Dhaka ১২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ:
২০১৮ নির্বাচনে জালিয়াতি প্রতারণা অনুসন্ধানে দুদক

ফাঁসছেন সেই ডিসি এসপিরা

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৪৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 58

শেখ হাসিনার আমলে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এমপি নির্বাচনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘিরে এ অনুসন্ধান চলবে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৫৭টি আসন। অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পায় মাত্র সাতটি আসন।

অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীদের ভাষায় সে নির্বাচনের নাম হয় নিশিরাতের নির্বাচন।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আসা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ, নির্বাচনের ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করবে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম যেমন- দিনের ভোট আগের রাতে করা, ব্যালট জালিয়াতি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি কাউন্ট দেখানো, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতানোসহ নানা অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দুদকেও কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মহানগর, জেলা, বিভাগীয়, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন- পুলিশের তৎকালীন আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, তৎকালীন জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জেলা প্রশাসক, জেলা রিটানিং কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, থানার ওসি, জেলা কিংবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তার যোগসাজশের কথা দুদকের হাতে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, সে সময় সারা দেশের প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের ঢাকায় এনে নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে কি বার্তা দেওয়া হয়েছিল তারও তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নেভানো হয়। আগের রাত ১১টার পর আগুনের সূত্রপাত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যালট পেপার এবং ব্যালটের মুড়ি, নির্বাচনে দায়িত্বরতদের তালিকা ও নমুনা স্বাক্ষরের সংরক্ষিত নানা নথি ওই আগুনে পুড়ে যায়। ধারণা করা হয়, সে সময় সেগুলো পরিকল্পিতভাবে অগ্নি-দুর্ঘটনার মাধ্যমে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, অনেক ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর এবং ভোটারের আঙুলের ছাপ না নিয়েই ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মেরে আগের রাতে বক্সে ভরে রাখা হয়েছিল। অডিট কিংবা অনুসন্ধানে সেগুলো প্রমাণিত হওয়ার আশঙ্কায় ধ্বংস করা হয়েছে। নওগাঁর একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা এক মাদরাসা শিক্ষক ব্যালট পেপার দিতে রাজি হননি বলে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে তা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে ৬৪টি জেলার ডিসি এবং এসপিদের তালিকা ও তাদের ভূমিকার বিস্তারিত তথ্য দুদকে জমা পড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়। এর পর গত বছরের ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। তাতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

২০১৮ নির্বাচনে জালিয়াতি প্রতারণা অনুসন্ধানে দুদক

ফাঁসছেন সেই ডিসি এসপিরা

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

শেখ হাসিনার আমলে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এমপি নির্বাচনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘিরে এ অনুসন্ধান চলবে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৫৭টি আসন। অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পায় মাত্র সাতটি আসন।

অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীদের ভাষায় সে নির্বাচনের নাম হয় নিশিরাতের নির্বাচন।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আসা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ, নির্বাচনের ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করবে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম যেমন- দিনের ভোট আগের রাতে করা, ব্যালট জালিয়াতি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি কাউন্ট দেখানো, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতানোসহ নানা অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দুদকেও কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মহানগর, জেলা, বিভাগীয়, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন- পুলিশের তৎকালীন আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, তৎকালীন জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জেলা প্রশাসক, জেলা রিটানিং কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, থানার ওসি, জেলা কিংবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তার যোগসাজশের কথা দুদকের হাতে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, সে সময় সারা দেশের প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের ঢাকায় এনে নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে কি বার্তা দেওয়া হয়েছিল তারও তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নেভানো হয়। আগের রাত ১১টার পর আগুনের সূত্রপাত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যালট পেপার এবং ব্যালটের মুড়ি, নির্বাচনে দায়িত্বরতদের তালিকা ও নমুনা স্বাক্ষরের সংরক্ষিত নানা নথি ওই আগুনে পুড়ে যায়। ধারণা করা হয়, সে সময় সেগুলো পরিকল্পিতভাবে অগ্নি-দুর্ঘটনার মাধ্যমে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, অনেক ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর এবং ভোটারের আঙুলের ছাপ না নিয়েই ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মেরে আগের রাতে বক্সে ভরে রাখা হয়েছিল। অডিট কিংবা অনুসন্ধানে সেগুলো প্রমাণিত হওয়ার আশঙ্কায় ধ্বংস করা হয়েছে। নওগাঁর একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা এক মাদরাসা শিক্ষক ব্যালট পেপার দিতে রাজি হননি বলে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে তা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে ৬৪টি জেলার ডিসি এবং এসপিদের তালিকা ও তাদের ভূমিকার বিস্তারিত তথ্য দুদকে জমা পড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়। এর পর গত বছরের ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। তাতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন