রাজবাড়ীতে টিসিবি’র পণ্য থেকে বঞ্চিত মানুষ — পণ্য তোলায় আগ্রহ নেই ডিলারদের
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯
- / ১৬৪৬ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীতে টিসিবি’র পণ্য ক্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পবিত্র রমজান মাসে দরিদ্র ও নি¤œ বিত্ত মানুষদের অধিক অর্থ ব্যয় করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হচ্ছে। ইতিপূর্বে রাজবাড়ী শহরে কখনও টিসিবি পণ্য বিক্রি হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না কেউ। তাই টিসিবি’র পণ্য সম্পর্কে অবগত নয় অনেকেই। আর একারণে অন্ততঃ রাজবাড়ীর ক্ষেত্রে টিসিবির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। ডিলাররা বলছেন, পরিবহন ভাড়া দিয়ে পণ্য এনে বিক্রি করে যা লাভ হয় তাতে তাদের পোষায় না। টিসিবির তথ্যমতে রাজবাড়ী জেলায় ২৩ ডিলারের মধ্যে মাত্র পাঁচজন পণ্য উত্তোলন করেছে। তবে প্রশাসন জানিয়েছে দুজন।
টিসিবির প্রধান উদ্দেশ্য প্রয়োজন অনুসারে ভোক্তাদের মাঝে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা ও বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে কতিপয় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের আপদকালীন মজুদ গড়ে তোলা।
টিসিবির বিধান মতে তাদের অনুমোদিত ডিলাররা গোডাউন থেকে পণ্য উত্তোলনের পর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আগমনি বার্তা দিয়ে দৃশ্যমান নির্দিষ্ট স্থানে লাল কাপড়ে টিসিবির বরাদ্দকৃত পণ্যের মূল্য তালিকার ব্যানার টানিয়ে পণ্য বিক্রি করবে। ডিলাররা টিসিবির নিয়ম মেনে পণ্য বিক্রি করছে কি না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ ডিলাররা তদারকি করবেন। এছাড়াও পণ্যের ওজন, গুণগত মান, দর ইত্যাদি বিষয়ে তদারকির জন্য জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে রমজানের আগে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনকে কিছুই জানায়নি টিসিবি।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বোতলজাত পুষ্টি সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটার, মশুর ডাল ৪৪ টাকা কেজি, ছোলা ৬০ টাকা কেজি এবং খেজুর ১৩৫ টাকা কেজি দরে খুচনা বিক্রি করে থাকে। যেখানে রাজবাড়ী বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৮ টাকা লিটার, মশুর ডাল ৯৬ টাকা কেজি, ছোলা ৭৬ টাকা কেজি, চিনি ৫৬ টাকা কেজি এবং খেজুর ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা ফারুক উদ্দিন বলেন, আমরা শুনে আসছি বাজারের থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়। কিন্তু রাজবাড়ীতে টিসিবির পণ্য কোথায় বিক্রি হয় তা আমরা জানিনা। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমরা টিসিবির পণ্য কিনতে পারছিনা। টিসিবির পণ্য পাওয়া গেলে মানুষের আর্থিক সাশ্রয় হতো।
রাজবাড়ী জেলা টিসিবি খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে। এ কার্যালয় সূত্র জানায়, রাজবাড়ীতে মোট ২৩ জন ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদরে তিনজন, পাংশায় সাতজন, বালিয়াকান্দিতে ১০ জন, গোয়ালন্দে ১ জন এবং কালুখালীতে দুই জন। এসব ডিলারদের মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলার বিশ^াস ট্রেডার্স, মন্ডল এন্টার প্রাইজ, দে স্টোর, জাকির হোসেন, খান এন্টার প্রাইজ পণ্য উত্তোলন করেছে। বাকী কোনো ডিলার পণ্য উত্তোলন করেনি।
টিসিবির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপÑঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী রবিউল মোর্শেদ জানান, রাজবাড়ী জেলায় ২৩ জন ডিলার থাকলেও ১৭ জন ডিলারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও যে কোনো সময় তারা নবায়ন করে নিতে পারে। কয়েকদিন আগে পণ্য উত্তোলন করেছে বালিয়াকান্দি উপজেলার পাঁচ জন ডিলার। প্রতি ডিলারকে এক হাজার কেজি চিনি, এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল, পাঁচশ কেজি ছোলা এবং চারশ কেজি মশুর ডাল সরবরাহ করা হয়। একজন ডিলারকে যতটুকু দেয়ার কথা ততটুকুই দেয়া হয়ে থাকে। কেউ যদি বেশি দাবি করে তাহলে তাকে দেয়া কোনোমতেই সম্ভব হয়না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডিলাররা যদি চার পাঁচজন একসাথে একটি ট্রাক ভাড়া করে পণ্য নিয়ে যায় তাহলে তাদের পরিবহন খরচ অনেক পুষিয়ে যায়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জাা গেছে, বালিয়াকান্দির যে কজন ব্যবসায়ী পণ্য উত্তোলন করেছেন তারা দোকানে বসেই বিক্রি করছেন। পণ্য উত্তোলনকারী টিসিবির ডিলার জাকির এন্টার প্রাইজের মালিক মনির হোসেন জানান, রোজার আগের দিন তিনি টিসিবির উত্তোলন করেছেন। পণ্যের দাম কম থাকায় চাহিদা অনেক। তার মজুদ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ডিলার মেসার্স মিমি এন্টার প্রাইজের মালিক নওশের আলী জানান, ইতিপূর্বে দুশ কেজি ডাল, একশ কেজি খেজুর এনে বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু পরিবহন ভাড়া দিয়ে পোষায় না। এজন্য এবার আর উত্তোলন করেননি।
ডিলার বিশ্বাস ট্রেডার্সের অংশীদার হুমায়ুন জানান, তারা প্রথমদিকে টিসিবির পণ্য উত্তোলন করেছিলেন। এবার উত্তোলন করেননি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা জানান, তার জানামতে বালিয়াকান্দি উপজেলায় দুজন ডিলার পণ্য উত্তোলন করেছে। একটি তিনি নিজে উদ্বোধন করেছেন। পণ্য সঠিকভাবে বিক্রি হচ্ছে কী না তা নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
টিসিবির রাজবাড়ী সদর উপজেলা এলাকার ডিলার মেসার্স শুক্লা সরকার এর ম্যানেজার সুশান্ত সরকার জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে টিসিবির পণ্য উত্তোলন করেন না। কারণটা মালিকই ভালো বলতে পারে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশ্সাক (সার্বিক) আশেক হাসান বলেন, টিসিবির পণ্য অনেক কম মূল্যে পাওয়া যায় বলে ভোক্তাদের মধ্যে চাহিদা বেশি। কিন্তু ডিলারদের চাহিদার তুলনায় খুব কমই সরবরাহ করা হয়। যেকারণে তারা আগ্রহ হারায়। আমরা এখনও তেমন নির্দেশনা পাইনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলে ডিলারদের ডেকে চুক্তি স্বাক্ষর করানো হবে।