রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনন্য উদ্যোগ : অনলাইনে চলছে পাঠদান কার্যক্রম, ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক সাড়া
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০২০
- / ১৫৯৪ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে দু মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছেন রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস চালু করেছেন তারা। বিদ্যালয়ের ছাত্ররাও অনলাইন ক্লাস করতে ব্যাপক উৎসাহী হয়ে উঠেছে। গত ৯ মে থেকে শুরু হয়েছে এ অনলাইন ক্লাস।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সৌম্যজিৎ দাস জানায়, নিঃসন্দেহে এই সময়ে একটি সুন্দর উদ্যোগ। সে নিয়মিতই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাঝে মধ্যে কিছু বিষয় বুঝতে না পারা। সাথে সাথে কমেন্ট করে যদি উত্তর পাওয়া যায় তাহলে আরও ভাল হবে। তার মত অনেকেই অনলাইন ক্লাস করছে বলে জানায় সৌম্যজিৎ।
একই শ্রেণির ছাত্র অন্তিম বিশ্বাস জানায়, সে নিয়মিতই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। এতে করে যে বিষয়গুলো বুঝতো না সেটিও বুঝতে পারছে। অন্যান্য বিষয়গুলো অনলাইন ক্লাসে অন্তর্ভূক্ত করলে আরও ভাল হতো।
অনলাইন ক্লাস চালুতর অন্যতম উদ্যোক্তা সিনিয়র শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার দাস জানান, জানুয়ারি মাসে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পর মাত্র কয়েকদিন ক্লাস হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা, বার্ষিক ক্রীড়াসহ নানা কারণে বেশির ভাগ দিনই বন্ধ থেকেছে পাঠদান। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সময় ধরে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে ছাত্রদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। এসব বিষয় চিন্তা করে তিনি নিজে উদ্যোগি হয়ে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান করার সিদ্ধান্ত নেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা আক্তারের সাথে পরামর্শ করে গত ৯ মে থেকে শুরু করেন অনলাইনে পাঠদান। ফেসবুকে Rajbari govt. high school online classes নামে একটি পেজ খুলে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিনটি ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রমে বর্তমানে বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক যুক্ত আছেন। বেশি জোড় দেয়া হচ্ছে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ইংরেজি, অংক, বাংলা, পদার্থ, রসায়ন, উচ্চতর গণিত বিষয়ের উপর। আগে থেকেই রুটিন ফেসবুকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। রুটিন দেখে ছাত্ররা অনলাইনে ক্লাস করছে। ছাত্ররা ক্লাস দেখে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা ইনবক্সে লিখতে বলে দেয়া হচ্ছে। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হচ্ছে ইনবক্সেই। যতদিন স্কুল বন্ধ থাকবে ততদিন এভাবেই ক্লাস চলবে। ঈদের পরে প্রতিদিন চারটি করে ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে পাঠদান কার্যক্রমে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, যেসব ছাত্রের অভিভাবকের এন্ড্রয়েড ফোন নেই তাদের বাড়ির কাছাকাছি কোনো সহপাঠির কাছে গিয়ে ক্লাস দেখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা আক্তার বলেন, লক ডাউনের মধ্যে ছাত্ররা যেন বাড়িতে বসে থেকে সময় নষ্ট না করে এজন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার দাস এর পেছনে যথেষ্ট শ্রম দিচ্ছেন। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সহায়ক হবে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, হিসাব বিজ্ঞান ও আইসিটি শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার দাস, ইংরেজি শিক্ষক আব্দুল মান্নান, সাহাবুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও আতিয়ার রহমান, জীববিজ্ঞান শিক্ষক অনিমা মাহাতো, উচ্চতর গণিতের শিক্ষক নাজিরউদ্দিন, বাংলার শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক রেজাউল করিম, রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক কৃষ্ণ গোপাল চন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ সাহা, গণিতের শিক্ষক প্রশান্ত প্রমাণিক ও আবু সাইদ, বাংলার শিক্ষক অলিউল আযম তৈমুর প্রমুখ শিক্ষক অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমে যুক্ত আছেন।