গোয়ালন্দে উপ-নির্বাচন॥ মোস্তফাকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন
- প্রকাশের সময় : ০৬:২৯:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 281
জনতার আদালত অনলাইন ॥ গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের আসন্ন উপ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. মোস্তফা বিএনপি থেকে মুন্সিকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন বাতিলের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামলীগের একাংশ। অপরদিকে এই মানববন্ধন কর্মসূচী প্রতিহতের ডাক দেয় অপর অংশ।
আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর জের ধরে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। কর্মসূচি শেষে বাড়ী ফেরার পথে দুপুরে উজানচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও তাকে বেধরক পিটিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের কর্মীরা। এর প্রতিবাদে বিকাল ৫টায় উপজেলা আওয়ামীলীগ শহরে আবারো বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষনা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা ১১টায় গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সামনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি আহ্বান করে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতৃবৃন্দ। উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই গ্রুপের পৃষ্ঠ পোষকতায় রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি কাজী কেরামত আলী।
এদিকে অপরপক্ষের নেতাকর্মী সকাল থেকে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয়। এ অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী। বেলা ১১টার দিকে বাসস্ট্যান্ড থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ, দলীয় প্রার্থী মোস্তফা মুন্সির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মানববন্ধন এলাকায় অগ্রসর হতে থাকলে উজানচর মডেল স্কুল এলাকায় মহাসড়কে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ শরিফ উজ জাামান ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল তায়াবীরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাদেরকে আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের কয়েক দফা ধস্তাধস্তি হয়। বাধা প্রাপ্ত হয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে মহাসড়কে প্রায় ১ ঘন্টা অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত ৭/৮ কিমি করে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়। কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রী ও চালকরা দুর্ভোগ পোহান। এ অবস্থার মধ্যেই উপজেলা পরিষদের সামনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ উভয় গ্রুপকে শান্ত করে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
অপরদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে উজানচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বেলা ১টার দিকে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ী ফেরার পথে গোয়ালন্দ মাল্লাপট্টি ব্রিজ এলাকায় সুজন ও নয়ন নামের দুই যুবক তার গতিরোধ করে তাকে বেধরক পিটিয়ে জখম করে এবং মোটর সাইকেলটি ভাঙচুর করে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে গোয়ালন্দ হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিকেল ৫টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ডেকেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।
মানববন্ধন প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মোস্তফা মুন্সি বিএনপি-জামায়াত থেকে সদ্য আওয়ামীলীগে এসেছে। তার মতো একজন অনুপ্রবেশকারীকে দলীয় হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়ে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন চাই। স্থানীয় এমপির সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে কাজী ইরাদত আলী অপকৌশলে এ মনোনয়ন বাগিয়ে এনে দিয়েছেন। আমরা দলের মধ্যে থেকে পরীক্ষিত ও ত্যাগী কোন নেতাকে পূণরায় মনোনয়ন দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
মোস্তফা মুন্সি বলেন, আমি কোন কালেই বিএনপি-জামায়াতের সাথে যুক্ত ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে এটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাছাড়া দলীয় এমপি কাজী কেরামত আলী এবং তার ভাই কাজী ইরাদত আলীর অনুপ্রেরণায় আওয়ামীলীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছি বেশ কয়েক বছর হলো। বিগত জাতীয় নির্বাচনে কাজী কেরামত আলীর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে তার বিজয়ে অবদান রাখি। কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে আমাকে এখানে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যারা এর বিরুদ্ধে যাচ্ছেন তারা আওয়ামীলীগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে যাচ্ছেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়া গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র শেখ মো. নিজামকে অভিযুক্ত করে বলেন, পৌর মেয়র জনগণের জন্য কোন কাজ করেন না। ঘরে বসে শুধু অপরাজনীত করেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময় তিনি দলের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। আওয়ামীলীগ করলে দলের নিয়ম মেনে চলতে হবে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরিফুজ্জামান বলেন, আমরা উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে এবং শান্তি বজায় রাখতে মহাসড়কে অবস্থান নেই। কোন গ্রুপকে বাধা দিতে বা কোন গ্রুপকে সুবিধা করে দেয়া আমাদের লক্ষ্য ছিল না। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কালামের উপর হামলাকারীদের আটক করতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।