Dhaka ০৩:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদম ব্যাপারীর খপ্পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এক যুবক

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ১০:৪১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০১৭
  • / ১৭৮৬ জন সংবাদটি পড়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদম ব্যাপারীর প্রতারণার খপ্পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে অর্জুন রায় নামের এক  যুবক। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা সালিস বৈঠকের পর আদম ব্যাপারীকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিতে বলায় উল্টো অর্জুন রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে ওই আদম ব্যাপারী। একদিকে বিদেশ যেতে ধার করা টাকা ফেরতের চাপ অন্যদিকে মামলায় দিশেহারা যুবকটি এখন মহাবিপাকে। ঘটনাটি রাজবাড়ী পৌর এলাকার। ভুক্তভোগী অর্জুন রায় (২৮) রাজবাড়ী পৌর এলাকার বিনোদপুর গ্রামের মৃত সুভাষ রায়ের ছেলে। আদম ব্যাপারী গৌরাঙ্গ সরকার সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামের গোপাল সরকারের ছেলে।
ভুক্তভোগী অর্জুন রায় জানান, রাজবাড়ী শহরের জলিল খান সুপার মার্কেটে গার্মেন্টের দোকান ছিল তার। দেড় বছর আগে গৌরাঙ্গ হংকংয়ে সেলসম্যানের চাকরী দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয়। ১৫ দিনের মধ্যে পাঠানোর কথা থাকলেও পাঁচ মাসেও পাঠাতে পারেনি। পরে গৌরাঙ্গ তাকে সাড়ে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে কাতার যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। গৌরাঙ্গ তাকে বলে; ‘কাতারে বিশ^কাপ খেলা হবে। সেখানে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। দৈনিক ১২০ রিয়াল মজুরিতে শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু এ কথা কাউকে জানানো যাবেনা। এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও না।’ এই প্রলোভনে পড়ে তিনি রাজী হয়ে যান। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার দেনা করে কিছু টাকা জোগাড় করেন। পুরো টাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় গৌরাঙ্গ তাকে গার্মেন্টের দোকান বিক্রির কথা বলে। সরল বিশ^াসে তিনি দোকানটি গোৗরাঙ্গর মাধ্যমেই বিক্রি করে দেন। তার নব বিবাহিতা স্ত্রীর স্বর্ণালংকারও বন্ধক রাখেন গৌরাঙ্গর কাছে। এর মাঝে মানিকগঞ্জে তার এক নিকটাত্মীয় কাতারে বাংলাদেশি টাকায় দৈনিক আড়াই হাজার টাকা পাওয়া যাবে শুনে সেও যেতে চায়। দুজনে মিলে গৌরাঙ্গর কাছে ১৫ লাখ টাকা দেন। ২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে তারা কাতার যান। কিন্তু সেখানে কোনো কাজ না পেয়ে গৌরাঙ্গকে ফোন করলে সে তাদের জানায় তোমাদের ফ্রি ভিসায় পাঠানো হয়েছে কাজ খুঁজে নাও। কিন্তু গৌরাঙ্গ বলেছিল কাতার গিয়েই তারা কাজ পাবে। কাতারে কাজ না পেয়ে তারা পরেন বিপদে। সেখানে তারা কাজ খুঁজে করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে মালিকরা উধাও হয়ে যেত। টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছে। দেশ থেকে বড় ভাই কিছু টাকা পাঠিয়েছিল সে টাকা কিছু দিন চলে। এভাবে তিন মাস ২০ দিন কাটানোর পর দেশে ফিরে পাওনাদারদের ভয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। পরে তার বড় ভাই শিবু রায় বিষয়টি জানতে পেরে রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী নেতাদেরকে অবগত করেন।
অর্জুন রায়ের বড় ভাই শিবু রায় জানান, এ ঘটনায় তার ভাই একেবারে মুষড়ে পড়েছে। এসব থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার পরিকল্পনাও করেছিল। আমরা তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করি।
রাজবাড়ী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী  আশা বিশ^াস জানান, এটি খুবই অমানবিক একটি ঘটনা। ছেলেটি (অর্জুন) একেবারে পথে বসে গেছে। সবকিছু জানার পর বাজারের ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে সালিস বৈঠকের আয়োজন করেন। সালিসে গৌরাঙ্গ দুজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু গৌরাঙ্গ যুক্তি দেখায়; ফ্রি ভিসায় ওদেরকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ফ্রি ভিসায় পাঠালে তো মাত্র চার লাখ টাকা লাগে। যুক্তিতে না পেরে গৌরাঙ্গ সাক্ষি আনার অজুহাতে চার বার সময় নেয়। প্রতি সালিসেই সে নতুন নতুন লোক নিয়ে আসে। কিন্তু ঘটনা শুনে কেউ আর শেষ পর্যন্ত গৌরাঙ্গর পক্ষে থাকেনা। সর্বশেষ ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত সালিসেও সে একই চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কাউকে না বলে সালিসের মাঝখান থেকে সে সটকে পড়ে। সিদ্ধান্ত শোনানোর আগে গৌরাঙ্গকে ফোন করলে সে বলে আলাদীপুর আছে। সালিস বৈঠকে রাজবাড়ী পৌরসভার পাঁচ কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ প্রবীণ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়,  গৌরাঙ্গ অর্জুনকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দেবে। অপর ভুক্তভোগীর বাড়ি মানিকগঞ্জ হওয়ায় তার বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায়। কিছুক্ষণ পর গৌরাঙ্গ আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে নিয়ে সালিসে আসে। ঘটনা শুনে তারাও হতবাক হয়ে যায়।  ওই সময় গৌরাঙ্গকে সালিসের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়। অবাক করার ব্যাপার হলো পরদিন ২৩ জুলাই গৌরাঙ্গ রাজবাড়ীর আদালতে অর্জুনের বিরুদ্ধে জোর করে সই নেয়ার অভিযোগে মামলা করে। অথচ এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ক‘দিন আগেও খুব গরীব ছিল গৌরাঙ্গ। লেখাপড়াও বেশি জানেনা। হঠাৎ করেই সে অনেক ধন সম্পত্তির মালিক হয়েছে। তাদের প্রশ্ন কীভাবে গৌরাঙ্গ আঙুল ফুলে কলাগাছ হলো?
এব্যাপারে আদমব্যাপারী গৌরাঙ্গ সরকার জানায়, অর্জুনের সাথে তার ব্যবসায়ীক লেনদেন ছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু আর বলতে রাজী হয়নি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

আদম ব্যাপারীর খপ্পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এক যুবক

প্রকাশের সময় : ১০:৪১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদম ব্যাপারীর প্রতারণার খপ্পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে অর্জুন রায় নামের এক  যুবক। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা সালিস বৈঠকের পর আদম ব্যাপারীকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিতে বলায় উল্টো অর্জুন রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে ওই আদম ব্যাপারী। একদিকে বিদেশ যেতে ধার করা টাকা ফেরতের চাপ অন্যদিকে মামলায় দিশেহারা যুবকটি এখন মহাবিপাকে। ঘটনাটি রাজবাড়ী পৌর এলাকার। ভুক্তভোগী অর্জুন রায় (২৮) রাজবাড়ী পৌর এলাকার বিনোদপুর গ্রামের মৃত সুভাষ রায়ের ছেলে। আদম ব্যাপারী গৌরাঙ্গ সরকার সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামের গোপাল সরকারের ছেলে।
ভুক্তভোগী অর্জুন রায় জানান, রাজবাড়ী শহরের জলিল খান সুপার মার্কেটে গার্মেন্টের দোকান ছিল তার। দেড় বছর আগে গৌরাঙ্গ হংকংয়ে সেলসম্যানের চাকরী দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয়। ১৫ দিনের মধ্যে পাঠানোর কথা থাকলেও পাঁচ মাসেও পাঠাতে পারেনি। পরে গৌরাঙ্গ তাকে সাড়ে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে কাতার যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। গৌরাঙ্গ তাকে বলে; ‘কাতারে বিশ^কাপ খেলা হবে। সেখানে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। দৈনিক ১২০ রিয়াল মজুরিতে শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু এ কথা কাউকে জানানো যাবেনা। এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও না।’ এই প্রলোভনে পড়ে তিনি রাজী হয়ে যান। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার দেনা করে কিছু টাকা জোগাড় করেন। পুরো টাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় গৌরাঙ্গ তাকে গার্মেন্টের দোকান বিক্রির কথা বলে। সরল বিশ^াসে তিনি দোকানটি গোৗরাঙ্গর মাধ্যমেই বিক্রি করে দেন। তার নব বিবাহিতা স্ত্রীর স্বর্ণালংকারও বন্ধক রাখেন গৌরাঙ্গর কাছে। এর মাঝে মানিকগঞ্জে তার এক নিকটাত্মীয় কাতারে বাংলাদেশি টাকায় দৈনিক আড়াই হাজার টাকা পাওয়া যাবে শুনে সেও যেতে চায়। দুজনে মিলে গৌরাঙ্গর কাছে ১৫ লাখ টাকা দেন। ২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে তারা কাতার যান। কিন্তু সেখানে কোনো কাজ না পেয়ে গৌরাঙ্গকে ফোন করলে সে তাদের জানায় তোমাদের ফ্রি ভিসায় পাঠানো হয়েছে কাজ খুঁজে নাও। কিন্তু গৌরাঙ্গ বলেছিল কাতার গিয়েই তারা কাজ পাবে। কাতারে কাজ না পেয়ে তারা পরেন বিপদে। সেখানে তারা কাজ খুঁজে করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে মালিকরা উধাও হয়ে যেত। টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছে। দেশ থেকে বড় ভাই কিছু টাকা পাঠিয়েছিল সে টাকা কিছু দিন চলে। এভাবে তিন মাস ২০ দিন কাটানোর পর দেশে ফিরে পাওনাদারদের ভয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। পরে তার বড় ভাই শিবু রায় বিষয়টি জানতে পেরে রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী নেতাদেরকে অবগত করেন।
অর্জুন রায়ের বড় ভাই শিবু রায় জানান, এ ঘটনায় তার ভাই একেবারে মুষড়ে পড়েছে। এসব থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার পরিকল্পনাও করেছিল। আমরা তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করি।
রাজবাড়ী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী  আশা বিশ^াস জানান, এটি খুবই অমানবিক একটি ঘটনা। ছেলেটি (অর্জুন) একেবারে পথে বসে গেছে। সবকিছু জানার পর বাজারের ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে সালিস বৈঠকের আয়োজন করেন। সালিসে গৌরাঙ্গ দুজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু গৌরাঙ্গ যুক্তি দেখায়; ফ্রি ভিসায় ওদেরকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ফ্রি ভিসায় পাঠালে তো মাত্র চার লাখ টাকা লাগে। যুক্তিতে না পেরে গৌরাঙ্গ সাক্ষি আনার অজুহাতে চার বার সময় নেয়। প্রতি সালিসেই সে নতুন নতুন লোক নিয়ে আসে। কিন্তু ঘটনা শুনে কেউ আর শেষ পর্যন্ত গৌরাঙ্গর পক্ষে থাকেনা। সর্বশেষ ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত সালিসেও সে একই চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কাউকে না বলে সালিসের মাঝখান থেকে সে সটকে পড়ে। সিদ্ধান্ত শোনানোর আগে গৌরাঙ্গকে ফোন করলে সে বলে আলাদীপুর আছে। সালিস বৈঠকে রাজবাড়ী পৌরসভার পাঁচ কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ প্রবীণ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়,  গৌরাঙ্গ অর্জুনকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দেবে। অপর ভুক্তভোগীর বাড়ি মানিকগঞ্জ হওয়ায় তার বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায়। কিছুক্ষণ পর গৌরাঙ্গ আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে নিয়ে সালিসে আসে। ঘটনা শুনে তারাও হতবাক হয়ে যায়।  ওই সময় গৌরাঙ্গকে সালিসের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়। অবাক করার ব্যাপার হলো পরদিন ২৩ জুলাই গৌরাঙ্গ রাজবাড়ীর আদালতে অর্জুনের বিরুদ্ধে জোর করে সই নেয়ার অভিযোগে মামলা করে। অথচ এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ক‘দিন আগেও খুব গরীব ছিল গৌরাঙ্গ। লেখাপড়াও বেশি জানেনা। হঠাৎ করেই সে অনেক ধন সম্পত্তির মালিক হয়েছে। তাদের প্রশ্ন কীভাবে গৌরাঙ্গ আঙুল ফুলে কলাগাছ হলো?
এব্যাপারে আদমব্যাপারী গৌরাঙ্গ সরকার জানায়, অর্জুনের সাথে তার ব্যবসায়ীক লেনদেন ছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু আর বলতে রাজী হয়নি।