ভোটে মিত্র খুঁজছে সবাই
- প্রকাশের সময় : ১২:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / 29
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে বড় দলগুলো নির্বাচনি জোট গড়ার লক্ষ্যে মিত্র খুঁজছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। দেশের আরেক অন্যতম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ইসলামপন্থি দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর নির্বাচনি ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। থেমে নেই বাম দলগুলোও। তারা এক ছাতার নিচে আসার চেষ্টায় তৎপর রয়েছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে শুরু হয়েছে মিত্র খোঁজার রাজনীতি।
মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো এক প্ল্যাটফরমে আনতে চায় বিএনপি : সব কার্যক্রম এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে। যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি মিত্রদল খোঁজার বিষয়টি জোরদার করছে বিএনপি। তারা বলছে, বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সমমনা দলগুলোর বর্তমানে কোনো জোট নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী সব দল নিয়ে আগামীতে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে চায়। এজন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে অন্তত ৪০টি দল ও সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। অতীতে বিএনপির জোটবদ্ধ ছিল না কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ে রাজপথে সোচ্চার ছিল এমন দলের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনে বিজয়ী হলে সমমনা দলগুলো নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ এবং ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট’ গঠনের। সে প্রক্রিয়ায় গতকাল খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায়ের আন্দোলনে যেসব দল রাজপথে ছিল আমরা সবাইকে নিয়ে আগামীতে নির্বাচন করতে চাই। সে লক্ষ্যে আমরা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে চলেছি।’
জোট গড়ার চেষ্টায় জামায়াত : জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিক জোট গঠনের ঘোষণা না দিলেও নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো এক প্ল্যাটফরমে আনার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে সাবেক স্বৈরাচার সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা দলগুলোর বাইরের ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করছেন দলটির নেতারা। তাঁরা বলছেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এটা থিম ধরে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছেন নেতারা। এরই মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ১২-দলীয় জোট, জাকের পার্টি, খেলাফত মজলিস, ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতাহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আবু জাফর কাসেমী, জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম মনিরুজ্জামান কাসেমী, জনসেবা আন্দোলনের আমির ফখরুল ইসলামসহ ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক ও আলেমের সঙ্গে জামায়াত আমির পৃথক মতবিনিময় করেছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। জোট করার বিষয়ে আমরা ইসলামি সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। সবাই চায় আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে একটা বাক্স পাঠানো যায় কি না।’ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ জানান, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁদের সৌজন্য সাক্ষাৎ, মতবিনিময় হচ্ছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে অনেক দলই যোগাযোগ করছে। সব দলই আগামী নির্বাচন ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন কেন্দ্র করে দল সংগঠিত করছে।
একত্র হচ্ছে বাম দলগুলো : নির্বাচন ঘিরে বাম দল ও জোটগুলো এক ছাতার নিচে আসছে। নানান দাবিদাওয়া আদায়ে এক প্ল্যাটফরম থেকে দাবি জানাচ্ছেন এসব দলের নেতারা। একই ইস্যুতে একসঙ্গে যাঁরা দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা হলেন গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী; ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন নাসু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাহবুব)-এর আহ্বায়ক সন্তোষ গুপ্ত, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান। দলগুলোর নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে বাম দলগুলো একত্র হচ্ছে।
সূত্র :বাংলাদেশ প্রতিদিন