Dhaka ১১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাকসু নির্বাচন: আগে সংস্কারের দাবি অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের

জাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ০৪:২৭:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 10

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বহু প্রতীক্ষিত জাকসু (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে এবং ৫ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ তিন দশকের বিরতির পর এই নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদী। অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের আগে জাকসু সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।

জাবি ছাত্রদল জাকসু নির্বাচনের আগে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ এম ফয়সাল হোসেন বলেন, “আমরা দ্রুত জাকসু নির্বাচন চাই—এটি প্রতিটি জাবি শিক্ষার্থীর দাবি। তবে, নির্বাচনের আগে সংস্কার জরুরি।”

ফয়সাল আরও বলেন, “নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, গণঅভ্যুন্থানে সহিংসতায় জড়িত ছাত্রলীগকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া, সব অনুষদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং জাকসু সভাপতির পদটি নির্বাচিত করা—এই সংস্কারগুলো আমাদের প্রধান দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। আমরা শিগগিরই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের দাবি তুলে ধরব।”

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও জাকসু নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তারা ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাম্পাস রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ১৯ নভেম্বর এই দলগুলো, ছাত্রদলের সঙ্গে যৌথভাবে, জাকসু বিষয়ে এক আলোচনায় শিবিরের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে, যার ফলে প্রশাসন ওই বৈঠক স্থগিত করে।

“আমরা জাকসু নির্বাচন চাই, তবে এর বর্তমান কাঠামোতে সংস্কার জরুরি” বলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ আনিন্দ্য গাঙ্গুলী। তিনি আরও জানান, সংস্কার প্রস্তাবগুলো শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে।

ঋদ্ধ বলেন, শিবির ১৯৮৯ সালে একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ২২টি ছাত্র সংগঠনের সিদ্ধান্তে জাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ হয়। শিবির যদি তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায় স্বীকার করে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়, তাহলে আমরা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করতে পারি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ জেনিচ অভিযোগ করেন, জাকসু রোডম্যাপ ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জাকসু সংবিধান পুনর্মূল্যায়ণ এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের একটি হল ভিত্তিক নির্ভূল তালিকা তৈরি করার আহ্বান জানান।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখা এখনও তাদের সংস্কার প্রস্তাব স্পষ্ট করেনি। তবে তারা বলছে, নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণায় দেরি করা উচিত নয়।

“জাকসু নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় সংস্কার হলে আমরা তা সমর্থন করি। তবে, প্রশাসনকে অবশ্যই ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন সংগঠনটির জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ সিয়াম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “নির্বাচন কমিশন বর্তমান জাকসু সংবিধান ও ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। যদি ছাত্র সংগঠনগুলো জাকসু সংবিধানে সংস্কার চায়, তারা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা নেই।”

নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময়সূচি ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে। এর আগে আমরা কোনো আনুমানিক তারিখ জানাতে পারব না।”

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও জাবি প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে শিগগিরই ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

জাকসু নির্বাচন: আগে সংস্কারের দাবি অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের

প্রকাশের সময় : ০৪:২৭:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বহু প্রতীক্ষিত জাকসু (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে এবং ৫ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ তিন দশকের বিরতির পর এই নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদী। অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের আগে জাকসু সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।

জাবি ছাত্রদল জাকসু নির্বাচনের আগে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ এম ফয়সাল হোসেন বলেন, “আমরা দ্রুত জাকসু নির্বাচন চাই—এটি প্রতিটি জাবি শিক্ষার্থীর দাবি। তবে, নির্বাচনের আগে সংস্কার জরুরি।”

ফয়সাল আরও বলেন, “নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, গণঅভ্যুন্থানে সহিংসতায় জড়িত ছাত্রলীগকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া, সব অনুষদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং জাকসু সভাপতির পদটি নির্বাচিত করা—এই সংস্কারগুলো আমাদের প্রধান দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। আমরা শিগগিরই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের দাবি তুলে ধরব।”

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও জাকসু নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তারা ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাম্পাস রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ১৯ নভেম্বর এই দলগুলো, ছাত্রদলের সঙ্গে যৌথভাবে, জাকসু বিষয়ে এক আলোচনায় শিবিরের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে, যার ফলে প্রশাসন ওই বৈঠক স্থগিত করে।

“আমরা জাকসু নির্বাচন চাই, তবে এর বর্তমান কাঠামোতে সংস্কার জরুরি” বলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ আনিন্দ্য গাঙ্গুলী। তিনি আরও জানান, সংস্কার প্রস্তাবগুলো শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে।

ঋদ্ধ বলেন, শিবির ১৯৮৯ সালে একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ২২টি ছাত্র সংগঠনের সিদ্ধান্তে জাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ হয়। শিবির যদি তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায় স্বীকার করে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়, তাহলে আমরা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করতে পারি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ জেনিচ অভিযোগ করেন, জাকসু রোডম্যাপ ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জাকসু সংবিধান পুনর্মূল্যায়ণ এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের একটি হল ভিত্তিক নির্ভূল তালিকা তৈরি করার আহ্বান জানান।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখা এখনও তাদের সংস্কার প্রস্তাব স্পষ্ট করেনি। তবে তারা বলছে, নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণায় দেরি করা উচিত নয়।

“জাকসু নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় সংস্কার হলে আমরা তা সমর্থন করি। তবে, প্রশাসনকে অবশ্যই ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন সংগঠনটির জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ সিয়াম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “নির্বাচন কমিশন বর্তমান জাকসু সংবিধান ও ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। যদি ছাত্র সংগঠনগুলো জাকসু সংবিধানে সংস্কার চায়, তারা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা নেই।”

নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময়সূচি ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে। এর আগে আমরা কোনো আনুমানিক তারিখ জানাতে পারব না।”

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও জাবি প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে শিগগিরই ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”