে চাদ সওদাগরের বাড়ি চম্পকনগর।বর্তমানে চাপাইনগর নামক স্থানে এর ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান।চাদ সওদাগর নিয়ে এ এলাকায় প্রচলিত প্রবাদ-
সব নদী খান খান
হড়াই নদী সাবধান।
করতোয়া নদীর প্রবাহ ই মুলত হড়াই দিয়ে প্রবাহিত হত।বর্তমানে মাটিপাড়া পিজেঘাটা স্থানে যে বিলের আকার দেখা যায় তা হড়াইয়ের প্রাচীন প্রবাহ।উল্লেখ্য নদী গতিপথ বদলালে পরিত্যক্ত নদী প্রথমে কোল ও পরে মৃত নদী বিল বাওড়ে পরিনত হয়।একাদশ শতাব্দী বা তারপরেও হড়াই প্রমত্তা নদী হিসেবে প্রবাহিত ছিল যার প্রশস্ততা ছিল দুই/তিন মাইল। পিজেঘাটার ভাটিতে রাধাগঞ্জের বিল ছিল অটাই একসময় রাধাগঞ্জ বন্দর বলা হত।