Dhaka ০১:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ২ সপ্তাহ যাবৎ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ ॥ রোগী স্থানান্তরে চরম ভোগান্তি

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ১১:২৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ মে ২০১৮
  • / ২১৬৩ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ বকেয়ার দায়ে ফিলিং স্টেশন থেকে জ্বালানী তেল সরবরাহ না করায় গত দুই সপ্তাহ যাবৎ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে। ফলে রোগী স্থানান্তরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এপ্রিল মাসে একই কারণে ১৫ দিন বন্ধ ছিল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
রাজবাড়ী জেলায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের বাস। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। এসব মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল। হৃদরোগে আক্রান্ত, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ নানান জটিল রোগী, দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত রোগীকে প্রতিনিয়তই উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর অথবা ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স এর ভাড়া কম হওয়ায় দরিদ্র রোগীদের অনেক সুবিধা হতো। অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগী বা তার স্বজনদের অধিক অর্থ ব্যয়ে মাইক্রো অথবা মাহেন্দ্র পরিবহন ভাড়া করে অন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা। রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার আর ঢাকার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার। রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নিতে খরচ পড়ে সাড়ে ছয়শ টাকার মতো। আর ঢাকায় নিতে খরচ হয় সাড়ে চার হাজার টাকা। অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে রোগীদের ফরিদপুর ও ঢাকা যেতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে দরিদ্র রোগীরা। যাদের বেশি টাকা ব্যয় করার সামর্থ্য নেই। বর্তমানে রোগীদের ফরিদপুর পর্যন্ত দুই হাজার টাকা এবং ঢাকায় নিতে ব্যয় করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা করে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দুটি এ্যম্বুলেন্সের জন্য জ¦ালানী তেল সরবরাহ করতো রাজবাড়ী ফিলিং স্টেশন। বর্তমানে ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জ্বালানী তেল বাবদ ৩৫ লাখ টাকার বেশি বকেয়া পাবে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বকেয়া পরিশোধের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ। টাকা দিতে না পারায় ৮ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফায় ১৫ দিন বন্ধ থাকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুরোধে ১৫ দিন সময় দেয় ফিলিং স্টেশন। ১৫ দিনের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও বকেয়ার টাকা পরিশোধ না করায় গত ৮মে থেকে বন্ধ হয়ে যায় অ্যম্বুলেন্স সার্ভিস। হাসপাতাল সূত্র মতে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন রোগীকে ঢাকা অথবা ফরিদপুর রেফার্ড করতে হয়। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। দিনের বেলায় রোগীর স্বজনরা হয়তো কোনোভাবে মাইক্রোবাস, অথবা মাহেন্দ্র পরিবহন ভাড়া করে গন্তব্যে যায়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় রাতের বেলায়। ওই সময় পরিবহন পাওয়া খুবই দুরূহ হয়ে পড়ে। একই কারণে ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ছিল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আলী আহসান তুহিন বলেন, প্রথম দফায় জ্বালানী তেল সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর কোনোমতে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় তেল সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। খুব তাড়াতাড়িই আমরা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করতে পারবো।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছিল। আমরা সময় চাওয়ায় তারা মৌখিকভাবে বলেছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট অধিপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছি। কথা বলেছি। আমাদের হিসাব রক্ষকও দুবার দেখা করেছেন। আশার কথা হলো মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় হয়েছে। এই সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে তারা বসবেন। তারপর আমরা চিঠি পাবো।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ২ সপ্তাহ যাবৎ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ ॥ রোগী স্থানান্তরে চরম ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ১১:২৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ মে ২০১৮

জনতার আদালত অনলাইন ॥ বকেয়ার দায়ে ফিলিং স্টেশন থেকে জ্বালানী তেল সরবরাহ না করায় গত দুই সপ্তাহ যাবৎ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে। ফলে রোগী স্থানান্তরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এপ্রিল মাসে একই কারণে ১৫ দিন বন্ধ ছিল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
রাজবাড়ী জেলায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের বাস। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। এসব মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল। হৃদরোগে আক্রান্ত, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ নানান জটিল রোগী, দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত রোগীকে প্রতিনিয়তই উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর অথবা ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স এর ভাড়া কম হওয়ায় দরিদ্র রোগীদের অনেক সুবিধা হতো। অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগী বা তার স্বজনদের অধিক অর্থ ব্যয়ে মাইক্রো অথবা মাহেন্দ্র পরিবহন ভাড়া করে অন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা। রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার আর ঢাকার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার। রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নিতে খরচ পড়ে সাড়ে ছয়শ টাকার মতো। আর ঢাকায় নিতে খরচ হয় সাড়ে চার হাজার টাকা। অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে রোগীদের ফরিদপুর ও ঢাকা যেতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে দরিদ্র রোগীরা। যাদের বেশি টাকা ব্যয় করার সামর্থ্য নেই। বর্তমানে রোগীদের ফরিদপুর পর্যন্ত দুই হাজার টাকা এবং ঢাকায় নিতে ব্যয় করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা করে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দুটি এ্যম্বুলেন্সের জন্য জ¦ালানী তেল সরবরাহ করতো রাজবাড়ী ফিলিং স্টেশন। বর্তমানে ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জ্বালানী তেল বাবদ ৩৫ লাখ টাকার বেশি বকেয়া পাবে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বকেয়া পরিশোধের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ। টাকা দিতে না পারায় ৮ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফায় ১৫ দিন বন্ধ থাকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুরোধে ১৫ দিন সময় দেয় ফিলিং স্টেশন। ১৫ দিনের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও বকেয়ার টাকা পরিশোধ না করায় গত ৮মে থেকে বন্ধ হয়ে যায় অ্যম্বুলেন্স সার্ভিস। হাসপাতাল সূত্র মতে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন রোগীকে ঢাকা অথবা ফরিদপুর রেফার্ড করতে হয়। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। দিনের বেলায় রোগীর স্বজনরা হয়তো কোনোভাবে মাইক্রোবাস, অথবা মাহেন্দ্র পরিবহন ভাড়া করে গন্তব্যে যায়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় রাতের বেলায়। ওই সময় পরিবহন পাওয়া খুবই দুরূহ হয়ে পড়ে। একই কারণে ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ছিল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আলী আহসান তুহিন বলেন, প্রথম দফায় জ্বালানী তেল সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর কোনোমতে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় তেল সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। খুব তাড়াতাড়িই আমরা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করতে পারবো।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছিল। আমরা সময় চাওয়ায় তারা মৌখিকভাবে বলেছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট অধিপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছি। কথা বলেছি। আমাদের হিসাব রক্ষকও দুবার দেখা করেছেন। আশার কথা হলো মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় হয়েছে। এই সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে তারা বসবেন। তারপর আমরা চিঠি পাবো।